চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৯নং কড়ইয়া ইউনিয়নের সাদিপুরা-চাঁদপুর সড়কের বাসাবাড়িয়া গ্রামে খালের উপর কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ব্রীজ নির্মানের ফলে বিএডিসির ১ কিউ বিদ্যুৎ চালিত এলএলপি স্ক্রীমে ভূ-গর্ভস্থ সেচ-নালা বারিভ পাইপ পাম্প হাউজ ভেঙ্গে পড়ছে। এতে করে ওই এলাকার প্রায় ৫০ একর বোরো ধানের জমির তিন শতাধিক কৃষকের জমিতে পানি সেচ না দেয়ায় মাঠ চৌচির হয়ে যাচ্ছে। ফলে ব্যাপক ক্ষতিসাধনের সম্ভাবনা রয়েছে তিন শতাধিক কৃষকের কষ্টার্জিত বোরো ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন।
সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার বাসাবাড়িয়া গ্রামের হায়াতপুর মাঠে প্রায় ৫০ একর জমি দীর্ঘদিন সেচের অভাবে অনাবাদি ছিল। কৃষকের দুর্দশার লাঘবের চিন্তা করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সেচ বিভাগ হতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক পাম্পসেট স্থাপন করা হয়। এতে করে ৫০ একর জমিতে ফসলি অনাবাদি জমি আবাদে এসেছে এবং স্থানীয় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। নতুন স্বপ্ন নিয়ে এবারো ওই মাঠে স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধানের আবাদ করে। আর কিছুদিন পরে ধান ঘরে তোলার মাধ্যমে তাদের কষ্ট দূর হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে হঠাৎ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের আওতাধীন গত কয়েকদিন ধরে নতুন ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু করে। শুক্রবার ওই ব্রীজের এপ্রোচ ওয়াল ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় স্ক্রীমটির পাম্প ঘর ও হেডার ট্যাংক ভেঙ্গে ফাটল দেখা দেয়। এতে করে জমিতে পানি সেচ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কৃষকদের মাঝে আতংক ও দুচিন্তা দেখা দেয়। পাশাপাশি কৃষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অসন্তুষ্ট দেখা দিয়েছে।
স্থানীয কৃষক মিলন হোসেন,আমির হোসেন ও জনিসহ আরো অনেকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ মাঠে ধানসহ অন্যান্য ফসলি আবাদ করে আসছি। কিন্তু নতুন করে ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু করায় এবং পাম্প হাউজ ভেঙ্গে যাওয়ায় পানির অভাবে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। যাদের কারনে আমাদের ফসল নষ্ট হচ্ছে এরা এর দায়ভার নিতে হবে।
সেচ স্ক্রীম ১ কিউসেক এলএলপি হায়াতপুর এরিয়া ম্যানেজার মো. মাহবুব হোসেন ফরহাদ বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০ একর জমির কৃষক ধানের আবাদ করে। কিন্তু নতুন করে ব্রীজ স্থাপনের কাজ করায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি দেখা দিয়েছে। ওই স্থানে ব্রীজ নির্মান বন্ধ রাখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর ২২ মার্চ আমরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু ঠিকাদার আমাদের কৃষকের স্বার্থ রক্ষা না করেই খাম-খেয়ালি ভাবে ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু করেছেন। এদিকে বিএডিসি কর্মকর্তা ও পিআইও উভয় কর্মকর্তা কেউ এর দায় নিতে রাজি না। একে অপরের দোষারোপ করছেন বলছেন নিয়ম নীতির কথা।
তবে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার মো. আবু তাহের জানান, ব্রীজটি বাসার এন্টারপ্রাইজের আবুল বাসার দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ওই কাজ তিনি না করায় আমি দায়িত্ব নিয়েছি। যতদুর জানি মাঠে যাওয়ার নতুন রাস্তা বরাবর ব্রীজ হওয়ার কথা। আমরা রাস্তা বরাবরই নতুন ব্রীজ নির্মানের কাজ শুরু করেছি। তবে বিএডিসির সেচ পাম্প ভেঙ্গে যাওয়ায় আমাদের কিছু করার নেই।
উপজেলা বিএডিসি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম চাঁদপুর টাইসকে বলেন, ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্প কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাসাবাড়িয়া গ্রামে খালের পাশে কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে পাম্প হাউজ তৈরি করা হয়েছে। ব্রীজ নির্মানের পূর্বে কৃষককের ক্ষতিসাধন করতে সেচ প্রকল্পের স্ক্রীম ম্যানেজারের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের নিকট চিঠি দেয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. রাকিবুল ইসলাম চাঁদপুর টাইসকে বলেন, দুুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের আওতায় ব্রীজটি প্রায় ২ বছর আগে বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত বছরের ৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সাংসদ ১৫মিটার ব্রীজটির নির্মান কাজের ভিত্তিপ্রস্থর উদ্বোধন করেন। তবে কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্থ বিএডিসি সেচ পাম্পটি মেরামত করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হাসান চাঁদপুর টাইসকে বলেন, ব্রীজটি প্রায় ২ বছর পূর্বে বরাদ্দ হয়, কিন্তু বিএডিসি কর্মকর্তা আমাদের অবগত না করে ১০/দিন পূর্বে ওই স্থানে পাম্প হাউজ নির্মান করেছেন। কৃষকের ফসলি জমির যাতে ক্ষতিসাধন না হয়, বিষয়টি উভয় স্বার্থ রক্ষা করে দু’ দফতরের সাথে আলোচনা করে সমঝোতা করা হবে।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ১৫ এপ্রিল ২০২৩