কচুয়া

কচুয়ার হাজী আকরাম আলী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে কি?

দেশের জন্য, পতাকার জন্য, একটি লাল সূর্যের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন যিনি সে হচ্ছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেই ব্যক্তি যদি তার নাম প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম লিখতে না পারেন এর চাইতে বড় আফসোসের আর কিছুই থাকে না। তেমনই একজন ব্যক্তি মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠেনি। শৈশব ও কৈশরের সোনালী স্বপ্নের দিন গুলো পেরিয়ে তিনি এখন বয়োজেষ্ঠ। শেষ বয়সে তার একটাই দাবী মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার।

জানা গেছে, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৩নং বিতারা ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর গ্রামের মৃত- ছমির উদ্দিন শেখের পুত্র হাজী আকরাম আলী হাফেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় মসজিদ আল জামীয়ার মোয়াজ্জেম কাম খাদেম ছিলেন। তিনি ১০ ডিসেম্বর ১৯৬৬ সালে ওই মসজিদে মোয়াজ্জেম কাম খাদেম হিসেবে যোগদান করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে জানা যায় তার জন্ম ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৭।

যৌবনে হাজী আকরাম আলী হাফেজের কন্ঠ সু-মধুর হওয়ায় তার আযান শোনে মুগ্ধ হতেন অনেকে। তার সে সময়ের মধুর কন্ঠের দেয়া আযান দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে রেকর্ড করে শোনানো হতো।

দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ২৫ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর ২নং সেক্টরে এ কে এম খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারি চাকুরিতে পুনরায় যোগদান করে ৯ মাসের বকেয়া বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। ওই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামীলীগকে সমর্থন করায় তৎকালীন পাক মুসলিমলীগ পন্থী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে এ পদ থেকে সরানোর জন্য ঘোর বিরোধিতা (ষড়যন্ত্র) শুরু করেন।

এ ব্যাপারে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শরণাপন্ন হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। ১৪ আগস্টের কালো রাত্রিতে বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের হাতে শাহাদাৎ বরণ হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের ১৭ আগস্ট অমানবিক নির্যাতন করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত সনদপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে কোনোপ্রকার সু-নির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই ড. ইসহাক ও ড. সিরাজুল হক বিধি বর্হিভূতভাবে তাকে চাকুরিচ্যুত করে। সে থেকে হাজী আকরাম আলী হাফেজ খালি হাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ান এবং অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন।

পরবর্তীতে তিনি ১২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ তারিখে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর বরাবর চাকুরি পুনঃবহালের জন্য আবেদন করেন। শিক্ষামন্ত্রণালয় হতে প্রেরিত স্মারক নং শাঃ ১৫/১১ ইউ- ১/৯১/৩০১ রেজিস্টার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্যে পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু উক্ত পত্র প্রাপ্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় হইতে অদ্যাবধি কোনোপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

একদিকে চাকরিী অন্য দিকে মুক্তিযোদ্ধের তালিকায় ঠাই না পাওয়া এ মানুষটির বয়স এখন প্রায় ৯০-এর কাছাকাছি। তিনি এখন খালি চোখে দেখেন না এবং জ্ঞান শক্তি (স্মৃতি শক্তি) অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছেন। নিকট আত্মীয় ছাড়া অনেককে চিনেন না। এবং জীবনে স্মৃতির পাতার অর্থাৎ কোথায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার কিছু স্মৃতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের মোয়াজ্জেম কাম খাদেম দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে যুদ্ধ শুরু হলে আমিও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।

বিশেষ করে আমি বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক। বঙ্গবন্ধু সে সময় আমার আযান শোনে মুগ্ধ হতেন। তাই তিনি আমাকে ভালবেসে একটি কালো কোট দিয়েছিলেন। তাঁর দেয়া সে কোটটি আমাকে এখনো স্মৃতি হিসেবে তাড়া করে। কোটটি এখনো গায়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কথা মনে করি। বয়সের ভারে ন্যুজ হওয়া সহায় সম্বলহীন দরিদ্র এ মানুষটির খবর কেউ রাখে না। তিনি এখন নামাজ পড়ে, ঘরে শুয়ে-বয়ে সময় কাটান। তার ১ ছেলে ও ৪ মেয়ে রয়েছে। শেষ বয়সে হাজী আকরাম আলীর হাফেজের একটাই দাবী মুক্তিযোদ্ধা স্বপক্ষের সরকার আওয়ামীলীগ তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যেন সম্মানিত করে।

এ জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চান এবং মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম অন্তর্ভূক্ত করে যেতে চান। এজন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

জিসান আহমেদ নান্নু, কচুয়া করেসপন্ডেন্ট

|| আপডেট: ০৭:০০ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার

এমআরআর

Share