আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ (পুরুষ) ক্রিকেটের শিরোপা জিতে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রবিবার রাতে আসরের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৪ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ক্যারিবীয়রা। প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো টি২০ বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়েছে তারা।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল দুই সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড। ফাইনালের এই লড়াইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ১৫৬ রানের টার্গেট দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ক্যারিবীয়রা সেই টার্গেট তাড়া করতে নামার পর নানা নাটকীয়তায় ভরে উঠেছিল টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটি।
তবে নাটকের মূল আকর্ষণ ছিল শেষ ওভারে। জয়ের জন্য ওই ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান। হাতে ৪ উইকেট। ইংলিশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর ফিল্ডার অসাধারণ তৎপরতার বিপরীতে ক্যারিবীয়রা সেই রান করতে পারবে কিনা, এ নিয়ে বিরাজ করছি টানটান উত্তেজনা। তবে সব উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যান কার্লোস বার্থওয়াইট। ইংলিশ পেসার বেন স্টোকসের করা শেষ ওভারের প্রথম ৪টি বলেই ছক্কা মেরে ২ বল বাকি থাকতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা পাইয়ে দেন তিনি।
শুরুতে ম্যাচে টস হেরে আগে ব্যাটিং করেছিল ইংল্যান্ড। ইনিংসের শুরুতেই বিপদে পড়েছিল ইংলিশরা। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড আউট হয়েছেন ওপেনার জেসন রয়। এরপর দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে বিদায় নিয়েছেন আরেক ওপেনার অ্যালেক্স হেইলস। পঞ্চম ওভারে চতুর্থ বলে আউট হয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগান। দলীয় ২৩ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসেছিল মরগানের দল।
তবে জো রুট ও জস বাটলার বিপদ সামলে দলকে সামনে টেনে নিচ্ছিলেন। কিন্তু ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কট আউট হয়েছেন বাটলার, ব্যক্তিগত ৩৬ রানে (২২ বলে)। সতীর্থদের যাওয়া আসার মিছিলে একাই লড়েছেন জো রুট। আউট হওয়ার আগে ৫৪ রান (৩৬ বলে) করেছেন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। তার তিনি আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ডের বড় সংগ্রহ গড়ার আশা শেষ হয়ে যায় ইনিংসের ১৫তম ওভারেই। শেষ অব্দি নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে হারিয়ে ১৫৫ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড।
এদিন বোলারদের পাশাপাশি নৈপুণ্যে দেখিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল্ডাররাও। দুরন্ত সব ক্যাচ ধরেছেন তারা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ডোয়াইন ব্রাভো ও কার্লোস ব্রার্থওয়াইট।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরাও বিপাকে পড়েছিল শুরুতে। দলীয় ৫ রানেই বিদায় নিয়েছিলেন দুই ওপেনার ক্রিস গেইল ও জনসন চার্লস। দুটি উইকেটই নিয়েছিলেন ইংলিশ স্পিনার জো রুট। এরপর তৃতীয় ওভারে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান ল্যান্ডল সিমন্সও।
তবে উইকেটের এক প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ান বিগ ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পছন্দ করা মারলোন স্যামুয়েলস। ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নেমে শেষ অব্দি ৬৬ বলে ৮৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা এই ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। কিন্তু উইকেটের অপর প্রান্তে সতীর্থদের যাওয়া-আসার মিছিল দেখতে হয়েছিল তাকে। ইনিংসের ১৬তম ওভারে দুই বিগ হিটার আন্দ্রে রাসেল ও ড্যারেন স্যামির উইকেট হারিয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল তখন ৬ উইকেট হারিয়ে ১০৭ রান। ফলে ইংল্যান্ডই তখন শিরোপা জয়ের পথে এগিয়ে। কিন্তু শেষ ওভারে বার্থওয়াইটের ব্যাটিং বীরত্বে শেষ হাসিটা হেসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজই।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড দুই দলই টি২০ ক্রিকেটের সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ইংলিশরা ২০১০ সালে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা ২০১২ সালে এই শিরোপা জিতেছিল। ফলে দুই দলের সামনেই সুযোগ ছিল টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতার। শেষ অব্দি তাতে সফল হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজই।
ফাইনালে লড়াইয়ে নামার আগে এবারের বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্বেও মুখোমুখি হয়েছিল এই দুই দল। সেখানে ক্রিস গেইলের অপরাজিত সেঞ্চুরির সুবাদে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
||আপডেট: ১১:০১ অপরাহ্ন, ০৩ এপ্রিল ২০১৬, রোববার
চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর