সারাদেশের কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামে স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্যা প্রাদুর্ভাবে মারাগেছে অন্তত ২০ জন।
চাঁদপুরে বর্ষা এলেই গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ও জলাশয়ে শাপলা তোলা, গরুর ঘাস কাটা, এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি যাওয়ার কাজে এক সময় ব্যবহৃত হতো তালের নৌকা। গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সে ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজে যোগ দিচ্ছেন নৌকার কারিগররাও।
সারা দেশেই তালের নৌকার কম-বেশি ব্যবহার প্রচলন ছিলো। এর মধ্যে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় কদর ছিলো বেশি। হাজীগঞ্জ বাজারে ছোট সাইজের নৌকার হাটও বসতো।
হাজীগঞ্জের দেবপুর এলাকায় তালের নৌকা তৈরি হতো বেশি। সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, আগে ২০ থেকে ২৫ জন কারিগর কাজ করলেও তালের নৌকার চাহিদা কমে যাওয়ায় এখন সে সংখ্যা মাত্র ৮-১০ জনে নেমে এসেছে।
কারিগর লোকমান কবিরাজ বলেন, ‘আগে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে দুই থেকে আড়াই হাজার তালের নৌকা বিক্রি হয়েছে। এখন ২০০টি নৌকাও বিক্রি হচ্ছে না। এর বড় কারণ হচ্ছে, গ্রাম-গঞ্জে অনেক রাস্তা তৈরি হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরাও এ পেশায় ছিলেন। আমরা তাদের কাছ থেকে শিখে কাজ করছি। তবে এখন তালের নৌকার কদর কমে যাচ্ছে। কাজও কমে যাওয়ায় আমরাও পাশাপাশি দৈনিক হাজিরায় কৃষিসহ অন্য কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছি’।
উপজেলার চতন্তর হাওলাদার বাড়ির হাশু হাওলাদার জানান, তারা প্রতিটি তালগাছ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় কিনে আনেন। এর মধ্যে নিচের অংশ দিয়ে দু’টি তালের নৌকা তৈরি হয়। আকার-আকৃতি ভেদে প্রতিটি নৌকা বিক্রি করেন ৪ থেকে ৮ হাজার টাকায়। পুরনো তালগাছ দিয়ে তৈরি নৌকা বেশি টেকসই হয়, কমপক্ষে ২০ বছর ব্যবহার করা যায়।
দেবপুর চরবাকিলা গ্রামের কিশোর জাবেদ জানান, আগে তাদের বাড়ির অনেকেই তালের নৌকা ব্যবহার করতেন, এখন আর করেন না। তবে তিনি এখনও প্রতিদিন গরুর ঘাস কাটার কাজে এ নৌকা ব্যবহার করেন। একটি নৌকায় ২/৩ জন বসতে পারেন। তবে বেশি নড়া-চড়া করলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পর্যায়ক্রমে তালের নৌকা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন নৌকা বিক্রেতা সুরুজ বেপারি। তিনি বলেন, ‘এখন ক্রেতারা আসছেন কম। তবে বন্যা হলে আবার বিক্রি বেড়ে যায়। আমাদের বেশিরভাগ তালের নৌকা নোয়াখালী জেলার লোকজন কেনেন। স্থানীয়ভাবে হাজীগঞ্জ উপজেলায় বেশি বিক্রি হয়’।
‘তালের নৌকার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে কেউ এগিয়ে আসেন না। আমরা নিজেদের উদ্যোগেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি’।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ ০৮ : ২৫ পিএম, ১৪ আগস্ট ২০১৭, সোমবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur