নারী

বিয়ে যখন ব্যবসা !

শারমীন ইসলাম নীলা বিয়ে করেন ইমরান শেখকে। ৫ লাখ টাকার কাবিননামায় এ বিয়ে সম্পন্ন হয়।

বিয়ের পর পরই কাবিননামার টাকা দাবি করে নীলা। টাকা না দেওয়ায় যৌতুক ও দেনমোহর টাকা আদায়ের মামলা করে নীলা। ইমরান পরে জানতে পারেন, তার স্ত্রী নীলা তার আগে আরও সাতটি বিয়ে করেছেন।

ভুক্তভোগী ইমরান বলেন, ‘আমাকে বিয়ে করার আগে সুমন নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করে তার কাবিননামায় সে নিজেকে কুমারী উল্লেখ করে। ওয়াদুত নামে আরেক ব্যক্তিকে বিয়ে করে সে নিজেকে কুমারী দাবি করে। আমার কাছে বিয়ের রাতে কাবিনের টাকা দাবি করে এবং পরক্ষণে আরও ৫ লাখ টাকা দাবি করে সে।

টাকা না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে যৌতুকের মামলা করে। শুধু যৌতুক নয়, ঢাকার সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতে দেনমোহর ও খোরপোষ আদায়ের মামলা করে। আমাকে নাজেহাল করে ভয়ভীতি দেখায়।’

জানা গেছে, প্রত্যেক কাবিননামায় নীলা কখনো নিজের বাবা হিসেবে শাহআলম আবার কখনো ফিরোজ মিয়া উল্লেখ করেছে। নীলা নিজেকে কখনো শারমিন আবার কখনো শাহরিন ইসলাম নীলা হিসেবে আবির্ভাব ঘটিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। সে কখনো নিজেকে পিরোজপুরের মেয়ে কখনো নারায়ণগঞ্জের মেয়ে উল্লেখ করে।

আবুল হোসেনের ছেলে সুমনকে নীলা প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে। বিয়ের রাতে স্বামীর কাছে কাবিনের টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় ভয়ভীতি দেখায়। পরে তার ভয়ে সুমন মিরপুর এলাকা ছেড়ে বিদেশ চলে যায়।

পরে নীলা তার শাশুড়ি রহিমার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক ও কাবিনের ৩ লাখ টাকা দাবি করায় তার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা হয়।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সৌদি প্রবাসী কাজী হারুন সাগরের সঙ্গে বিয়ে হয় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকার এমির। ফেসবুকের মাধ্যমে এমির সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ছেলে সৌদি প্রবাসী কাজী হারুন সাগরের পরিচয় হয়।

পরে মোবাইলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিয়ের নাটক সাজিয়ে দীর্ঘ চার বছরে সৌদি আরব থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে সাগরের কাছ থেকে ২৬ লাখ টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয় এমি ও তার মা-বাবা। পরে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এমি ও তার বাবা-মাকে গ্রেফতার করা হয়।

বিয়েকে ব্যবসা বানিয়ে এভাবেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বিয়ে ব্যবসায়ী নারীরা। ধনাঢ্য, চাকরিজীবী বা সুন্দর যুবক দেখলে প্রেমের ফাঁদে ফেলছে। বিয়েও করছে। কিন্তু সংসার ক্ষণস্থায়ী। কারণ এই প্রতারক চক্রের নারীরা বিয়ে করে কাবিননামায় উল্লিখিত টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে উল্টো যৌতুক ও দেনমোহর আদায়ের নামে মামলা করছে। এমনকি বিয়ের পরপরই এরা বিভিন্ন অলংকার, দামি পোশাক, নিজ নামে ব্যাংকে টাকা, স্বামীকে জিম্মিসহ নানান ফাঁদ পেতে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেও তেমন লাভবান হচ্ছে না। কারণ এসব বিয়ে ব্যবসায়ী নারী প্রতারকের ঠিকানা, আইডি কার্ড, মাতা-পিতার নাম ভুল থাকে। বিয়ের আগে তারা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীতে দামি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেখানে মা-বাবা, ভাই-বোন সাজিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন।

বিয়ের পর স্বামীর সর্বস্ব লুটে নিয়ে কেটে পড়ার পর এরা বাসা বদল করে ফেলেন। ফলে এদের নাগাল পায় না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এমনই কিছু বিয়ে ব্যবসায়ী প্রতারকের ঘটনা তুলে ধরা হলো।

একটি প্রতারণার মামলার তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরিকল্পিতভাবে একের পর এক ভুয়া বিয়ে করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া সুন্দরী নারী প্রতারক চক্রের সন্ধান পায় পিবিআই। অহিদা বেগম কবিতা নামের এই নারী গড়ে তুলেছে বিশাল এক প্রতারক চক্র।

চক্রে ভুয়া শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকা, আত্মীয়স্বজন, খালা-খালু ও বিয়ে পড়ানো কাজী থেকে শুরু করে সব ধরনের আত্মীয়স্বজন রয়েছে। বিয়ে করার পর কারও বোঝার উপায় নেই, তার স্ত্রীর পক্ষের সব আত্মীয়স্বজনই ভুয়া।

কবিতা বিয়ের পর ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত সংসার করে। ওই সময়ের মধ্যেই টার্গেটকৃত ব্যক্তির মন জয় করে নগদ টাকা, দামি দামি আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, জমি, ফ্ল্যাট হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চক্রটির হাতে সাতজনের প্রতারিত হওয়ার তথ্য মিলেছে। যদিও প্রকৃতপক্ষে কতজন প্রতারিত হয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি। পাঁচ বছরে চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার অর্থ সম্পদ। চক্রটির টার্গেট চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষ।

পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক প্রতারণার মামলা তারা তদন্ত করেছেন, কিন্তু এ ধরনের অভিনব প্রতারণার ঘটনা সত্যিই অবাক করার মতো। এমন অভিনব প্রতারণার তথ্য পাওয়ার পর প্রতারণার মামলা আরও গভীরভাবে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ (বিডি প্রতিদিন)

অক্টোবর ১,২০১৮

Share