সেবনকারীকে আত্মঘাতী করে তোলে এলএসডি

লাইসার্জিক এসিড ডাই-ইথালামাইড বা এলএসডি এক ধরনের তরল। ব্লটিং পেপারে সংরক্ষণ করা হয়, যা দেখতে ডাকটিকিটের মতো। এই ভয়ংকর মাদক সেবনে এতটাই বিভ্রম তৈরি হয় যে সেবনকারী নিজেকে প্রচণ্ড শক্তিশালী মনে করে। কিছুতেই কিছু হবে না—এমন বেপরোয়া মনোভাব থেকে সেবনকারী হয়ে ওঠে আত্মঘাতী।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ‘ক্যারাটাগম’ বা ‘ক্যাপটামিন’ জাতীয় ওষুধ সেবনের মতোই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সেবনকারীরা। শুরুতে এই মাদক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে নিষিদ্ধ করা হয়। এই মাদক ইউরোপ আমেরিকার অভিভাবকদের কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এই মাদকের প্রচলন আগে দেখা যায়নি। তবে গত বছর বলিউডের জনপ্রিয় নায়ক সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর আলোচনায় আসে এলএসডি। এই মাদক কারবারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামে ভারতের নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি)।

ডিএনসির কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালে রাজধানীর কাফরুলে পাঁচ গ্রাম এলএসডিসহ ইয়াসের রিদোয়ান আনাস নামের ধনাঢ্য পরিবারের এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেটিই ছিল দেশের প্রথম চালান। কানাডা থেকে আনাস এলএসডি এনেছিলেন বলে স্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে আর এ মাদক ধরা পড়েনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডি উদ্ধার হওয়ার পর এখন নতুন করে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ডিএনসির মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘এখন যেহেতু একটা তথ্য পাওয়া গেছে, কেউ কেউ বাজার তৈরির চেষ্টা করছে, আমরা নজরদারি বাড়াব।’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পার্সেলে অন্য ধরনের মাদক পাচার আমরা ধরেছি। এ কারণে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে।’

জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এলএসডি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের প্রথম দিকে এলএসডি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এলএসডি বিভ্রম তৈরি করে বলে অনেক মানুষ এই মাদক ব্যবহার শুরু করে। ষাটের দশকে এই মাদক থেকে নতুন একটি সাইকেডেলিক কালচার তৈরি হয়। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও ব্যান্ড দলের সদস্যরা এই মাদক ব্যবহার শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে বিশ্বব্যাপী এলএসডি নিষিদ্ধ করা হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ এই মাদক ব্যবহার করছিল। বর্তমানেও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এলএসডি ব্যবহার করা হয়।

ডিএনসির প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, এলএসডি উচ্চমাত্রার ক্যাপটামিনের মতোই মাদক। গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় অংশ নেওয়া জঙ্গি তরুণরা যে ক্যারাটাগম ব্যবহার করেছে, তার কাছাকাছি এটি। উপাদানও কাছাকাছি। এই মাদক সেবনে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এতে আত্মঘাতী হওয়া এবং অন্যকে আক্রমণ করা স্বাভাবিক।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সাধারণত এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তার দেখা এসব দৃশ্য সব সময় বাইরের পৃথিবী বা স্মৃতি থেকে আসে না বরং তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন এক সম্পর্ক অনুভূত হয়, যাকে অনেক সময় আধ্যাত্মিক রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে।

অনলাইন ডেস্ক,২৯ মে ২০২১

Share