চাঁদপুরের কচুয়ার সাচার ডিগ্রি কলেজের শিক্ষকদের গাফিলতিতে রেজিষ্ট্রেশন হয়নি ডিগ্রি ১ম বর্ষের ২২শিক্ষার্থীর। এর আগে গত বছরও এমন ভূল হয়েছিল কলেজ কর্তৃপক্ষের। ওই সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শান্তনা দিয়ে এ বছর তাদের রেজিষ্ট্রেশন করে দেয়ার কথা থাকলেও একই ভূলে জীবন থেকে হারিয়ে গেল শিক্ষার্থীদের দুটি বছর। এ দায় কার? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। এ ঘটনায় বাদ পড়া ২২ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মো. আবুল হাসান, মো. সাকিব, হুমায়রা আক্তার, তানজিনা আক্তার ও আসমা আক্তার সোমবার কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে কচুয়া উপজেলার সাচার ডিগ্রি কলেজে ডিগি ১ম বর্ষে ১৪৬ জন শিক্ষার্থীরা তাদের অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করেন। পরবর্তীতে কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি (অফিস সহায়ক) শাহিনা আক্তার শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংক্রান্ত আবেদন নিশ্চায়ন করেননি। ফলে আবেদনকৃত শিক্ষর্থীদের মধ্যে ২২ জন শিক্ষার্থী ২০২৩ সালে ডিগ্রি ১ম বর্ষের পরীক্ষা দিতে এসে জানতে পারেন তাদের প্রবেশপত্র আসেনি। ওই সময় কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মহসীন কবির ও সাবেক উপাধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) চন্দনা সাহার কাছে শিক্ষার্থীরা ধারস্থ হলে শিক্ষার্থীদের পরের বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে তাদের ভর্তি নিশ্চিত করে পরীক্ষায় সুযোগ দেয়ার আস্বাস প্রদান করেন। ওই আস্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা রীতি মতো ক্লাসে অংশগ্রহন, বেতন ভাতা প্রদানসহ আনুসাঙ্গিক সকল প্রক্রিয়া শেষ করেন। কিন্তু ২০২৪ সালে তাদের রেজিষ্ট্রেশন করতে এসে একই ঘটনার সম্মুখীন হন। এবারো তারা জানতে পারে তাদের রেজিষ্ট্রেশন হয়নি।
দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমন ভূলের কারনে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে তাদের প্রভাব লিস্টে নাম আসেনি। ফলে তাদের প্রবেশপত্রও আসেনি। যেখানে রেজিস্ট্রেশন হয়নি সেখানে ফরম পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষ কীভাবে টাকা নিলেন এমন প্রশ্ন সবার। ক্ষোভ প্রকাশ করে পরীক্ষার্থী আবুল হাসান, সাকিব, হুমায়রা, তানজিলা আক্তার ও আসমা আক্তার বলেন, ‘রেজিষ্ট্রেশন ফি দিয়েছি, তাহলে কেন আমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। আর রেজিস্ট্রেশন না হলে আমাদের কাছ থেকে ফরম পূরণ, বেতন ও রেজিষ্ট্রেনের টাকা নিল কেন।’ অধ্যক্ষসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমাদের জীবন থেকে দুটি বছর হারিয়ে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, আমাদের ছেলে-মেয়েদের ফরম পূরণ হয়নি। কারণ হিসেবে তারা রেজিস্ট্রেশন না হওয়াকে উল্লেখ করেছেন। নিজেদের ভুল স্বীকার করে ওই কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ মহসীন কবির বলেন, ‘আমাদের ভুলের কারণে ২২ শিক্ষার্থীর রেজিষ্ট্রেশন হয়নি। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। যেহেতু ভুল করেছি, যেকোনো শাস্তি মেনে নেব।’
তিনি আরো বলেন, গত বছর ইউএনওকে প্রধান করে ৫সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় অজ্ঞাত কারনে তদন্ত কমিটি সরেজমিনে এসে বিষয়টি অনুসন্ধান করেননি। এবার শিক্ষার্থীরা পুনরায় এসে বিষয়টি আমাকে জানালে বর্তমান কলেজ গভর্নিং বডির এডহক কমিটির সভাপতি মো. খায়রুল আবেদীন স্বপন এর সহায়তায় পুনরায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি যাচাই বাছাই করে তদন্ত রিপোর্ট দিবেন।
কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হেলাল চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অনুসন্ধান জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur