Home / চাঁদপুর / চাঁদপুর জেলায় ২শ ৬৬টি মসজিদ ওয়াকফ এস্টেটের নিবন্ধনভূক্ত
Mosque
প্রতীকী ছবি

চাঁদপুর জেলায় ২শ ৬৬টি মসজিদ ওয়াকফ এস্টেটের নিবন্ধনভূক্ত

চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলা,৭টি পৌরসভা,৮৯টি ইউনিয়ন ও ১ হাজার ৩ শ ৬৫টি গ্রামে ২৫ লাখ মুসলমানের জন্যে ৭ হাজার ২শ ৪২টি দুনিয়ার সবচাইতে পবিত্রতম ও শান্তিময় স্থান মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদপুরের সব পৌরসভায় মসজিদের সংখ্যা ১ হাজার ২২টি। ৫ শতাধিক মসজিদ হলো-পাঞ্জেগানা। ফলে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি-কচুয়াসহ জেলায় ২শ ৬৬টি মসজিদ ওয়াকফ এস্টেটের নিবন্ধনভূক্ত। বাকীগুলো- বাংলাদেশ ওয়াকফ নিবন্ধনের এর বাহিরে। এতে সরকারি রেজিস্ট্রিকরণ টেকস ও ওয়াকফ টেকস ৫% -দুটোই মসজিদ কমিটি না দিয়ে এড়িয়ে যাচ্ছে । অথচ-একটি মসজিদের সকল প্রকার আয় তথা দান বাক্সের আয়সহ ৫% রাজস্ব পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। শুধুই মসজিদ নয়-এতিমখানা,কবরস্থান,মন্দির,গীর্জা,প্যাগোডা,মাদ্রাসা ও হেফজখানা প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়াকফ নিবন্ধনের অর্ন্তভূক্ত করতে হবে।

প্রত্যক্ষ করা গেছে- সমাজের কোনো এক ব্যাক্তি কোনো মসজিদ বা এতিমখানাকে মৌখিকভাবে কোনো জমি দান করার ঘোষণা দিলেই তা ওয়াকফ হয়ে যায় বটে। কিন্ত রাষ্ট্রীয় প্রচলিত বিধি-বিধান মতে-রেজিষ্ট্্রীকরণ করে দেয়ার পর জেলা ওয়াকফ অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফরম পুরণ করতে হবে। আর এসব সম্পাদন করার দায়িত্ব মসজিদ কমিটির । একটি মসজিদের সব দেখাশুনা ও ইমাম নিয়োগ-পাল্টানো ,আয়-ব্যয় ও হিসেব-নিকেশ করার দায়িত্ব কমিটির হলেও ওয়াকফ করার কাজটি রেজিষ্ট্্রীকরণ খরচ বহনের অজুহাতে তা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

জেলার সব মসজিদে সারাবছর ৫ ওয়াক্ত আজান ও নামাজ আদায় করা হলেও পবিত্র মাহে রমজানে ও প্রতি শুক্রবারে মুসল্লিদের সমাগম বাড়ে সবচাইতে বেশি। নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে গ্রাম ও শহরের কিছু মসজিদে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা,অত্যাধূনিক ওযু ও পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা। প্রতিটি মসজিদে রয়েছে একজন খতিব বা পেশ ইমাম ও একজন বা একাধিক মুয়াজ্জিন। এ সব মসজিদের বেশিরভাগ ইমাম বা খতিব ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও কওমি মাদরাসার আলেম বা মুফতি। ইমাম ও খতিবগণ অনেকেই দেশ বরেণ্য ও স-ুখ্যাতিসম্পন্ন বিদগ্ধ ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত আলেম হিসেবে পরিচিত।

চাঁদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ২১ জানুয়ারি ২০২৫ এর দেয়া পরিসংখ্যান মতে, চাঁদপুর- সদরে ও পৌরসভায় ১,৩১০টি, মতলব দক্ষিণে ও পৌরসভায় ৪৫৫টি, মতলব উত্তরে ও পৌরসভায় ১,০৪০টি, হাজীগঞ্জে ও পৌরসভায় ৯৭৯টি, ফরিদগঞ্জে ও পৌরসভায় ১,০৩১টি, কচুয়ায় ও পৌরসভায় ১, ১৬৭ টি,শাহরাস্তি ও পৌরসভায় ৭৭০টি এবং হাইমচরে ৪৩৩টি মসজিদ রয়েছে। ইদানিং বেশিরভাগ মসজিদই আধুনিক ও উন্নত গ্লাস ও এসএস দ্বারা জানালা,বারান্দা, মসজিদের মেজ ও মিমবার টাইলস দ্বারা সজ্জিত ,কারুকার্যখচ্চিত ও ক্যালিওগ্রাফিপূর্ণ নানা আরবি ভাষায় কোরআনের বাণী সন্নিবেশিত পাথর বা সিরামিক খন্ড ও যথাযথ বিদ্যুৎয়ায়িত। যার ফলে প্রতিটি মসজিদই অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ইবাদত-বন্দেগী করার আধুনিক সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। ফলে যে কোনো বয়সীদের নামাজ আদায় করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে থাকে।

