৭১’র মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় জমিজমা ও বিশাল সহায় সম্পত্তি রেখে ভারতে চলে যান জমিদার সুরেশ সেন চৌধুরী ও তার পরিবার। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সাচারের ওই সময়ের বাসিন্দাদের এমন কেউ ছিলো না যে তখনকার জমিদার বাবু সুরেশ চন্দ্র চৌধুরীকে চিনতেন না।
তখনকার জমিদার বংশের কেউ এখন এই বাড়িতে না থাকলেও তাদের পুরোনো স্মৃতি জমিদার ভবন এখনো রয়ে গেছে। আর এই ভবনেই চলছে কচুয়া উপজেলার পাথৈর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এ ভবনটি সংস্কার কিংবা মেরামত না হওয়ায় বর্তমানে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যা ডিজিটাল ভূমিসেবা কার্যক্রমের অন্তরায় হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কচুয়া উপজেলার পরিচিত এলাকা পাথৈর গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। কথা হয় ভূমি অফিসের কাজে আসা গ্রামবাসী ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সাথে। বেরিয়ে আসে নানা দুঃসহ দূর্ভোগের কথা।
দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮৩ সাল থেকে পাথৈর গ্রামে অবস্থিত সুরেশ সেন চৌধুরীর রেখে যাওয়া বাড়িতে এ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কার্যক্রম যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে পুরোনো ভবনটির ভেতর ও বাহিরে নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাছাড়া, বিদ্যুৎ সংযোগ, জনসাধারনের যাতায়াতের রাস্তা, কর্মকর্তাদের থাকার আবাসন ব্যবস্থা , শৌচাগার ও টিউবওয়েল কিছুই নেই। ১২টি মৌজা ও ২০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত পাথৈর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আওতায় বর্তমানে প্রায় ৯৭ শতাংশ সরকারি ভূমি রয়েছে।
পাথৈর গ্রামের অধিবাসী মো. জাহাঙ্গীর আলম ও আটোমোড় গ্রামের অধিবাসী মো. বাবুল মিয়া জানান, ভূমি অফিসটি জমিদার ভবনে থাকলেও নামে আছে কাজে নেই। কেননা এ ভবনটির বর্তমানে বিদ্যুৎ, দরজা জানালা না থাকায় এবং বিশাল আকারের ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মকর্তারা প্রতিদিন অফিস কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে অফিসের নথিপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি একটু বৃষ্টি হতে না হতেই ভিজে যায়। এতে বাধ্য হয়ে কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন কৌশলে প্লাষ্টিকের কাগজ মুড়িয়ে কাগজ পত্র রক্ষার চেষ্টা করছেণ।
কিন্তু এভাবে আর কত দিন? বর্তমান সরকারের ভিশন ২০২১ এ ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করতে হলে ভূমি অফিসটিকে স্থায়ী ভবনে রূপদান করার জোর দাবি জানাচ্ছেন ভুক্তোভোগীরা।
এছাড়া, হিন্দু জমিদার বাবুদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এই বাড়িটি সংস্কারের মাধ্যমে ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং বিশাল সম্পত্তিগুলো সরকারের নামে নিয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জোর দাবি জানান এলাকাবাসী।
ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমি যোগদানের পর থেকেই নানা সমস্যার মধ্যদিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকায় তথ্যসেবা ও অনলাইন কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছি না। বিষয়টি চলতি বছরের ২০ মার্চ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মহোদয়কে স্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের দাবিতে ইউনিয়ন স্মারকে (যার স্মারক নং- ১০) অবহিত করেছি।’
ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মো. মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তাদের সমস্যার কথা আমাকে জানিয়েছে। এখানে একটি স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য আমাদের প্রিয় নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি মহোদয়ের মাধ্যমে চালিয়ে যাবো।’