আন্তর্জাতিক

ওয়ার্ডরোবে লোশন খেয়ে বেঁচে ছিলেন সিনথিয়া

‎Sunday, ‎April ‎05, ‎2015  07:02:29 PM

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

সিনথিয়া‘পরীক্ষা সামনে। তাই সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে শ্রেণিকক্ষে সহপাঠীরা পড়াশোনা করছিলাম। হঠাৎ বাইরে গুলির প্রচণ্ড শব্দ। কী হয়েছে জানতে আমরা বাইরে বের হয়ে আসি। এরপর তাঁরা আমাদের ধাওয়া করছিল। আমরা দ্রুত আমাদের ডরমেটরির দিকে দৌড়াতে থাকি। একপর্যায়ে আমরা কক্ষে ঢুকে খাটের নিচে আশ্রয় নেই। তারা বারবার আমাদের বের হয়ে আসতে বলছিল। কিন্তু আমি লুকিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নেই। সুযোগ বুঝে আমি ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ারে ঢুকে নিজেকে কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে ফেলি। এ সময় বন্দুকধারীরা আমাদের বাইরে বের হতে বলছিল।’

গত বৃহস্পতিবার জঙ্গি ইসলামপন্থী সংগঠন আল-শাবাব-এর অস্ত্রধারী জঙ্গিরা কেনিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে গারিসা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জিম্মি করে কমপক্ষে ১৪৭ জনকে হত্যা করেছে। সোমালিয়ার সীমান্তবর্তী গারিসা শহরে এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৭৯ জন। এ হামলার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া ১৯ বছরের ছাত্রী সিনথিয়া চিরোইটিস এভাবেই তাঁর বেঁচে যাওয়ার গল্প বলেন এপিকে। এ নিয়ে বিবিসি গতকাল শনিবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

১৯৯৮ সালে দেশটির রাজধানী নাইরোবিতে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার পর এটাই কেনিয়ায় সবচেয়ে বড় হত্যাযজ্ঞ। আল-কায়েদার ওই হামলায় ২১৩ জন নিহত হয়েছিল।

সিনথিয়া দুই দিনেরও বেশি সময় ওই ড্রয়ারে লুকিয়ে ছিলেন। এ সময় ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটাতে পান করেছেন ড্রয়ারে থাকা গায়ে মাখার কয়েক বোতল লোশন। তবে সেই লোশন খেতে তাঁর ভালোই লেগেছিল বলে জানান তিনি।

সিনথিয়া বলেন, এক বন্দুকধারী কক্ষে ঢুকে তাঁর রুমমেটদের বাইরে বের করে নিয়ে যায়। এরপর যারা সেখানে কোরআন পাঠ করতে পেরেছেন এবং পারেননি, তাদের আলাদা করা হয়। তাঁরা তখনো জানত না তাঁদের কপালে কী ঘটতে যাচ্ছে।

সিনথিয়া বলেন, ‘আমি শুধু ঈশ্বরকে ডাকছিলাম। শনিবার সকাল ১০টার দিকে পুলিশ যখন উদ্ধার করতে আসে আমি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। আমার মনে হচ্ছিল তাঁরা আল-শাবাবেরই সদস্য। তাই আমি তাদের পাল্টা প্রশ্ন করি, আমি কীভাবে বিশ্বাস করব যে আপনারা কেনিয়ার পুলিশ। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের একজন এসে আশ্বস্ত করলে আমি বের হয়ে আসি।’

কেনিয়া রেডক্রসের মুখপাত্র আরনোলদা শিউনদু এএফপিকে বলেন, সিনথিয়া ৫০ ঘণ্টারও বেশি সময় ওয়ার্ডরোবে লুকিয়ে ছিল। উদ্ধার করার পরপরই তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁকে দুধ খেতে দেওয়া হয়েছে।
এ হামলার ঘটনার পর সেখান থেকে এর আগে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কিত সোমালিয়ার জঙ্গি সংগঠন আল-শাবাব কেনিয়ার নাগরিকদের ‘আরেকটি রক্তগঙ্গা’ বইয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গারিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর দুদিন পর গতকাল আল-শাবাব এ হুমকি দিল।

কেনিয়ার নাগরিকদের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে আল-শাবাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তোমাদের সরকার আমাদের মুসলিম ভাইদের হত্যা ও তাদের প্রতি অত্যাচার বন্ধ না করলে এবং কেনিয়ার সব মুসলিম অঞ্চল স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুই আমাদের প্রতিশোধ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে না। ওই সময় পর্যন্ত কেনিয়ার শহরগুলো রক্তে লাল হতে থাকবে। এটা হবে দীর্ঘমেয়াদি ভয়াবহ যুদ্ধ।’

২০১১ সালে ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কেনিয়া প্রতিবেশী সোমালিয়ায় সেনা পাঠায়। আল-শাবাবের অভিযোগ, তার পর থেকে কেনিয়ার সেনারা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী সোমালি অঞ্চল এবং দক্ষিণ সোমালিয়ায় ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবর্ণনীয় নৃশংসতা’ চালাচ্ছে।

চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/2015

Share