কর্তব্যরত একজন ইমাম বলেছেন, ‘ মসজিদগুলো দৃষ্টিনন্দন হওয়ার পেছনে রয়েছে-আমাদের প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সমাজহিতৈষীদের অবদান। বিশেষ করে বর্তমানে প্রবাসীদের দানেই মসজিদগুলো দিন দিন উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে।’ অধিকাংশ মসজিদেই জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সাপ্তাহিক সম্মিলনের দিন হিসেবে জুমা দিবসের ন্যায় মর্যাদাবান দিবস আর নেই। এ দিবসটিকে ইসলামি শরিয়তের ভাষায় ‘রাইসুল আইয়াম’ বা দিবসসমূহের সর্দার নামে অভিহিত করা হয়। জুমা শব্দের অর্থ সম্মিলিত হওয়া বা একত্র হওয়া। এ দিবসে দু’রাকাত ফরজ নামাজ পড়ার জন্য ধনী-গরিব, ছোট-বড় সবাই মসজিদে একত্র হয়। তাই এ দিবসকে ‘ইয়াওমুল জুমা’ বা সম্মিলনের দিবস বলে আখ্যায়িত করা হয়। এমনকি আল কোরআনে ১১৪টি সুরার মধ্যে সুরাতুল জুমা নামে একটি সুরাও রয়েছে। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ফরজ। সমাজে শান্তি-শৃংখলা,মানুষকে সঠিক ও সুন্দর পথে চলার ক্ষেত্রে মসজিদগুলো অসামান্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

এ ছাড়াও মসজিদগুলোতে ঈদ এ মিলাদুন্নবী, শবে মেরাজ, ফাতেহ ইয়াজদাহুম, শবে বরাত , শবে কদর, দু’ ঈদের নামাজ, মহররম, এতেহকাপ, জুমায় খোদবা পূর্ব আলোচনায় সমেবেত হওয়া ব্যবস্থাকরণ , দেশের মহামারী ও বিশেষ বিশেষ দিনে ইবাদত-বন্দেগীর করার সুবর্ণ সুযোগ করে থাকে মসজিদ পরিচালনা কমিটি। প্রতিটি মসজিদেই মুসলীম উম্মাহ ও দেশ এবং জাতির উন্নতির জন্যে বিশেষভাবে দোয়ার আয়োজন করে থাকে। বর্তমানে তাবলীগের সকল প্রকার দ¦ীনি দাওয়াত ও প্রচার করার কেন্দ্রবিন্দু হলো মসজিদগুল্ ো।

বাংলাদেশ ওয়াকফ , চাঁদপুরের সম্প্রতি বদলী হওয়া অডিটর মো.আলাউদ্দিন জানিয়েছেন,‘ জেলার সবগুলো মিলে অল্পসংখ্যক মসজিদ,মাদ্রাসা, এতিমখানা, কবরস্থান, হেফজখানা, মন্দির ও গির্জা ইত্যাদি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওয়াকফ নিবন্ধন রয়েছে। অনেক জুমা‘মসজিদের জমিরই সরকারি হিসেবে ‘ওয়াকফ’ নিবন্ধন নেই বা হয়নি। ‘ওয়াকফ’আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ স্থগিত করা বা আবদ্ধ করা অথবা স্থির রাখা কিংবা নিবৃত্ত রাখা। ওয়াকফ ইসলামি শরিয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা। কোনো সম্পত্তির মালিক নিজের মালিকানা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর সম্পত্তি ঘোষণা করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে জনকল্যাণ বা জনসেবার জন্যে উৎসর্গ করলে ঔ উৎসর্গ করার কাজটিকে ওয়াকফ বলা হয়। ধর্মীয় বিধি মতে, মসজিদ বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আগে বা পর মসজিদের জায়গাটুকু অবশ্যই ওয়াকফ করার বিধান রয়েছে। যদি ওই মসজিদে জুমার নামাজ চালু করা হয়,তাহলে অবশ্যই এটি করে নিতে হয়।

অন্যকোনো সম্পত্তি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্যেও ওয়াকফ করতে পারে। যাতে ভবিষ্যতে কোনো ব্যাক্তি মালিকানা দাবি করতে না পারে। চাঁদপুরের বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে মসজিদ বা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার আগে বা পর মসজিদের জায়গাটুকু ওয়াকফ করার বিধান থাকলেও অনেক জমিদাতা বা জমির মালিক তা করেনি কিংবা ওয়াকফ করা হয়েছে অথচ বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগ এর নথিভুক্ত বা নিবন্ধন করে নি।

