চাঁদপুরের কচুয়ার মাসনিগাছা চেতনা বহুমুখি সমবায় সমিতি লিঃ নামের হায় হায় কোম্পানী গ্রাহকদের প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। জমাকৃত টাকা ফেরত পাওয়ার দাবীতে গতকাল শনিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও ক্ষোভে ফুসে উঠেছে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা।
জানাগেছে, ২০০৭ সালে ১৯ জন পরিচালক নিয়ে এ সমিতিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিচালানা বোর্ডের সভাপতি মাসনিগাছা গ্রামের আবু তাহেরের পুত্র হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক নাজির মেম্বারের পুত্র মাসুদ মিয়া, সহ-সভাপতি চাঙ্গিনী গ্রামের জিয়াউল হক ও হিসাব নিরীক্ষক কালোচোঁ গ্রামের মাইনউদ্দিন মজুমদার। এ সমিতির কচুয়া ও রহিমানগর বাজারে আরো দুটি শাখা রয়েছে। মাসনিগাছা সমিতিতে রয়েছে সহস্রাধিক গ্রাহক।
ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক গ্রাহক জানান, প্রথম কয়েক বছর সমিতির কার্যক্রম নিয়মমত চলছিল। আমরা প্রতি মাসে ৩’শ টাকা কিস্তিতে বছরে ১৮ হাজার টাকা জমা দিলে উক্ত জমা টাকার বিনিময়ে ৩০ হাজার টাকা পেতো।
এ নিয়ম মেনে একই ব্যক্তি একাধিক সঞ্চয়ি হিসাব খোলে। যারা সঞ্চয় আমানত ব্যতিত ঋণ গ্রহন করে তাদেরকে প্রতি লাখে, আড়াই হাজার টাকা এবং এফডিআর করে ঋণ গ্রহণ করলে প্রতিমাসে ১৫’শ টাকা দিতে হয়।
২০১৫ সালের শেষের দিকে সমিতির কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫-৬ জন গুরুত্বপূর্ন পদাধিকারী তথা অর্থ নিয়ন্ত্রনকারি ব্যক্তিরা এলাকা থেকে আকস্মিক ভাবে গাঁ ঢাকা দেয়। এতে গ্রাহকরা চরম হতাশ হয়ে পড়ে বলে এলাকাবাসী জানায়। এক পর্যায়ে ভোক্তভোগী গ্রাহকরা বহু চেষ্টা করেও অর্থ নিয়ন্ত্রনকারী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সঞ্চিত অর্থ উত্তোলন করতে ব্যর্থ হয়। এতে তারা এখন সর্বস্ব খুইয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ অবস্থায় গ্রাহকদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
শনিবার (১০ মার্চ) বিকেলে শত শত পুরুষ-মহিলা গ্রাহক মাসনিগাছা বাজারের সমিতির কার্যালয়ের সমূখে জড়ো হয়ে সাংবাদিকদের কাছে তাদের অভিযোগ সহ মানবেতর জীবন যাপন করার চিত্র তুলে ধরে।
গ্রাহক মাসনিগাছা গ্রামের পপি রানি শীল ৩ লক্ষ টাকা, উত্তম চন্দ্র সূত্রধর ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, মনখুসি রানির ৬৮ হাজার ৫’শ টাকা, নুপুর রানী ৬০ হাজার টাকা ও বরুড়া উপজেলার আড্ডা গ্রামের জাকির হোসেন ৪ লক্ষ টাকা সহ বেশ কিছু গ্রাহক তাদের সঞ্চয় আমানতের টাকা জমা দেয়ার কাগজ পত্রাদিসহ প্রমানাধী সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। সমিতির পরিচালক মাসনিগাছা গ্রামের অধিবাসী মোঃ আনোয়ার হোসেন ও দুলাল মিয়া জানান, তারা নামে মাত্র পরিচালক। মূলত এ সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি সহ ৫-৬ জন ব্যক্তি অর্থ আদায় ও নিয়ন্ত্রন করতো। এই দুই পরিচালক আরো দাবি করেন যে, তারা ৬-৭ লক্ষ টাকা করে সমিতিতে পুঁজি বিনিয়োগ করেছে।
তাদের বিনিয়োগ কৃত টাকা ফিরিয়ে পাওয়ার কোন আশার আলো দেখছে না। পরিচালক আনোয়ার হোসেন আরো জানায় অর্থ নিয়ন্ত্রনকারি ব্যক্তিরা তাকেও এলাকা থেকে গা ডাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছে। এদিকে চরম ক্ষোভে ফেটে পড়ছে সহস্রাধিক গ্রাহকরা।
এ অবস্থায় চেতনা সমিতির কর্মকর্তারা কর্তৃক টাকা হাতিয়ে নেওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
কচুয়া (চাঁদপুর) প্রতিনিধি \