প্রিয় জালাল স্যার মারা গেছেন। সকালে ভাতিজীকে স্কুলে দিতে গিয়ে শুনতে পেলাম আমাদের প্রিয় জালাল আহমেদ স্যার স্ট্রোক করেছেন।
স্যারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার ন্যাশনাল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কথাটা শোনা মাত্রই বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো। মনটা কেঁদে উঠলো প্রিয় মানুষটার জন্য।
স্যার আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন এটা সত্য। তবে এর চেয়ে বড় সত্যটা হলো, স্যার তার কর্মস্থল তথা অত্র এলাকার সকলের প্রিয়ভাজন ও পরম শ্রদ্ধয় ছিলেন। তাঁর সময়ে অত্র স্কুলে পড়–য়া এমন কোনো শিক্ষার্থী নেই যার পিঠে স্যারের শাসন স্পর্স করেনি।
পাশাপাশি এটাও সত্য যে উল্লেখতিদের মধ্যে এমন কোনো শিক্ষার্থী নেই যার মাথায় স্যার স্নেহসিক্ত হাতখানি রাখেননি, আদর করেননি, অথবা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কারো কোনো উপকার করেননি। সদা হাস্যজ্জল এই মানুষটা আমাদের মাঝে আর বেঁচে নেই! কথাটা ভাবতে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনই কষ্ট হচ্ছে স্যার আমাদের মাঝে আর ফিরবেন না এটা মেনে নিতে।
দেখা হলেই যে মানুষটা পরম স্নেহভরে বলতেন ‘কিরে কেমন আছত, তোর খবর কি ক, তুই তো এহন সাংবাদিক, আমারে নিয়া কিছু লেখবি না’। আজ যখন প্রথম বারের মতো স্যারকে নিয়ে লিখছি তখন তিনি আর পৃথিবীতে নেই। স্যার আজ থেকে স্কুলে পা রাখবেন না, শ্রেণীকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠ দিবনে না, সহকর্মীদের সাথে কথা বলবেন না- হাসবেন না; এর সবকিছুই সত্য।
কারণ পৃথিবীর একমাত্র সত্য ‘মৃত্যুকে তিনি আলিঙ্গন করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সুবিশাল মহাকাশ থেকে কোনো নক্ষত্র নিভে গেলে ঐ মহাকাশ তা মনে রাখে কি না আমরা যানি না, নিভে যাওয়া নক্ষত্রের মত মরে যাওয়া কোনো মানুষকে কেউ মনে রাখে কি না? যদি রাখে তবে তা কতদিন তার হিসেব ও আমার জানা নেই। তবে কিছু মৃত্যু আমাদের মনে যে দাগ কেটে যায়, সে ক্ষত শুকাতে অনেকটা সময় লাগে।
তার অপূর্ণতা কখনো কখনো পূরণ হয় না, হয়তো বা হয়। তবুও প্রতিটা মানুষকে একদিন মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতে হয়/ হবেই এটাই পৃথিবীর নিয়ম এবং মহান মালিকের সাথে এটাই আমাদের কমিটমেন্ট। স্যার চলে গেছেন, তা মেনে নিতে আমারও কষ্ট হচ্ছে। তবুও ওপারে তিনি ভালো আর শান্তিতে থাকুক- মহান আল্লাহর কাছে এটাই আমাদের প্রর্থনা। পরিশেষে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক প্রেসিডেন্ট মৃত্যুর সময় তার স্বজনদের বলে গেছেন, ‘আহা, কান্না করো না। ভালো মানুষ হও, দেখা হবে স্বর্গে’।
স্যারের সাথে আমাদের জান্নাতে দেখা হোক, আমরাও স্যারের মতো সত্যিকারের মানুষ হই, এটাই আমাদের কাম্য।
প্রসঙ্গত: জালাল আহমেদ ১৯৯৪ সনে চাঁদপুর পুরাণবাজার এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়রে ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। ২৪ মার্চ ২০১৮ শনিবার সকাল ৭টায় তিনি হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঢাকা ন্যাশনাল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫২ বছর।
লেখক
আশিক বিন রহিম
সাহিত্য ও সংবাদকর্মী
প্রক্তন ছাত্র: পুরাণবাজার এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।