এছাড়া জেলার একাধিক মসজিদ রয়েছে যা সরকারি ভূমি দখল করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি মসজিদ, মাদ্রাসা,এতিমখানা বা কবরস্থান পরিচালনা করার একটি কমিটি থাকলেও এসকল প্রতিষ্ঠানের জমিটুকু ওয়াকফ করে নেননি বা জমির মালিক অজ্ঞাতসারেই ওয়াকফ করে দেন নি। এতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজকে অতিমাত্রার সমাজসেবক বা সমাজহিতৈষী জাহির করে থাকেন কেউ কেউ। এ ভাবেই চলে আসছে বছরের পর বছর বা যুগের পর যুগ। এর ফলে মসজিদের জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। রাতারাতি সুরম্য ভবন উঠছে বা দোকানপাট কিংবা ফলফলাদির গাছ রোপণ করে নিজেরাই ভোগ করছেন। এনিয়ে অধিকাংশ মসজিদ কমিটিতে অন্ত:দ্বন্দ্ব বা ঝগড়া লেগে রয়েছে।

সরকারে ওয়াকফ বিভাগের কাছে এর কোনোই হিসেব বা তথ্য সংরক্ষণ নেই। বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগ এর বিধি মতে, যে কোনো ওয়াকফকৃত জমির আয় থেকে ৫% ওয়াকফ বিভাগ প্রশাসনের হিসেবে জমা দিতে হবে। বাকি ৯৫% আয় ওয়াকফকালীন সময়ে যে যে শর্ত রেজিস্ট্রি করার সময় উল্লেখ ছিলো বা থাকে সে খাতে ব্যয় করতে হবে। চাঁদপুরের যে সব মসজিদের ‘ জায়গার ওয়াকফ নিবন্ধন ’নেই কিংবা করা হয় নি সে সকল মসজিদগুলোর কমিটি ‘বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগের প্রাপ্য ৫% অর্থ ফাঁকি দিচ্ছেন বা‘বাংলাদেশ ওয়াকফ বিভাগকে বঞ্চিত করছেন। অপরদিকে রাষ্ট্রীয় আইন মতে, ওয়াকফ বিভাগকে দলিল করার ক্ষেত্রে যে সব স্ট্যাম্প বা অন্যান্য রাজস্ব প্রদেয় করার কথা তা’দিচ্ছেন না। আবার কোনো কোনো কমিটি মসজিদের জমি উদ্ধারে নানা সলাপরামর্শ বা ধ্যান-দরবার বা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অযথা কালক্ষেপণ করতে হচ্ছে। ফলে মসজিদের উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

বর্তমান চাঁদপুর ওয়াকফ এস্টেস্ট এর পরিদর্শক মো.সাব্বির আহমেদ গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে বলেন, ‘ বর্তমানে চাঁদপুরের ওয়াকফ এস্টেটের অর্ন্তভ’ক্ত মসজিদের সংখ্যা ২৬৬ টি।২০২৩- ২০২৪ সালে ৫% হারে আদায় করা হয়েছে ৪১ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ বছরে আদায় হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। এটি এখন চলমান রয়েছে। চাঁদপুরের অনেক মসজিদ রয়েছে-ওয়াকফ এস্টেটের নিবন্ধনদের বাহিরে। অনেক কমিটি মসজিদের আয়-ব্যয় দেখান না। ফলে মসজিদের আয় ও ন্যুনতম দান বাক্সের আয় থেকে ওয়াকফ এস্টেটের সরকারি হার ৫%ও প্রদান করছেন না।’

তিনি আরো বলেন,‘আমি প্রতিনিয়তই চেষ্ঠা করছি ৫% রেন্ট আদায় করার। খতিব বা ইমামগণ মসজিদে চাকুরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আয়ের-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ করে ৫% রেন্ট পরিশোধ করার দায়িত্ব মসজিদ কমিটির ; খতিব বা ইমামেরে নয় ।’

হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের মোতওয়াল্লী ও সমাজবিজ্ঞানী প্রিন্স শাকিল আহমেদ ২৬ জানুয়ারি মুঠোফোনে বলেন ,‘জেলায় যতগুলো ঐতিহাসিক ও প্রসিদ্ধ মসজিদ রয়েছে-তম্মধ্যে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ অন্যতম। তাই ইফা ও বাংলাদেশ ওয়াকফ এস্টেটের সকল নীতিমালা অনুসরণ করে জেলার এ ঐতিহ্যবাহী হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই শতাব্দীকালের সেরা এ মসজিদ প্রশাসন সকল আয়ের উৎসের ৫% হারে পরিশোধ করে আসছে।’ জেলার সবচাইতে বড় মসজিদ হলো-হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। যা জেলাসহ দেশের মধ্যে এটি ইতিহাস-ঐতিহ্যে ইতোমধ্যেই সুপরিচিতি লাভ করেছে। চাঁদপুরের সব চাইতে পুরনো মসজিদও হচ্ছে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। হাজী আহমদ আলী পাটোয়ারী (র.)হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ওয়াকীফ, প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মোতওয়াল্লী।’

