জাতীয়

‘এর চেয়ে চীনে থাকাটাই ভালো ছিল’

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের উহান থেকে ফিরে এসেছেন ৩১২ জন বাংলাদেশি। গত শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে চীন থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা হয়।

বিমানবন্দরে অবতরণের পর শরীরে জ্বর থাকায় সাতজনকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও একজন সন্তানসম্ভবা গৃহবধূকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) পাঠানো হয়। ফিরে আসাদের মধ্যে ৩০২ জনকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে আশকোনা হজক্যাম্পে।

আশকোনা হজক্যাম্পে নেয়া ৩০২ জনকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হজক্যাম্প ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। হজক্যাম্পের মোট তিনটি ফ্লোরে রাখা হয়েছে বাংলাদেশিদের। কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাংলাদেশিরা বলছেন, সেখানে থাকার মতো পরিবেশ নেই। বাচ্চাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

পিএইচডি করতে স্বামী আর সন্তানদের সঙ্গে চীন গিয়েছিলেন ফারজানা ইয়াসমিন। চীন থেকে দুই বাচ্চা নিয়ে ফিরে আসা ফারজানা বেশ বেকায়দাতেই পড়েছেন।

তিনি বলেন, চীন থেকে আসার জন্য উদগ্রীব ছিলাম বাচ্চাদের জন্য। কিন্তু এসে দেখি বাচ্চাদের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এছাড়া বড়রা সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকতে পারে কিন্তু বাচ্চারা তো পারে না।

হজক্যাম্পের পরিবেশ কোয়ারেন্টাইনের উপযুক্ত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ইয়াসমিন বলেন, কোয়ারেন্টাইন তো করা হয় আলাদাভাবে। এখন লোকের সংস্পর্শে এসেই যদি এরা কোয়ারেন্টাইন করে তাহলে এটা কী হলো? এর চেয়ে চীনে থাকাটাই ভালো ছিল।

তিনি বলেন, একই রুমের মধ্যে আমরা গ্যাদারিং করে পড়ে আছি। আমাদের রুমেই ৪০ থেকে ৫০ জন হবে। এদের মধ্যে বাচ্চারাও আছে। আবার অবিবাহিতরাও আছে। গরম পানির ব্যবস্থা নেই। দুধটা খাওয়াব সেটা খাওয়ানোর মতোও পানি নেই।

এদিকে পিএইচডি শেষ না করেই দুই সন্তান নিয়ে উহান থেকে ফিরেছেন শামীমা সুলতানা। তিনি বলছেন, এখানে এসে ভালো নেই। কোয়ারেন্টাইন বলতে যা বোঝায় সেটা হচ্ছে বিচ্ছিন্ন রাখা। তো সেটাতো এখানে দেখছি না।

শামীমা বলেন, এখন পর্যন্ত যেটা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে যে অব্যবস্থাপনার একটা বিষয় আছে। কাল থেকে যে খাবারগুলো আসছে সে খাবারগুলোর প্যাকেটও এখনও পড়ে আছে। রুম থেকে বের করে মশা মারার জন্য ধোঁয়া দিয়েছিল। এটাও আমরা আসার আগে করলে ভালো হতো।

রাকিবুল তুর্য নামে আরকেজন এসেছেন উহান থেকে। তিনি জানান, এক রুমে ৫১ জন রয়েছেন তারা। এর মধ্যে তিনি যে ফ্লোরে রয়েছেন সেখানে তিন রুম। তিন রুমের জন্য দুটি টয়লেট আর দুটি ওয়াশরুম। রয়েছে পানির সংকটও।

তবে তুর্য বলেন, একই রুমে যদি গণরুমের মতো ৫০ জন করে থাকতে হয় তাহলে বাংলাদেশে এসে লাভটা কী হলো। কারও মধ্যে যদি করোনাভাইরাস থেকে থাকে তাহলে সেটা সবার মধ্যেই সংক্রমিত হবে। কারণ সবাই এক সাথে আছে। এটারই ভয় পাচ্ছি।

উল্লেখ্য, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ জনে। রোববার মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৬ জনই ভাইরাসের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত সাড়ে তিনশ জন। চীনে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮২৯ জন। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২০৫ জন।

এছাড়া রোববার পর্যন্ত উহানে আরও এক হাজার ৩৩ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। উহান থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরবর্তী হুয়াগং শহরেও বেড়েছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। সেখানে নতুন করে ২৪৪ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে অন্তত দুইজন।

চীন ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে নতুন করে ১৭১ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে অন্তত ২০টি দেশে। চীনের বাইরে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ফিলিপাইনে।

মহামারির আশঙ্কায় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে চীন থেকে নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন-ভ্রমণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান।

ফিলিপাইনসহ অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক দেশের এয়ারলাইন্স চীনগামী ফ্লাইটও বন্ধ করে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন।সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা, সিএনএন।

বার্তা কক্ষ,৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Share