ডা. ইসমাঈল হোসেন সিরাজী কচুয়া উপজেলার পল্লীর নিভৃত জনপদ নন্দনপুর গ্রামের মৌলভী বাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৫৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে মাঝিগাছা আব্দুর রাহিম মা ও শিশু হাসপাতালে প্রতি শনিবার সকাল-সন্ধ্যা এলাকার গরীব-অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন।
তার প্রয়াত পিতা এলাকার আলোকিত মানুষ মৌলভী ইদ্রিস মিয়া পাকিস্তান সরকারের পর থেকে ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৫ বার ৩৬ বছর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। মৌলভী ইদ্রিস মিয়া এলাকাবাসীর কাছে একজন মানবিক চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মানুষের বিপদে আপদে ছুটে যেতেন সবার আগে। তিনি জীবদ্দশায় তাঁর নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন নন্দনপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান। মরহুম মৌলভী ইদ্রিস মিয়া নিজে যেমনি কর্ম-গুনে হয়েছিলেন সমাধৃত। তেমনি তাঁর সন্তানরাও সমাজে বিভিন্নভাবে কর্মের মাধ্যমে হয়েছেন প্রতিষ্ঠিত এবং তাদের প্রয়াত বাবার পথ অনুসরণ করে এলাকায় সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
পেছনের কথা: ডা: ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শেষ করে ১৯৭২ সালে নন্দনপুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে থেকে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৭৪ সালে মতলব ডিগ্রি কলেজ থেকে সাফল্যের সাথে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৭২ সালে কচুয়া উপজেলার ৫নং পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। মতলব ডিগ্রি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭৬ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তৎকালীন সময়ের ছাত্রলীগ নেতা এহতেশাম হক চৌধুরী দুলাল বর্তমানে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮২ সালে কর্মজীবনে প্রবেশের পর থেকে তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (সচিপ) সদস্য হয়ে বর্তমানে আজীবন সদস্য পদে রয়েছেন । মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (আরএমও) থাকাকালীন ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে বহু হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে খাগড়াছড়ি,রাজশাহীসহ বহু স্থানে বদলী হয়েছেন। ২০০১ সালে পালাখাল-সেঙ্গুয়া সড়কে রাস্তায় গাছ ফেলে ডা: ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। একই বছরে ৩ অক্টোবর টঙ্গীর বাসায় সাবেক এক প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রীর ইন্দনে তার বাসায় হামলা,ভাংচুর করা হয়। ওই সময় আওয়ামী দলীয় সাবেক এমপি আহসান উল্যাহ মাষ্টারের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় তিনি প্রাণে রক্ষা পান। পরবর্তীতে তিনি ২৬৪ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ান। এক কথায় ১৯৯১ সালে মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরএমও এবং ২০০১ সালে টঙ্গীতে একটি হাসপাতালের দায়িত্ব পালন কালে তৎকালীন বিরোধী দলের হাতে তিনি নানান ভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
২০০৪ সালে বিভিন্ন অসুস্থ্যজনিত কারনে চাকরি থেকে সরে আসেন। ২০১০ সালে চাকরি পূর্নবহালের আবেদন করলে মানণীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনা করে তার চাকরি পূর্নবহাল করেন। তখন তিনি কালীগঞ্জ ও গাজীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি ২০১৬ সালে ফেনী জেলার সিভিল সার্জন হয়ে চাকুরি থেকে অবসর গ্রহন করেন। বর্তমানে তিনি টঙ্গী,ব্রাহ্মনবাড়িয়াসহ নিজ এলাকায় ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে সম্পৃক্ততা রেখে সুনামের সাথে জড়িত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রয়াত মৌলভী ইদ্রিস মিয়া চেয়ারম্যানের পুত্রদ্বয় ডা: ইসমাইল হোসেন সিরাজী সাবেক সিভিল সার্জন, আবু ইউসুফ (সমাজসেবক), মো: ইব্রাহিম ঢাকা বারডেম হাসপাতালের পরিচালকের পিএ,আবু মুসা নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কচুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও ছোট ছেলে মো: হোসেন একজন ব্যবসায়ী এবং ৪ মেয়ে ও তাদের পরিরার স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
ডা: ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থেকে এলাকায় প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি তিনি উন্নয়নের রাজনীতি করেছেন। তৎকালীন সময়ে তিনি সিএসপি পুলিশ অফিসার না হয়ে এলাকার মানুষের মন জয় করে জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকাকে উন্নয়নের ছোয়া লাগিয়েছেন। অনেকে আজ আমার বাবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালায়। না জেনে না বুঝে এসব অপপ্রচার থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানান তিনি।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ২৬ নভেম্বর ২০২৩