mosque-e

চাঁদপুর ইফার সাবেক উপ-পরিচালক মো.খলিলুর রহমান এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘ মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের মাধ্যমে এ শিশু ও গণশিক্ষালয়ে শিশুরা নৈতিক শিক্ষা পাচ্ছে ও শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শিশু ঝরে পড়ারোধ হচ্ছে। পড়াশুনায় আগ্রহ বাড়াচ্ছে ও শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষার সুযোগ লাভ করছে।’ চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের উপ-নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব রহমান বলেন,‘দেশব্যাপি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রমের আওতায় জেলার ৮ জেলাসদরসহ উপজেলায় ৮টি নির্মিত হয়েছে মডেল মসজিদ।’

এদিকে দেশের একটি জাতীয় পত্রিকায় জানা গেছে – সরকার দেশের সাড়ে ৩ লাখ মসজিদের ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিনকে সম্মানী ভাতা দেবার কথা ভাবছে অন্তর্র্বতী সরকার। তাঁদের পাশাপাশি মসজিদের খাদেমদেরও দেয়া হবে এ ভাতা। তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতার পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় এ ভাতা পাবেন। দেশের মসজিদের ১০ % মসজিদে প্রথম দফায় এ কর্মসূচি চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি মসজিদগুলোকেও এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। প্রাথমিকভাবে ইমাম ৫ হাজার, মুয়াজ্জিন ৪ হাজার এবং খাদেম ৩ হাজার টাকা করে পারেন।

সারা দেশের মসজিদগুলোর তালিকা করতে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। প্রতিষ্ঠানটির সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটি গঠনের অফিস আদেশে বলা হয়, মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬ যুগোপযোগী করা এবং গত বছরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার থেকে সম্মানী প্রদান করা হবে।

জানতে চাইলে কমিটির প্রধান ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সারা দেশে অন্তত সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে ১৭ লাখের বেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন রয়েছেন। এর বাইরে শহরের মসজিদগুলোতে খাদেম রয়েছেন। সরকার পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম দফায় দেশের ১০ শতাংশ মসজিদে এ কর্মসূচি চালু করবে। পরে ধাপে ধাপে সব মসজিদ এর আওতায় আসবে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি মসজিদকে ১২ হাজার করে টাকা দেয়া হবে।’ একইভাবে মন্দিরের পুরোহিত ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও এ ভাতার আওতায় আসবেন বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে প্রায় ১৭ লাখ ইমাম-মুয়াজ্জিন কর্মরত। একই সঙ্গে ৫৬৪টি মডেল মসজিদের রাজস্ব খাতে পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পদ সৃজনের পর তাঁদের বেতন-ভাতা রাজস্ব খাতভুক্ত বেতন স্কেল থেকে প্রদান করা হবে।

বর্তমানে সারা দেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে ৪৯ হাজার ৭ শ ১৯ জন ইমাম ও মুয়াজ্জিন কর্মরত। তাঁদের প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা হারে সম্মানী প্রদান করা হয়। জেলার বিখ্যাত মসজিদগুলোর মধ্যে রয়েছে- হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ, অলিপুর শাহ আলমগীরী মসজিদ,আলীগঞ্জ মাদ্দাখা মসজিদ, চাঁদপুর পৌরসভায় বাইতুল আমিন মসজিদ,বেগম মসজিদ,চিশতিয়া মসজিদ,পুরাণ বাজার জামে মসজিদ, চেয়ারম্যান ঘাট বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ,কালেক্ট্ররেট জামে মসজিদ,বাসস্ট্যান্ড গোরে-এ গরীবা জামে মসজিদ, বাবুরহাট জামে মসজিদ, আবদুল করীম পাটওয়ারী জামে মসজিদ, বড়স্টেশন জামে মসজিদ,দাসাদী জামে মসজিদ ও কল্যান্দী জামে মসজিদ। ইফার দেয়া তথ্য মতে, জেলার ১ হাজার ২শ ৩৬টি মসজিদে রয়েছে শিশু ও গণশিক্ষা কেন্দ্র ও ২৫০ টি নূরানী কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র। মসজিদের ইমামরা সেখানে দ্বীনি শিক্ষাসহ শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত ও নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন।

আবদুল গনি
২৮ জানুয়ারি ২০২৫
এজি