সারাদেশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাগামহীন অর্থ আদায় বন্ধে ফি নির্ধারণ হচ্ছে

দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গলাকাটা ফি আদায় বন্ধ হচ্ছে। নির্ধারিত খাত ধার্য করে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের শিক্ষা ব্যয় নির্ধারণ করে দেয়া হবে।

এছাড়া সব ফি ব্যাংকের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। এজন্য ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২০’ প্রণয়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বছর থেকে এটি বাস্তবায়ন হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ নীতিমালা চূড়ান্ত করতে গত বৃহস্পতিবার ১০ ডিসেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনির সভাপত্বিতে এক ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো.মাহবুব হোসেন,মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড.সৈয়দ মো.গোলাম ফারুকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নীতিমালার বিষয়ে শনিবার ১২ ডিসেম্বর ড. গোলাম ফারুক বলেন,‘ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি আদায় এবং আদায়কৃত অর্থ নানানভাবে লুটপাটের ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসছিল। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই। এ কারণে এ নীতিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

খসড়া নীতিমালাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী বছর থেকে এ নীতিমালা কার্যকর হতে পারে। এটি বাস্তবায়নে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি,সেশন ফি এবং বোর্ড পরীক্ষার ফরমপূরণ ফিসহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নীতিমালাটি হচ্ছে। এটি মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের ফি ও বেতনের অর্থ আদায় করতে হবে। কোনোভাবে তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করা যাবে না। আদায়কৃত সব অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা রাখতে হবে।

স্কুলে মাসিক বেতন ও ভর্তি ফি

এ নীতিমালায় এমপিওভুক্ত সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ আদায়ের খাত তৈরি করা হয়েছে। সেসব খাতে অর্থ নির্ধারিত থাকবে। তার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন ও তার আশপাশ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির মাসিক বেতন ২৫ থেকে ৪৫ টাকা, জেলা সদর ও পৌর এলাকায় ২০ থেকে ৪০ টাকা, উপজেলায় ১৫ থেকে ৩৫ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় ১২ থেকে ৩০ টাকা নির্ধারিত থাকবে। ভর্তির আবেদন ফি পর্যায়ক্রমে ৭৫ থেকে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হবে। ভর্তি ও পূর্ণ ভর্তি ফি ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা ধার্য থাকবে।

ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফি

নীতিমালায় শিক্ষার্থীদের ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষার ফিও ধার্য করা থাকছে। তার মধ্যে প্রাথমিক স্তরে দু’পরীক্ষার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা নেয়া যাবে।

এছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠান বাবদ ৫০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি ১০০, মুদ্রণ বাবদ ১৫০, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, বিতর্ক ও বিভিন্ন দিবস উদযাপনে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা, কম্পিউটার চার্জ ২৫ থেকে ৫০ টাকা, কৃষি ও বাগান ফি (যদি থাকে) ৩০ টাকা, কমন রুম ফি ২০ থেকে ৩৫, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ফি ৫, বিএনসিসি ফি ৫, রেডক্রিসেন্ট ফি ২০, মসজিদ ও উপাসনালয়ের জন্য ২৫ থেকে ৫০ টাকা ধার্য করা থাকবে।

রেজিস্ট্রেশন ফি

অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন ফি,পরীক্ষার ফি, ব্যবহারিক পত্রের ফি, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ফি, মূল সনদ ফি শিক্ষা বোর্ড থেকে নির্ধারণ করবে। এছাড়া স্কাউট ফি, ক্রীড়া, কল্যাণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফিও বোর্ড থেকে নির্ধারণ করে দেবে। উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী আদায় করা যাবে।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ব্যয়

কলেজ পর্যায়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৮০ থেকে ১৫০ টাকা, অনলাইন আবেদন, রেজিস্ট্রেশন ফি, উন্নয়ন ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারণ করা থাকবে। প্রতি বিষয়ে অভ্যন্তরীণ ফি ৫০ থেকে ৪০ টাকা আদায় করা হবে। তবে প্রতি বিষয়ে, ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি,একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট,সনদ,পরীক্ষা কেন্দ্র, রোভারস্কাউট, ক্রীড়া, রেডক্রিসেন্ট, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি,বিএনসিসি ফি ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে।

কলেজে আনুষঙ্গিক ব্যয়

নীতিমালায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা থাকছে। এর বাইরে কল্যাণ ফি বাবদ ২০ টাকা, পরিচয়পত্র ফি ৩০ টাকা, লাইব্রেরি ফি ২৫ টাকা, ল্যাবরেটরি বা বিজ্ঞানাগার ফি ১০০ টাকা, আইসিটি ফি ২০ টাকা, ম্যাগাজিন খাতে ৩০ টাকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যয় ৩০ টাকা, সাংস্কৃতিক, বির্তক ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ৫০ থেকে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা থাকবে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত এ খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে,শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। নগদ অর্থ আদায় করতে পারবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

এজন্য সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংকে হিসাব চালু করতে হবে। এমপিওভুক্ত স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি এবং কলেজে গভর্নিং বডির সভাপতির নেতৃত্বে তিনজন সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি অর্থ কমিটি গঠন করতে হবে। কলেজের সিনিয়র শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট বেতন ও ফি আদায় কমিটি সব ধরনের ফি এবং বেতন আদায় সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদন কমিটি বরাবর দাখিল করবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো.মাহবুব হোসেন বলেন,‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ফি কাঠামো এবং আয়-ব্যয় সংক্রান্ত একটি নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তা জারি করা হবে।’

বার্তা কক্ষ, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০
এজি

Share