‘মানুষের অসাধ্য বলতে কিছু নেই। সত্যের মৃত্যু নেই। কপালে যদি লেখা থাকে একবার, দেখা হবে বার বার।’ তেমনি এক ঘটনায় চাঁদপুরের কচুয়ায় এক বিরল ঘটনায় সকলকে আবেগ আপ্লুত করে তুলেছে।
জন্মের পর থেকে ছেলেটি ২৫ বছর তার জন্মদাতাকে দেখেনি। অনেক খুঁজেছে, অনেক কেঁদেছে। পথহারা পথিকের ন্যায় জীবন চলেছে আঁকাবাঁকা পথে। তবুও তার লক্ষ্য একটাই জন্মদাতার সন্ধান খুঁজে বের করা।
কিন্ত দীর্ঘ ২৫ বছরে তা সম্ভব হয়নি। অসম্ভব এই কাজটি সম্ভব করেছে, চাঁদপুর পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার পিপিএমের আন্তরিক সহযোগিতায়।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের দিকে কচুয়া থানায় কোর্ট পুলিশ হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় আব্দুল ওয়াদুদ নামের এক পুলিশ সদস্য নিজের ঠিকানা গোপন রেখে কচুয়া পৌরসভার করইশ গ্রামের অধিবাসী সিরাজ মিয়ার মেয়ে খোশনেয়ারা বেগমকে বিয়ে করেন।
তাদের দাম্পত্য জীবন শুরুর ৫/৬ মাস পর আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ওই সময় পুলিশ সদস্য আব্দুর ওয়াদুদের বদলি জনিত কারণে কিছু দিন যোগাযোগ থাকলেও পরবর্তীতে খোশনেয়ারা বেগমের সাথে তার যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
এরই মাঝে তাদের গৃহে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান, তার নাম রাখা হয় মোঃ সুমন মিয়া, যার বর্তমান বয়স ২৫এর উপরে। ছেলেটির জন্মের পর তার বাবা কাছে না থাকায় তার মামার বাড়িতে মায়ের সাথেই সে বেড়ে ওঠে।
সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে, অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে, ব্যাপক অনুসন্ধান পূর্বক বাবা আব্দুল ওয়াদুদের মূল ঠিকানা খুঁজে পায় সুমন মিয়া।
গত মার্চ মাসে কচুয়া থানার মাসিক ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে দর্শক বক্তব্য পর্বে যুবক সুমন মিয়া দাঁড়িয়ে পুলিশ সুপারের কাছে এক মিনিট বক্তব্য দেয়ার দাবি জানান।
বক্তব্যে সুমন মিয়া পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের কাছে তার পিতার সন্ধানের আকুতি করলে কোন সালে তার পিতা কচুয়া থানায় কর্মরত ছিল তা জানতে চায় পুলিশ সুপার।
পরে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার ১৯৮৭ সালে কচুয়া থানায় কর্মরত আব্দুল ওয়াদুদের ঠিকানা সূত্রে নেত্রকোনার সদর উপজেলার ১১নং কেয়ারঘাটি ইউনিয়নের আগুনকাঠি গ্রাম হিসেবে ঠিকানা খুঁজে পায়।
পুলিশ সুপার দেয়া তথ্য ও আন্তরিক সহযোগিতায় গত ২০ এপ্রিল সুমন মিয়া তার পিতার ভিটে মাটিতে পৌঁছে যায় অনুসন্ধান টিম নিয়ে।
যে টিমের নেতৃত্বে ছিলেন কচুয়া প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি, সিনিয়র সাংবাদিক মোঃ আতাউল করিম, কচুয়া পৌরসভার অফিস সহকারী নাসির আলম নসু ও মানবাধিকার কর্মী আবু বকর মিয়া।
অনুসন্ধানী টিম নেত্রকোনার সেই পল্লী এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সুমনের একমাত্র চাচার উপস্থিতিতে আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া সুমনকে পুত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং বুকে জড়িয়ে নেয়।
এদিকে কচুয়ায় নানার বাড়িতে বড় হওয়া সুমন মিয়া দীর্ঘ ২৫ বছর পর তার জন্ম দাতা বাবাকে ফিরে পাওয়ায় মহান আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও চাঁদপুরের সুযোগ্য পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রতিবেদক- জিসান আহমেদ নান্নু
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২: ০০ এএম, ২৪ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