চাঁদপুরে হাজীগঞ্জে ভুয়া এসিল্যান্ডের আতঙ্কে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি এসিল্যান্ড পরিচয়ে বেশ মুড নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে মুঠোফোনে টাকা দাবি করেন কথিত এক ব্যক্তি। কিছুদিন পূর্বে উপজেলার সুহিলপুর বাজারে এবং গত শুক্রবার হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারে এই ভুয়া এসিল্যান্ড তথা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাকিলার ঘটনাটি নিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
জনমহলে প্রশ্ন উঠে, হাজীগঞ্জে এসিল্যান্ড পরিচয় দেয়া এই ব্যক্তিটি কে? যদিও তাকে এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। জানা যায়, হাজীগঞ্জে বর্তমানে কর্মরত এসিল্যান্ড একজন নারী। আর কথিত এসিল্যান্ড পরিচয়দানকারী ব্যক্তিটি পুরুষ।
এ ব্যাপারে বাকিলা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বশির উল্যাহ বলেন, গত শুক্রবার সকালে এসিল্যান্ড অফিস থেকে বলছি বলে এক ব্যক্তি আমাকে কল দেন। সে ব্যক্তি বলে, আপনার ওয়ার্ডে কয়টা মিষ্টির দোকান রয়েছে তাদের ফোন নম্বরসহ নাম দেন। পরে বললাম এই মুহূর্তে কারো নম্বর আমার কাছে নেই। সে বললো, তাহলে একজন গ্রাম পুলিশের নম্বর দেন। তখন আমি মোহনের নম্বর দিই।
বাকিলা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ মোহন দাস জানান, গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বাকিলা গ্রামের ইউপি সদস্য আঃ বশির তার ছেলের ফোন নম্বরে আমাকে কল করে জানান, একজন এসিল্যান্ড বাকিলা বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। এজন্যে ওই এসিল্যান্ডকে সহযোগিতা করতে হবে। এর পরপর আমার মুঠোফোনে একজন কল করে এসিল্যান্ড পরিচয় দেয়। এরপর এ ব্যক্তি আমাকে জানায় বাকিলা বাজারে বড় বড় মিষ্টির দোকান আর বেকারিগুলোতে গিয়ে তাদের মালিকের সাথে কথা বলিয়ে দিতে।
মোহন দাস আরো জানান, এ সময় আমি ওই এসিল্যান্ডকে বলি, স্যার এটা পারবো না। কারণ পরে ব্যবসায়ীরা আমার সাথে ঝামেলা করবে। তখন এসিল্যান্ড পরিচয় দেয়া ব্যক্তিটি আমাকে ফোনে বলে, চাকরি করবা কি করবা না। তখন আমি চাকুরি হারাবার ভয়ে বাজারের ঢাকা হোটেল, তাজ হোটেল, বেবিলন বেকারী ও চিটাগাং বেকারীর মালিকের সাথে ওই এসিল্যান্ডকে ফোনে কথা বলিয়ে দিই।
ঢাকা হোটেলের স্বত্বাধিকারী কফিল উদ্দিন কফু জানান, ফোনে কথিত ওই এসিল্যান্ড বেশ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে কথা বলা শুরু করে। এরপরে সে বলে কিছুক্ষণ পর আমরা র্যাব নিয়ে আপনাদের বাজারে অভিযানে আসছি। অভিযান চলাকালে আপনার হোটেলের নাম কাটিয়ে দেবো। এজন্যে আপনি ৪০ হাজার টাকা পাঠান। তখন আমি বলেছি এক পয়সা দেবার মতো আমার ক্ষমতা নেই। বলেই আমি ফোনটি কেটে দেই। তবে নম্বরটি আমি রেখে দিয়েছি।
তাজ হোটেলের পরিচালক নাসির জানান, এসিল্যান্ড পরিচয় দেয়া ব্যক্তি ওইদিন আমার আব্বার নম্বরে কল দিয়ে বেশ ভাব-সাব দেখিয়ে কথা বলা শুরু করে। প্রথম দিকে সে বেশ গরম হয়ে কথা বলে। আব্বা যখন বললো হাজীগঞ্জের এসিল্যান্ড তো নারী, আপনি কোন এসিল্যান্ড? এ কথা বলার পরে কল কেটে দেয় সে।
এ বিষয়ে বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী বলেন, আমার কাছে ভুক্তভোগী এক ব্যবসায়ী জানানোর পর ওই নম্বরে আমি কল দিই। প্রথমবার রিং হলেও পরেরবার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জের এসিল্যান্ড তথা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কানিজ ফাতেমা জানান, প্রথমত কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হলে পুলিশের টিম থাকবে। আর যে টাকা জরিমানা করা হবে তার রিসিট দেয়া হবে। তাই এ বিষয়ে ব্যাবসায়ীদেরকে সচেতন হতে হবে। সতেচন না হলে তারা প্রতারিত হবে।
এ দিকে ব্যবসায়ীদের কাছে এসিল্যান্ড পরিচয় দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টাকারী ব্যক্তিটিকে এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করার জন্যে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
হাজীগঞ্জ করেসপন্ডেট,২৪ মার্চ ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur