এরা প্রকৃতিরও দুধমাতা

উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম সবখানে কেবল যুদ্ধের দামামা। এই দামামা পাশে রেখেই যুদ্ধাংদেহী মানুষ জঙ্গল ছেড়ে আজ মঙ্গলে যাওয়ার পথে। অর্থনীতি-রাজনীতি-ধর্ম-বিজ্ঞান প্রভৃতির মিথষ্ক্রিয়ায় মানুষ নিজেকে সামাজিকও বলতে শিখেছে। কালের পরিক্রমায় সামাজিক হওয়ার পাশপাশি মানুষ উন্নতিও করেছে বহু, তা অনস্বীকার্য। সেই সঙ্গে এ কথাও সত্য যে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় যে সম্পর্ক ছিল তাও তাকে প্রতিদিন হারাতে হচ্ছে।

শিল্প বিপ্লব গোটা পৃথিবীর সামাজিক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিলেও কিছু মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে এখনো গভীর একটা সম্পর্ক রাখতে পেরেছে। এরকমই একটা উপজাতি সম্প্রদায় হলো গুয়াজা। অ্যামাজনের গভীরে তাদের বাস। বহির্বিশ্বের সঙ্গে এদের অনেকেরই আক্ষরিক অর্থেই কোনো যোগাযোগ নেই।

গুয়াজাদের জীবন বলতে কেবল তারা, তাদের বাচ্চা-কাচ্চা, কিছু অস্ত্র আর কিছু পোষা প্রাণী। আর এই নিয়েই জঙ্গলের গভীরে প্রকৃতির সঙ্গে লীন হয়ে তাদের বসবাস।
বেশিরভাগ গুয়াজারাই কোনো না কোনো প্রাণী পোষে। বিজ্ঞানের সঙ্গে অপরিচিত এই মানুষেরা যতগুলো ক্ষেত্রে সভ্য মানুষদের চেয়ে এগিয়ে তার একটি প্রেমে বলা যেতেই পারে। আর এই প্রেম কেবল মানুষে-মানুষে নয়, গোটা জীবজগতের সঙ্গেই তাদের প্রেম। গুয়াজা নারীরা তাদের পোষা প্রাণীগুলোকেও নিজেদের সন্তানদের মতোই বুকের দুধ খাইয়ে বড় করে তোলে।

বিপন্নপ্রায় গুয়াজাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই আধুনিক পৃথিবীর কাছ থেকে তাদের দূরেই থাকতে দেয়া হয়। ফলস্বরুপ এখনো পর্যন্ত খুব সামান্য কিছু মানুষই তাদের দেখা পেয়েছেন। ফটোগ্রাফার ডমেনিকো পাগলেইজ সেই বিরল মানুষদের একজন যারা গুয়াজাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। তার চেয়েও বড় কথা তাদের হাসাতে পেরেছেন তিনি।

ডমেনিকোর ভাষায়, ‘আমাকে দেখে তারা কিছুতেই একটা বিষয় বুঝে উঠতে পারছিল না যে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ পরিবার ছাড়া একা একা করছেটা কী! আমাকে দেখে তারা কিছু উপদেশ দেয়ারও চেষ্টা করছিল। তারা জানেই না আমি এলাম কোথা থেকে। এই ‍পৃথিবী সম্পর্কে তাদের আসলে ধারণাই নেই।’

‘আমি তাদের বোঝাতেই পারলাম না যে আমি কোথা থেকে এলাম। বেঁচে থাকতে আমরা কী কী করি সেসবও তাদের বোঝানো সম্ভব না। তাদের মতে, একটা মানুষের কোনো পরিবার না থাকাটা একটা অসম্ভব বিষয়।’

গুয়াজাদের কাছে পরিবারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আর পরিবারের সদস্য বলতে ওরা যে কেবল মানুষদের বোঝে ব্যাপারটা একেবারেই সে রকম নয়। এরা যে প্রাণীগুলো পোষে প্রাত্যহিক কাজে সেগুলো নানা রকম সাহায্য সহযোগিতা করে। যেমন: বাদাম ছিলে দেয়া, গাছ থেকে ফল পেড়ে দেয়া, ঘুমানোর সময় দেখশোনা করা। মোদ্দাকথা হলো- পোষা এই প্রাণীগুলো আসলে তাদের সন্তানদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।

এরা সাধারণত শূকর, কাঠবিড়ালী, টিয়া, ইঁদুর ইত্যাদি প্রাণী পুষে থাকে। তবে পোষার জন্য এদের সবচেয়ে প্রিয় হলো বাঁদড়।
খাদ্য হিসেবে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা গুয়াজাদের পছন্দের তালিকায় থাকলেও যখনই কোনো বাচ্চা এরা ঘরে নিয়ে আসে সেটি তারা আর খায় না। উল্টো ওই বাচ্চাকে তখন নিজেদের বাচ্চার মতোই আদর-যত্ন করে, বুকের দুধ খাইয়ে বড় করে তোলে। এরপর সেটি যদি আবার জঙ্গলে ফিরেও যায় তারপরও গুয়াজাদের কাছে সেটি পরিবারের অংশ হয়েই থাকবে।

ডমেনিকোর ভাষায়, এরা কাঠবিড়ালী বা বাঁদড়কে এমনভাবে বুকের দুধ খাওয়ায় দেখে মনে হয় যেন নিজেদের বাচ্চাই। এ থেকে বোঝা যায় আমরা প্রকৃতি থেকে কতটা দূরে চলে এসেছি। ওরা প্রকৃতির খুবই কাছাকাছি থাকে। আসলে এটাকে কাছাকাছি বলা ঠিক না, ওরা প্রকৃতিরই একটা অংশ। (সূত্র: ডেইলি মেইল)

নিউজ ডেস্ক  ।। আপডেট : ০৪:০০ এএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫, শনিবার

ডিএইচ

Share