চাঁদপুর কচুয়া উপজেলার ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের দারাশাহী-তুলপাই বাজারে চৌধুরী মার্কেটের ২য় তলায় উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠছে। ৩৬নং তুলপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ৩০/৩৫ গজ দূরে এই বিদ্যালয়টি স্থাপন হওয়ায় পার্শ্ববতী বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দেয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
এ ঘটনায় তুলপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল কবির ও পার্শ্ববর্তী তমিজউদ্দিন কিন্ডার গার্টেনের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোসাম্মৎ খোদেজা বেগম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন ও কবি কাজী নজরুল একাডেমীর অনুমতি না দিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার,উপজেলা কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি-সম্পাদক বরাবর পৃথক ভাবে লিখিত আবেদন করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, দারাশাহী-তুলপাই বাজারে এলাকার বেশকিছু সংখ্যক শিক্ষানুরাগী শিক্ষা বিস্তারের চাহিদার মেটাতে জাতীয় কবির নামে ‘কবি কাজী নজরুল একাডেমী’ নামে ২০২০ সালে চলতি শিক্ষাবর্ষে একটি নতুন বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করেন। ওই বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ ৮জন শিক্ষক ও ৭৮জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষে ব্যানার ফেস্টুন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বাড়ানো লক্ষ্যে দ্রুত অন্যান্য কার্যক্রম এগিয়ে চলছে বলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য গোলাম খাজা মেম্বার ও মো: মো: দেলোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান। তারা আরো জানান, স্থানীয় অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে উন্নত পাঠদান থেকে বঞ্চিত। তাই একাধিক অভিভাবকের আগ্রহের ফলে উন্নত ও মানসম্মত শিক্ষা প্রসারের লক্ষে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি যা যা করণীয় তাই করব।
কিন্তু এ বিদ্যালয় স্থাপনে উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে গোলাম খাজা মেম্বার ও দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, মৌখিক ভাবে উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করছি এবং অচিরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদ্যালয়টি উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিদ্যালয় স্থাপনে অনুমতি নেই কিংবা কিভাবে সরকারি বই পেলেন কিভাবে এ প্রসঙ্গে এড়িয়ে তারা বলেন, যেকোনো কৌশলেই উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বই এনে ৭০জন শিক্ষার্থীর মাঝে সরকারি নতুন বই দেয়া হয়েছে। এদিকে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গল দেখিয়ে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা ও সরকারি নিয়ম না মানায় জনমনে নানান গুঞ্জন চলছে।
এ ব্যাপারে পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মো: সোহরাব হোসেন সুমন বলেন, দারাশাহী তুলপাই উচ্চ বিদ্যালয়,তুলপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তমিজদ্দিন পাটওয়ারী কিন্ডার গার্টেন থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এ একাডেমীটি স্থাপন হয় তা আমার জানা নেই। তবে একাডেমীটি স্থাপন হলে পার্শ্ববতী সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিবে।
তুলপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল কবির বলেন, আমার বিদ্যালয়ের বর্তমানে প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। ক্রেসম্যান্টে এরিয়া কিন্ডার গার্টেন স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও সরকারের জারিকৃত পরিপত্র বিরোধী অংশ হিসেবে বিদ্যালয়টি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস উপজেলা প্রশাসন যথাযথ নজর দিবেন।
উপজেলা কিন্ডার গার্টেনের এসোসিয়শনের সভাপতি মো: মফিজুর রহমান বলেন, অনুমতি ছাড়া কিন্ডার গার্টেন প্রতিষ্ঠান গত দুবছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। তবে শুনেছি কবি কাজী নজরুল
একাডেমী, লতিফপুর কিন্ডার গার্টেনসহ আরো কয়েকটি কিন্ডার গার্টেন তাদের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার এএইচএম শাহরিয়ার রসুল বলেন, কবি কাজী নজরুল একাডেমীর পরিচালনার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে কিন্তু আমি তাদের বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নিষেধ করেছি। অপর দিকে ওই বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত কোনো বই আমি দেইনি। তবে কিভাবে ওই বইগুলো শিক্ষার্থীরা পেলো এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ণ দাস শুভ জানান, অনুমতি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে সরকারি পাঠ্যপুস্তক দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। তবে ওই বিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার্থীরা বই পেয়েছে তা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্টাফ করেসপন্ডেট