সবকিছু ঠিক মতো হলে ভারত ও বাংলাদেশের (কুমিল্লা-ত্রিপুরা) সীমানায় গড়ে উঠবে ত্রিপুরার আগরতলা বিমানবন্দর। এ কথা জানালেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বৃহত্তর চাঁদপুরের কৃতি সন্তান বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বলেছেন, সেটি হবে বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মহাকরণে এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, ‘দু’দেশের জমি নিয়ে নির্মাণ করা হবে আগরতলা বিমানবন্দর। সেটি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশের দিকে একটি টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করলে যাত্রীরা সরাসরি বিমানবন্দরে প্রবেশ করে ভারতের অন্য রাজ্য চলে যেতে পারবেন বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এতে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ চার জেলার মানুষের সুবিধা হবে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। কারণ তারা ত্রিপুরা হয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছেন। এতে উভয়দেশেই লাভ হবে বলেও জানান তিনি।
এটা কি বাস্তবে সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব অল্প সময়ে দু’দেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছেন। বিশেষ করে ছিটমহলের মতো দীর্ঘদিনের কঠিন সমস্যা এই দু’ প্রধানমন্ত্রী সমাধান করেছেন তাই তিনি আশাবাদী। কেননা এর ফলে উভয় দেশের অনেক সুবিধা হবে।’
এই সংক্রান্ত বিষয়ে ত্রিপুরা সরকার একটি প্রস্তাব বানিয়ে ভারত সরকারের কাছে দ্রুত পাঠানো হবে। এরপর উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে উভয় দেশের নিয়ম কানুন মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান।
জানা গেছে, তৎকালিক কুমিল্লা জেলার চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার সন্তান বিপ্লব দেব। কচুয়া উপজেলার সহদেবপুর পূর্ব ইউনিয়নের মেঘদাইর গ্রামের হিরুধন দেব ও মিনা রানি দেবের একমাত্র ছেলে বিপ্লব কুমার দেব। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর মা-বাবা ত্রিপুরা চলে যান। এরপর তাঁরা সেখানেই স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপ্লব দেবের আত্মীয়স্বজন অনেকেই এখনো কচুয়া বসবাস করছেন। তাঁর কাকা প্রাণধন দেব কচুয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ বর্তমান সভাপতি। চাচা প্রাণধন দেব বলেন, ‘বিপ্লবকে তার মা বাংলাদেশে থাকাকালে গর্ভধারণ করেছিলেন। তবে ত্রিপুরার মাটিতেই বিপ্লবের জন্ম।’
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় ত্রিপুরার বনমালিপুর আসন থেকে লড়েছেন বিপ্লব। সেই নির্বাচনে বিপ্লব কুমার দেবের নেতৃত্বে বিজেপি ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসন পায়। বিপ্লব কুমার দেব নিজেও একটি আসনে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
এর আগে বিপ্লব দেব ত্রিপুরা রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব পান ২০১৬ সালে ৭ জানুয়ারি। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে বিপ্লব দেব ১৫ বছর দিল্লিতে ছিলেন। সেখানে তিনি একটি ব্যায়ামাগারের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। বিপ্লব রাজ্য বিজেপির সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দুই বছরের মধ্যেই দলটিকে ঐতিহাসিক বিজয় এনে দেন।
কুচুয়ার বাসিন্দা তার চাচা প্রাণধন দেব জানান, বিপ্লব দেব তিন বোনের একমাত্র ভাই। তার বাবা হিরুধন দেব। মায়ের নাম মিনা রানী দেব। তার বাবা-মা বাংলাদেশে থাকাকালে গর্ভধারণ করেছিলেন তা মা। তবে ত্রিপুরার মাটিতেই জন্মগ্রহণ করেন বিপ্লব দেব।
বিপ্লব দেব গত বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে বিজেপির প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে যোগদান করেন। সম্মেলন শেষে তিনি তখন তার গ্রামের বাড়ি কচুয়ায় হেলিকপ্টারযোগে আসেন। ওইদিন কচুয়া প্রেসক্লাব তাকে সংবর্ধনা প্রদান করে।
এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সিনিয়র অফিসার নীতি রানী দেব। তখন তিনি বলেছিলেন, আমার প্রকৃত ভূমিতে এসে যে সম্মান পেয়েছি তা আমার জীবনে একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপরিচালনার ভূঁয়শী প্রশংসাও করেন তিনি।
বার্তা কক্ষ
সেপেটম্বর ৩০,২০১৮