চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বর্তমান সাংসদ শফিকুর রহমান ও সাবেক সাংসদ ড: মো: শামছুল হক ভুইয়ার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে । সংঘর্ষে এবারো সাবেক এমপি ড: শামছুল হক ভুঁইয়ার গাড়িসহ ব্যাপক ভাংচুর করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচিতেএ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের তালিকায় সাবেক সাংসদ ড: শামছুল হক ভুইয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারীও রয়েছে। গুরতর আহত ৫ জন ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে। এ খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রকিবের নের্তৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।
তবে ঘটনাস্থলে পুলিশের শক্ত অবস্থান থাকার কারনে বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে থানার ওসি আব্দুর রকিব দাবি করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজনে আলোচনা সভা চলছিল। এ সময় বর্তমান এমপি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান এমপির গ্রুপের নেতাকর্মীরা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক হেলাল উদ্দীনের নের্তৃত্বে দলীয় শ্লোগান নিয়ে একটি আনন্দ মিছিল নিয়ে ফরিদগঞ্জ বাজার থেকে আসছিল।
এক পর্যায়ে উপজেলা সদরের ভান্ডারী মহল মার্কেটের পাশে বিআরডিবির মার্কেটের থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের চলমান সভায় সাবেক এমপি ড: শামছুল হক ভুঁইয়ার প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছিলেন । এ সময় অতর্কিত ভাবে দুই গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
তখন পাশে থাকা সাবেক এমপি ড: শামছুল হক ভুইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী ও ১২ নং চরদুখিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান হাছান আবদুল হাইয়ের প্রাইভেট কার সহ কয়েকটি মোটর সাইকেল ছাড়াও আওয়ামী লীগের অফিসে ভাংচুর চালায় বিক্ষুদ্ধরা। একই সময়ে উক্ত স্থানে থাকা জাতির পিতার ছবিও ভাংচুৃর করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নের্তৃবৃন্দরা অভিযোগ তুলেছে।
সংঘর্ষের সময় এলাকায় আতংকিত ব্যবসায়ীরা তাদের দোকান পার্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এ নিয়ে এলাকায় বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুক্রবার বিকেলে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন থাকতে দেখা যায়।
সংঘর্ষে আহতরা হলো পুলিশের সদস্য মো: দিদার, দৈনিক চাঁদপুর দর্পণের প্রতিনিধি গাজী মোমিন, আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান ভদ্র, নুর মোহাম্মদ, মো” রাশেদ, রানা , বাবু । এরা প্রত্যেকে ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
অপরদিকে শফিকুর রহমান এমপি গ্রুপের উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ন আয়বায়ক হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রর্তাবর্তন দিবস উপলক্ষে আমরা আনন্দ মিছিল নিয়ে আসছিলাম। এ সময় সাবেক এমপি ড: শামছুল হক ভুঁইয়া গ্রুপের পালিত দূর্নীতিবাজ ও অস্ত্রধারীরা আমাদের মিছিলে অতর্কিত ভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। তারা আলোচনা সভার নামে আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারাই জাতির পিতা ও জননেত্রী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করে আমাদের বিরুদ্ধে এখন অহেতুক অপপ্রচার ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়।’
আরো দেখুন- ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক, আইন-শৃঙ্খলা সভা পণ্ড
এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার ঘটনার পর সাংবাদিকদের সামনে বর্তমান এমপি শফিকুর রহমানের নাম উচ্চারন না করলেও তাকে ইংগিত করে বলেন তার নির্দেশেই আজ আওয়ামী লীগের বিরোধী স্বাধীনতার স্বপক্ষের বিরোধী গ্রুপ উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজিত আলোচনা সভার মধ্যে হামলা চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি।
‘উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে থাকা জাতির পিতার ছবি তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সহ বেশ কয়টি গাড়ি ভাংচুর করা ছাড়া তার দলীয় ৫০ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে বলে দাবি করেন।’
এ ছাড়াও সাবেক এমপি ড: শামছুল হক ভুইয়া এক বক্তব্য বলেন,‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রর্তাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় যে সকল সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে তারা আওয়ামী লীগ কিংবা এর সহযোগী সংগঠনের কেউ নয়। এমন একটি দিনে যারা আমাদের গাড়ি ভাংচুর এবং আমাদের উপর হামলা করেছে তা খবই দুখজনক। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিন্দা জানাই।’
উপজেলা যুব লীগের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন জানান, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের অনুষ্ঠানে বর্তমান এমপি সফিকুর রহমান, উপজেলা যুব লীগসহ কাউকেই দাওয়াত দেয়া হয়নি। তাছাড়া র্যালি নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের মিছিলে ইট মারায় ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে নেতাকর্মীরা সেখানে প্রবেশ করে।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রকিব বলেন, যুবলীগের মিছিলটি পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে থাকলেও তারা বেষ্টনি ভেদ করে হামলা চালায়। পুলিশ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিউলী হরি জানান, আজকের এই আনন্দময় দিনে এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফজাল হোসেন, ‘ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে র্যালি বের করে।হঠাৎ করে কিছু দুস্কৃতিকারী র্যালি ভেঙে হামলা করে। এসময় তারা গাড়ি ভাংচুর ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। পুলিশ তৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। আমরা ওই স্থানে পুলিশের নজরদারী রেখেছি।’
ভিডিওতে দেখুন-
ফরিদগঞ্জ থেকে ফিরে শরীফুল ইসলাম ও ফরিদগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট শিমুল হাছান।