স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের মধ্য সৃষ্ট দূরত্ব এবার দলে থাকা মন্ত্রী ও এমপিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের পর জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী এমপিদের সঙ্গে সরকারে থাকা এরশাদপন্থী মন্ত্রীদের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এই বিরোধ এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জাপা এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় সরকারে থাকা মন্ত্রীরা সফরে গেলেও দলীয় এমপিকে অবহিত করা হচ্ছে না।
জানা গেছে, ৭ জুন রওশন এরশাদ তার পছন্দের ৫ জন এমপিকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রওশন ওই বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ থেকে শুরু করে মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সরকারে থাকা জাপার মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু ও মশিউর রহমান রাঙাকেও আমন্ত্রণ জানাননি। এ নিয়ে রওশন এরশাদের প্রতি চরম ক্ষুব্ধ দলের এরশাদপন্থীরা।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুন মোদির সঙ্গে বৈঠকে রওশন এরশাদের সঙ্গে ছিলেন জাপার সাবেক মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। রওশনকে নিয়ে মোদির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ায় সরকারে থাকা জাপার পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গত বুধবার পটুয়াখালী সদর উপজেলার পায়রাকুঞ্জ এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি রুহুল আমিন হাওলাদারকে না জানিয়েই। সেখানে নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়েন ব্লু গোল্ড প্রকল্প উদ্বোধন করেন ব্যারিস্টার আনিস। সঙ্গে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের মন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূত। কিন্তু পটুয়াখালীর স্থানীয় এমপি এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা জাপার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাকির মাহমুদ সেলিম বলেন, ‘আমরা এলাকার জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের নেতারা মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনি প্রকল্প উদ্বোধন করছেন, আমাদের স্থানীয় এমপি কই। এ সময় মন্ত্রী কিছু না বলেই চলে যান।’
এ বিষয়ে কথা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এটা নেদারল্যান্ডসের অনুষ্ঠান। এ জন্যই অনেককেই জানানো সম্ভব হয়নি।
জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘ব্যারিস্টার আনিস এখন মন্ত্রী। ৪০ বছর যাবৎ আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করছি। একসঙ্গে পথ চলতে গেলে মতপার্থক্য হতেই পারে। আমি তো এলাকার জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত এমপি। জনগণের প্রত্যাশা ছিল আমি সেখানে থাকি। আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে না দেখায় সেখানকার জনগণ ব্যথিত হয়েছে, কষ্ট পেয়েছে। তাদের সঙ্গে আমিও হতবাক ও ব্যথিত।’
এদিকে গত রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের সেমিনারকক্ষে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভেজাল প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন রওশন এরশাদ। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না জাপার বেশিরভাগ এমপি। জানা গেছে, এরশাদের বারণ থাকায় ওই বৈঠকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ ছাড়া দলটির সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও এরশাদপন্থী এমপিরা উপস্থিত থাকছেন না।
এ বিষয়ে সেদিনকার বৈঠকে উপস্থিত না থাকা এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, ‘আমার শরীর খারাপ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত হতে পারিনি।’
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সরকারে জাপার মন্ত্রী থাকলে জনগণ তো আমাদের বিরোধী দল বলবে না। বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ অনেককেই মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বলেন, এ জন্যই অনেকে বৈঠকে আসেন না। ম্যাডাম না থাকলে যে তারা কখনই এমপি হতে পারতেন না, এটা তাদের বোঝা উচিত।’
এদিকে বুধবার একটি দৈনিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই জি এম কাদেরের বর্তমান সংসদকে কটাক্ষ করে সম্পাদকীয় লেখায় নতুন করে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে জাতীয় পার্টিতে। জি এম কাদের পত্রিকায় লেখেন, ‘বর্তমান সংসদ গণতন্ত্রের প্রতীক নয়। বরং মৃত গণতন্ত্র সংরক্ষণের কফিনের প্রতীক হিসেবে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জাপার গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তার (জি এম কাদের) জাতীয় পার্টিতে নাম ব্যবহার করার সময় ফুরিয়ে আসছে।’
আপডেট: বাংলাদেশ সময় ০৩:২১ অপরাহ্ন, ২১ জুন ২০১৫, রোববার
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম-এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।