চাঁদপুর শহরের ডিসি অফিসের সন্নিকটে এবং চাঁদপুর সদর এসপি সার্কেল কার্যালয়ের পাশে চাঁদপুর ওয়েস্টার্ণ হোটেলে দিন-দুপুরে র্দুর্ধষ চুরি সংগঠিত হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টার সময় এই ঘটনা ঘটে। হোটেল রেজিস্টারে ভুয়া নাম-ঠিকানা এবং ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিলেও তার ছবিটি ছিল তার নিজের। তাই ছবির মানুষটি সঠিক হলেও সে কেবা কারা তা এখনো পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি।
তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করার পর একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও প্রকৃত চোর রয়েছে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাছাড়া পুলিশ যাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে চুরির সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে আপতত তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
তবে জানা যায়, প্রকৃত চোরের সন্ধানে কাজ করছে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ। উক্ত অভিযোগের তদন্তে কাজ করছেন চাঁদপুর মডেল থানার এসআই ইসমাইল হোসেন।
এদিকে হোটেলে প্রদত্ত রেজিষ্টার বিবরণী ও জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী ঐ চোরের নাম মোঃ ইসতিয়াক হোসেন, পিতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মাতা: জোসনা বেগম, ঠিকানা নিরালা সবুজ বাগ, রোড ০১, ডাকঘর, খুলনা সদর-৯১০০, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা উল্লেখ করা হলেও সকল তথ্যই ভূয়া বলে জানান হোটেলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোঃ ইসতিয়াক হোসেন সুমন (৩২) নামের এক ব্যাক্তি হোটেলে এসে রুম বুকিং এর কথা বলে ভিজিটিং কার্ড নিয়ে যায়। এসময় হোটেল কার্যালয়ে ম্যানেজার এবং সহকারি ম্যানেজার তার সাথে কথা বলেন। এর ১৫ মিনিট পর পরিচয় বিহীন এক ব্যাক্তি হোটেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে হোটেলের ভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ সবিধার কথা জানতে চান এবং আগামীকাল সকালে তিনি আসবেন বলে জানান।
এরপর প্রকৃত চোর পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে হোটেলে আসেন। এরপর তিনি তাদের কোম্পানীর কয়েকজন লোক আসবেন এবং রাতে এখানে থাকবেন বলে তিনি ৪টি রুম ভাড়া নেন। এর পর তিনি রুমের চাবি নিয়ে তার একটি রুমে অবস্থান করেন। যেহেতু হোটেলে সকল গেস্টরাই তাদের স্বাধীন মতো যাতায়াত করার সুযোগ রয়েছে। সেহেতু অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জুম্মার নামাজের ব্যস্ততার কারণে ঐ ব্যক্তির প্রতি নজরদারী কম ছিলো। তবে কোন গেস্ট বাইরে যাওয়ার সময় রুমের চাবি জমা দিয়ে যাওয়ার নিময় রয়েছে। তাই ধরে নেওয়া হয়েছে তিনি তার রুমেই অবস্থান করছেন। কিন্তু হোটেল কর্মীরা তাদের রুটিন অনুযায়ী রাতে গেস্টদের খোঁজ খবর নিতে গেলে ঐ ব্যাক্তিকে রুমে না পেয়ে এবং তার লোকজনকে না দেখে ম্যানেজারকে জানান। এসময় ম্যানেজর রাত ১০টা পর্যন্ত উক্ত ব্যাক্তির জন্য অপেক্ষা করে তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু বার বার তার মোবাইলটি বন্ধ পেয়ে তিনি হোটেলের মালিক/ব্যাবস্থাপনা পরিচালককে জানান।
এরপর হোটেলের মালিক/ব্যাবস্থাপনা পরিচালক দ্রুত হোটেলে এসে বিকল্প চাবি দিয়ে ঐ ৪টি রুম খুলে দেখেন রুমের অনেক কিছুই নেই। চোরটি ইতিমধ্যে সবার অগোচরে চাবি জমা না দিয়ে সব কিছু নিয়ে পালিয়ে যায় বলে তখন নিশ্চিত হন এবং সাথে সাথে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় অবগত করায় পুলিশ কর্মকর্তা ফোর্স নিয়ে এসে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানান, এসময় চোর তার বরাদ্দকৃত ৪টি রুম থেকে ৪টি ৩২ইঞ্চি এলইডি টিভি, ৪টি ওয়াইফাই রাউটার, সেট টপবক্স ৪টি, ৪টি ইলেকটিক ক্যাটলি , ৪টি দেয়াল ঘড়ি, ৪টি ওভেন এবং ৪টি উন্নত মানের টাওয়াল নিয়ে যায়। যার মূল্য ২০৮০৬০/- (দুই লক্ষ আট হাজার ষাট টাকা)। এরপর হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে ঐদিন দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটের সময় উক্ত চোর সকল মালামাল একত্র করে কার্টুনে ভরে হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে নেমে যেতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে হোটেল কর্তৃপক্ষ বলেন, হোটেলের যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও সকলের অগোচরে সহজেই সে সকল মালামাল নিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে শহরের ব্যস্থতম সড়কের পাশে ও প্রশাসনিক এলাকার এতো নিকটে এতোবড়ো একটি চুরির ঘটনা বিরল।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী বলেন, ‘প্রশাসনের নাকের ডগায় এভাবে চুরি সংঘঠিত হওয়ায় আমরা বিস্মিত। খুব কাছেই এসপি সার্কেল অফিস এবং চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এর মধ্যে চুরির ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এব্যাপারে প্রশাসনের আরো স্বচেতন হওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরী।’
স্টাফ রিপোর্টার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