চাঁদপুরের কচুয়ায় দিনদিন কমে যাচ্ছে পাটের আবাদ। পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া,শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি ও পাট পচানোর পানি সংকটের কারণে পাটের আবাদ কমেছে এ উপজেলায়। এক দিকে কমেছে পাটের আবাদ অপর দিকে বাড়ছে মৎস্য চাষ। পাট চাষে লোকসান হওয়ায় অধিক মুনাফার লক্ষে অন্য ফসল ও মৎস্য চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা। চাষিদের দাবি প্রতি বছরে পাট চাষে একরকম লোকসান গুনতে হয়। বাধ্য হয়ে অন্য ফসল আবাদ করছেন তারা। তবে কৃষি অফিস বলছে, পাট চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা ও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যনুযায়ী, চলতি বছরে এ উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩০০ হেক্টর। আর পাট চাষ করা হয়েছে ৩০৪ হেক্টর, যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ উপজেলায় এক সময়ে হাজার হাজার হেক্টর পাটের আবাদ করা হতো, কিন্তু এখন কমে যাচ্ছে পাটের আবাদ।
পাট চাষীরা জানান, গেল বছর অনাবৃষ্টি থাকলেও তেমন তাপদাহ ছিল না তাই সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছেন চাষিরা। কিন্তু পাট জাগ দেয়ার মতো পানির ব্যবস্থা ছিল না। অনেকেই কাদামাটি দিয়ে পাটজাগ দেয়ার পাটের মান নষ্ট হওয়ায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। চলতি মৌসূমে অনাবৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয় তীব্র তাপদাহ। ফলে অনেকেই পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পাট পচানোর জন্য কোনো উš§ুক্ত জলাশয় না থাকায় চাষিরা পাট চাষ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। অনেকেই খাল বিল সংস্কার ও দখল হয়ে যাওয়া জলাশয় উম্মুক্ত ঘোষণা করার আহ্বান জানান তারা।
বাঁচাইয়া গ্রামের পাট চাষি ওয়াজী উল্যাহ জানান, প্রতি বছর চাষিরা এ পাট আবাদ করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন। কিন্তু পানি সংকট ও শ্রমিকদের বাড়তি মজুরির কারণে চাষিদের পাট পচাতে সইতে হয় নানা বিড়ম্বনা। অনেকেই খালে বিলে পানি না পেয়ে বাড়ির পাশে গর্তে সামান্য পানি দিয়ে পাট পচাতে দেন। এতে এক দিকে যেমন চাষিদের খরচ বেড়ে যায় তেমনি পাটের রং নষ্ট হয়। ফলে পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।
পাটচাষি সেঙ্গুয়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে পাট বপন করার সময় সেচ দিয়ে পাট বপন করতে হয়েছিল। পরে প্রচণ্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে পাটক্ষেত বিনষ্ট হয়। উন্ম–ক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দিতে পারলে পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে।
কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মেজবাহ উদ্দিন জানান, চলতি মৌসূমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত ৩০৪ হেক্টর। অনাবৃষ্টির কারণে অনেকেই পাটবীজ বপন করতে পারেনি। আর যারা আবাদ করেছেন পানির অভাবে পাটগাছ বাড়েনি। অন্যদিকে পাট পচানো নিয়েও চাষিরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। তাই অনেক চাষী অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষে মৎস্য চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তবুও চাষিদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হচ্ছে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য।
প্রতিবেদক: জিসান আহমেদ নান্নু, ২২ আগস্ট ২০২৪