কচুয়া উপজেলার গুতপুর গ্রামের অধিবাসী, সৌদি প্রবাসী স্বপন মিয়া কে পরিকল্পিতভাবে পানির সাথে বিষপানে হত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার হওয়া আসামী কুলসুমা বেগম নির্দোষ দাবী করে তার মুক্তির দাবী জানিয়েছেন পরিবার ও এলাকাবাসী। এ নিয়ে সোমবার বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার প্রকৃত বিবরন তুলে ধরেন এলাকাবাসীসহ কুলসুমা আক্তারের বাবা মহিব উল্লাহ ও তার ভাই আশিকুর রহমান।
কুলসুমা বেগমের বাবা মহিব উল্লাহ জানান, প্রায় ৮ বছর আগে আমার মেয়েকে একই উপজেলার গুতপুর গ্রামের মৃত আলী আরশাদের পুত্র মো. স্বপন মিয়ার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর জীবিকার তাগিদে স্বপন মিয়া সৌদি আরবে যান। সেখানে কর্মরত থাকার পাশাপাশি তিনি দু’বার দেশে আসেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর পুনরায় বাড়িতে আসেন। দেশে ফিরে এসে গুতপুর গ্রামের নিজ বাড়ীতে বিল্ডিংয়ের কাজ শুর করেন। এসময় স্বপন মিয়া তার ভাইদের কু-পরামর্শে ও বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আমার মেয়ে কুলছুমা বেগমের সাথে বাগ-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে আমার মেয়েকে শারিরকভাবে মারধর করলে তার সন্তান নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসে।
গুতপুর গ্রামের স্থানীয় লোকজন জানান, স্বপন মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। স্বপন মিয়া ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মান অভিমান করে ঘর থেকে বের হয়ে যায়, পরে মধ্য রাতে ঘরে ফিরে এসে বমি করতে থাকে।
এসময় স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় তিনি কেরি পোকার টেবলেট খেয়েছেন। পরবর্তীতে তাকে ঢাকায় রেফার করে ‘হসপিটাল ২৭ প্লাস’ এ নিয়ে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৪ টায় ওই হাসপাতালে মারা যান তিনি। এসময় স্বপন মিয়াকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে গুঞ্জন সৃষ্টি হলেও স্বপনের পরিবারের পরিবারের সদস্যদের কোন অভিযোগ না থাকায় স্বপন মিয়ার লাশ গুতপুর গ্রামে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে ঘটনার প্রায় ১ মাস পর স্বপন মিয়ার ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে কুলসুমা বেগম, তার বাবা পাথৈর গ্রামের অধিবাসী মহিব উল্লাহ, মা লাকী বেগম ও ভাই আশিকুর রহমানকে আসামী করে চাঁদপুরের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কচুয়া আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার প্রেক্ষিতে ১৮ নভেম্বর রাতে ১নং আসামী কুলছুমা বেগমকে পাথৈর গ্রামের তার বাবার বাড়ী থেকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করেছে কচুয়া থানা পুলিশ। কুলসুমা বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও তাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরনের ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা নির্দোষ কুলসুমার দ্রুত মুক্তি দাবী করছেন।
এদিকে কুলসুমা বেগমের বাবা মহিব উল্লাহ তার মেয়েকে নির্দোষ দাবী করে বলেন, আমার মেয়ে তার দেবর ও শ^শুর পক্ষের লোকজনের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার মেয়ের জামাই স্বপন মারা যাওয়ার পর তার সহায় সম্পত্তি, নির্মাণাধীন বিল্ডিং ও ব্যাংকে থাকা টাকা আত্মসাতের জন্যই উল্টো আমার মেয়েকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে পাঠিয়ে হয়রানি করছেন। মূলত সাইফুল, সোহেল, মালেক গংরা স্বপনের সম্পদ কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে কুলসুমাকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। কুলসুমা বেগম বর্তমানে জেলে থাকায় তার একমাত্র ৪ বছরের শিশু সন্তান সামিয়া আক্তার চরম বিপাকে রয়েছে। শিশুটির আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। এ অবুজ শিশুটির ভবিষ্যত বিবেচনায় ন্যায় বিচারের দাবী করেন তিনি।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ২৫ নভেম্বর ২০২৪