চাঁদপুর দেশের অন্যত্তম কৃষিভিত্তিক অঞ্চল। চাঁদপুরের জরবায়ূ কৃষি উৎপাদনে সহায়ক। মেঘনা, ডাকাতিয়া, মেঘনা-ধনাগোদা ও পদ্মানদী বিধৌত এ চাঁদপুর। চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। জেলার ৪ টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন নদীভাঙ্গনগ্রস্থ,নদীবিধৌত ও নদীসিকস্তি। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা নামে দু’টি সেচ প্রকল্প রয়েছে। চাঁদপুর জেলার চারটি উপজেলা যথা-চাঁদপুর সদর, হাইমচর,ফরিদগঞ্জ, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ২৩ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে এ দুটোতে।
চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চাঁদপুর জেলায় ৬৩ হাজার ৮শ ৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪ শ ৭৫ মে.টন চাল।
১৫ নভেম্বর চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর,খামার বাড়ি চাঁদপুরের দেয়া তথ্য মতে জানা গেছে ।
প্রাপ্ত তথ্য মতে,এবার এককভাবে উন্নত ফলনশীল ৫০ হাজার ৩শ ৮৪ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪ শ ১০ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬শ ১২ শ’ মে.টন। হাইব্রিড ১৩ হাজার ৯১ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪শ ৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১ হাজার ১৩৪ মে.টন এবং স্থানীয় ভাবে ২ হাজার ৫শ ১৮ হেক্টর চাষাবাদ এবং হেক্টর প্রতি ৪ শ ৯৫ মে.টনে উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার মে.টন ।
চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চলতি ২০২৩-২৪ বছরের রবি মৌসুমে ৭শ’ মে. টন বোরো ও ১শ ৩৪ কেজি নানা জাতের শাক-সবজির বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা সংখ্যায় ১০ কেজি পরিমাপের বস্তা বিক্রি হচ্ছে । জেলার সব উপজেলার ১৩৬ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব বীজ স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারে ইতোমধ্যেই পৌঁছানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে ।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামার বাড়ি চাঁদপুরের বীজ সরবরাহ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো.খায়রুল বাসার জানান, ব্রি-ধানের বীজ বাংলা জিরা এফআইআরএইচ বীজ,সকল প্রকার শাখ-সবজির বীজ, সব ধানের বীজ মধ্যে ব্রি আর ১৬, ২৮, ২৯, ৫৫, ৮৪, ৫৮, ৯২, ৯৬, ৮৯ ও বাংলা জিরা সরকারিভাবে বিক্রির এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্ব স্ব উপজেলার হাট-বাজারের অনুমোদিত ডিলারগণ এ বীজ কৃষকগণের নিকট বিক্রি করবে বলে চাঁদপুর বীজ বিতরণ কেন্দ্র জানান।
কৃষিঋণ : জেলার খাদ্যের প্রয়োজন ৪ লাখ ২২ হাজার ৯শ ৫৫ মে.টন। চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৭২ হাজার মে. টন চাল নির্ধারণ করা হয়েছে বলে চাঁদপুর খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। হাইব্রিড,স্থানীয় ও উন্নত ফলনশীল এ ৩ জাতের ইরি-বোরোর চাষাবাদ করে থাকে চাঁদপুরের কৃষকরা। কম-বেশি সব উপজেলাই ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়ে থাকে। চাঁদপুর সেচ ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প,মতলব দক্ষিণ ও হাজীগঞ্জে ব্যাপক ইরি-বোরোর চাষাবাদ হয়।
প্রসঙ্গত , ২৭ লাখ জনসংখ্যা অধ্যূষিত চাঁদপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবি। ধান,গম,আলু, সরিষা পাট,সয়াবিন, আখ, অভিন্ন শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। কৃষি পরিবেশ অঞ্চল ১০, ১৬,১৭,১৯ এর আওতাভুক্ত। জেলার বর্তমান ফসলের নিবিরত ১৯১%। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্প জেলার ৪ উপজেলা সদর,ফরিদগঞ্জ,মতলব উত্তর, হাইমচরে ২৩ হাজার ৩শ’ ৯০ হেক্টর জমি রয়েছে। বিত্রডিসির জেলা বীজ সরবরাহ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক (বীজ) বলেন,‘ চাঁদপুরে বরাদ্দের বীজ ইতোমধ্যেই পৌঁছা শুরু হয়েছে। ডিলারদের মধ্যে বিতরণ চলছে।
প্রতিটি প্যাকেটে নির্ধারিত মূল্য সংযোজন করা হয়েছে। ক্রয়ের সময় কৃষকবন্ধুদের তা দেখে নিতে তিনি অনুরোধ জানান্। কৃষক সরসরি বীজ কেন্দ্র থেকে সরকারি ভাবে বেঁধে দেয়া মুল্যে ক্রয় করতে পারবে।’ জেলার খাদ্যের প্রয়োজন গড়ে ৪ লাখ ১২ হাজার মে.টন। বিগত দিনে খাদ্য ঘাটতি ছিলো প্রকট। উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি চালুকরণ ও আধুনিকতার আবাদের মাধ্যমে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ মে. টন। খাদ্য উৎপাদনে সরকার বিদ্যুৎ ও সার ভর্তূর্কি এবং ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে কৃষিঋণ বিতরণ করছে।
