চাঁদপুর কচুয়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করায় মনি আক্তার (১৯) নামে এক কলেজ ছাত্রীকে বেধরক মারধর করে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রেমিকের বাড়ির লোকজনের বেধড়ক মারধরে সে গুরুতর আহত হয়ে পড়লে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে তিনটি হাসপাতালে নেওয়ার পর চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
বর্তমানে সে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
১২ ডিসেম্বর শনিবার দুপুরে কচুয়া উপজেলার চাঁপাতলী গ্রামের প্রেমিক সুজন হোসেনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
আহত মনি আক্তার একই উপজেলার নুরপুর গ্রামের আব্দুল করিমের মেয়ে এবং রহিমানগর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রী কলেজের সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী।
হাসপাতালের বেডে আহত মনি আক্তার জানান, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে কচুয়া চাপাতলী গ্রামের মৃত আলী আহমেদের ছেলে সুজনের সাথে তার রহিমানগর সুরমা বাস কাউন্টারে পরিচয় ঘটে। তারপর থেকে মোবাইলে কথোপকথনের মাধ্যমে দুজনের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শুরু হয় তাদের দুজনের প্রেমের পথ চলা। সুজন তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে মাঝে মাঝে দুজন ঘুরে বেড়ানো থেকে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে।
আরও পড়ুন…কচুয়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে কলেজ ছাত্রীর অবস্থান
মনি আক্তার জানায়, চলতি বছরের গত ৬ ফেব্রুয়ারি সুজন তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। ওই সময় সে সুজনকে একটি স্বর্ণের চেইন ও আংটি দিয়ে দেন।
পরবর্তীতে সে তাকে বিয়ে করবে এমন আশায় ১১ ফেব্রুয়ারি মনি আক্তার সুজনকে বাড়ি ঘর মেরামত করার জন্য নগদ দুই লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু দিনের পর দিন দিন সে প্রেমিক সুজনের বিয়ের আশ্বাসে ব্যর্থ হলে বিষয়টি সুজনের পরিবারের কাছে খুলে বলেন। কিন্তু তার পরিবার এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে সে জানায়।
এদিকে সুজনকে নগদ টাকা দেওয়ার কথা জানতে পেরে মনি আক্তারের পিতা মাতা তাকে ঘরবন্দী করে রাখেন। আহত মনি আক্তার নিরুপায় হয়ে সুজনকে বিয়ের কথা বলেন।
কিন্তু সুজন তাকে একের পর এক আশা দিতে থাকেন। তার এমন মিথ্যা আশা ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের মে মাসে সে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।
প্রেমিকের কাছে নিজের সর্বস্ব লুটিয়ে দিয়ে তাকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে প্রেমিকা মনি আক্তার ১২ ডিসেম্বর শনিবার দুপুর ১২ টায় চাপাতলী প্রেমিক সুজনের বাড়িতে বিয়ের দাবি নিয়ে অবস্থান করলে, প্রেমিক সুজন এবং তার দুই ভাতিজি ইসমা আক্তার, শারমিন আক্তার, ও তার ভাই লিটন, মাসুদ, ভাগিনা মিলনসহ পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে তাকে বেধরক মারধর করে তার ওপর নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায় বলে তার অভিযোগ।
তাদের এমন শারীরিক নির্মম নির্যাতনে মনি আক্তার গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে বাড়ির অন্যান্য লোকজন তাকে অচেতন অবস্থায় রহিমানগর বেসিক প্রাইভেট হাসপাতালে রেখে চলে যায়।
পরবর্তীতে এমন ঘটনার খবর পেয়ে আহতের পরিবারের লোকজন শাহরাস্তি থানা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ তাকে সেখান থেকে কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় পরবর্তীতে তাকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
কিন্তু সেখানেও তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আড়াই,শ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
বর্তমানে সে হাসপাতালের চতুর্থ তলায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। মনি আক্তার আরো জানায় তার প্রেমিক সুজন একইভাবে আরও একাধিক মেয়ের সাথে এভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে তাদের জীবন নষ্ট করেছে বলে তার অভিযোগ।
এমন ঘটনার জন্য ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী মনি আক্তার তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করছেন।
এ বিষয়ে প্রেমিক সুজন হোসেনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে জানায়, তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে ঠিক।কিন্তু আমাদের মাঝে প্রেমের কোন সম্পর্ক হয়নি। আমি তাকে বিয়ের আশ্বাসও দেই নি। তাকে বিয়ে করার জন্য সে প্রায় সময় আমাদের সাথে ঝামেলা করতে ঘটনার দিন সে বিয়ের দাবি নিয়ে আমাদের বাড়িতে আসার পথে আমার এলাকার মহিলারা তাকে ধরেছে।
তাকে আমরা কেউ কোন মারধর করে নি আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ দিয়েছে তা মিথ্যা বানোয়াট।
প্রতিবেদকঃ কবির হোসেন মিজি,১৫ ডিসেম্বর ২০২০