চাঁদপুররে ৮ উপজলোয় ৪ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ২০২৩-২৪ র্অথবছরে ৩৭৫ শ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ঠ ব্যাংকের এক তথ্যে জানা গেছে। এ ছাড়াও সরকার প্রতিবছরের মত এবছরও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় কম-বেশি হারে সার,বীজ ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তূকি রয়েছে সেচ চাষীদের জন্যে ২০ %।
মেঘনার পশ্চিমতীরে রয়েছে ১১টি বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল ও বেশ কটি এলাকা। এ এলাকার প্রায় ৩ লাখ অধিবাসী সরাসরি কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত। ধান,গম,আলু,পাট,আখ,ভূূট্টা,পেঁয়াজ,রসুন,তিল, মুগ-মুসারি,মিষ্টি আলু,সোয়াবিন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাঁদপুর জেলার প্রধান ফসল। চাঁদপুরে ১২টি হিমাগার ও ১টি বীজভান্ডার রয়েছে। যাতে ৬০ হাজার মে.টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাকি আলু সংরক্ষণে আলুচাষীদের কৃত্রিম প্রযুক্তি দেয় কৃষিবিভাগ। চাঁদপুরের সব উপজেলাতে কম-বেশি হারে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।
নৌ-পথ,সড়কপথ ও রেলপথ থাকায় যে কোনো কৃষিপণ্য চাঁদপুর থেকে যে কোনো জেলায় আমদানি-রফতানি করা সহজ। মতলব ব্রিজ,চাঁদপুর-রায়পুর ব্রিজ,চাঁদপুর পুরাণবাজার ব্রিজ ও হাজীগঞ্জ–রামগঞ্জ ব্রিজ,ফরিদগঞ্জ,এমএ ওয়াদুদ ব্রিজ ইত্যাদি ব্রিজগুলো যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে।সড়ক পথের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সকল উপজেলায় রয়েছে আধুনিক খাদ্যগুদাম।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কারিগরি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন,‘এবারও ইরি-বোরো মেীসুমে পূর্বেরমতই কৃষকগণ সেচে পানি সরবরাহ করতে পারবে। বর্তমানে বিদ্যুৎতের কোনোই সমস্যাা নেই। এ ছাড়া সেচে সংযোগকৃত ট্রান্সফার বিকল হরে বা নস্ট হলে কিংবা লাগাতে বিদ্যুৎ বিভাগই নিজ দায়িত্বে কাজ করবে। কৃষকদের কোনো টাকা দেয়া লাগবে না। মূল বিল থেকে ২০% ভর্তূকির ব্যাপারে নতুন চিন্তা-ভাবনা করছে।
দেশের খাদ্য বিভাগের গবেষণালদ্ধ জ্ঞান ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ,সরকারের প্রদত্ত কৃষির উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ,সেচ সুবিধা, সার ও বিদ্যুৎ ভর্তূকি,উন্নতমানের বীজ সরবরাহ,আধুনিক কৃষি সাজ-সরঞ্জামাদি সরবরাহ ও নগদ প্রণোদনার মাধ্যমে দিন দিন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
বর্তমানে চাঁদপুরের কৃষক ও কৃষক পরিবারও নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে খুবই আগ্রহী। জলবায়ূ পরিবর্তনে ফলে তাদের যথাসময়ে ও সঠিকভাবে প্রদর্শিত পথ দেখাতে পারলে খাদ্য ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম হতে পারবে। প্রতি বছর গড়ে উৎপন্ন হয়ে থাকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ মে.টন। এক সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রকট। চাঁদপুর জেলাকে ২৭৪ টি কৃষিব্লকে ভাগ করে সকল প্রকার প্রযুক্তি উপজেলাভিক্তিক প্রদান করা হয়ে থাকে। ফলে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ৪ লাখ ২৮ হাজার ৩শ ২২ মে.টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলার কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে আমরা আশাবাদী। কৃষকরা বর্তমানে লাঙ্গলের পরিবর্তে ট্রাক্টর,হোচার পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত স্যালো বা ডিপ নলকূপা দিয়ে পানি সেচ,গোবরের সারের পরিবর্তে বিভিন্ন প্রকার উন্নত রাসায়নিক সার ব্যবহার,বোনার পরিবর্তে সারিবদ্ধ ভাবে ধান রোপণ,উন্নত বীজ,পরিমিত কীটনাশকের ব্যবহার,নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ইরি-বোরোর বাম্পর ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষিবিদরা জানান। এবার কৃষকদের বিভিন্ন প্রকার বীজ ও সার প্রণোদনা সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়েছে ।
চাঁদপুর জেলা একটি নদীবিধৌত কৃষি ভিক্তিক অঞ্চল বিধায় কৃষকরা সময়মত চাষাবাদ,বীজ রোপণ বা বীজবপন করে সঠিক পরিচর্যায় পারদর্শী।
আবদুল গনি,
২৩ নভেম্বর ২০২৩
এজি