এমন ছাওয়াল জঙ্গি অইব তা কল্পনাও করতে পারি না

‘ছাওয়ালডারে খুব ভালো জানতাম। কারো লগে কোনোদিন বেয়াদবি করতে দেহিনি। দেখলেই সালাম দিয়া কথা কইত। বড় সম্মান দিত হগলকেই। এমন ছাওয়াল জঙ্গি অইব! তা কল্পনাও করতে পারি না।’

এই কথাগুলো বলছিলেন, মোহাম্মদপুর লালমাটিয়া বি-ব্লকের ৭/৯ নম্বরের বাড়ির কেয়ারটেকার নুরু মিয়া। এ বাড়িতেই থাকতেন গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলাকারীদের একজন রোহান ইমতিয়াজ।

রোহান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে। ইমতিয়াজ খান গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন।

প্রায় বছর পাঁচেক আগে ভাড়া নিয়ে ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় উঠেন ইমতিয়াজ খান বাবুল।

গুলশান ট্রাজেডির পর প্রতিবেদকেরা সোমবার সরেজমিনে গিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে রোহানের পরিবারের সঙ্গে। ঘটনা জানাজানির পর আজ (সোমবার) সকালেই রোহানের পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন বলে জানান কেয়ারটেকার নুরু মিয়া।

রোহান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নুরু মিয়া বলেন, অনেক ভদ্র ছিল রোহান। কারো সঙ্গে কখনও খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি। খারাপ ছেলেদের সঙ্গেও মেলামেশা করতো না। মসজিদে গিয়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। খুব চাপা স্বভাবের ছিল ছাওয়ালডা।

রোহান প্রায় বছর খানিক আগে বাড়ি থেকে উধাও হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছিলাম। কিন্তু বাবুল সাহেবের (রোহানের বাবা) সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনোদিন কথা হয় নাই। আমরা গরিব মানুষ। উপর তলার মানুষগো তো সব খবর রাখতে পারি না। চাইলেও তারা আমাগো সব কথা কইব না।’

নুরু মিয়ার স্ত্রী রিজিয়া খাতুন। একই বাড়িতে থাকেন। রোহানকে চেনেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে এই বাসায় আছি। বাসার সবাইকে চিনি। রোহানরেও চিনি। সিঁড়িতে যতবার দেখা অইছে ততোবারই সালাম দিয়া কথা কইছে। পোলাডা যহন বাড়ি থেকে উদাও অইল, তহন মনে বড় কষ্ট পাইছি। আর আজ যহন হুনলাম, গোলাগুলিতে ছাওয়ালডা মইরা গেছে, তহন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না।’

একই বিষয়ে কথা হয় বাড়ির মালিক ক্যাপ্টেন ডা. (অব.) এএসএম আনিসুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাড়াটিয়া হিসেবে একটি পরিবারের সঙ্গে যে ধরণের সম্পর্ক থাকার কথা আমাদের তাই ছিল। রাজনীতি করলেও বাবুল সাহেবের বাড়িতে বাইরের বেশি মানুষ আসতে দেখিনি।

রোহানের বাবা ইমতিয়াজ খান বাড়িতে আছেন কিনা জানতে চাইলে এএসএম আনিসুজ্জামান বলেন, তিনি আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন। তবে এই মুহূর্তে কোথায় আছেন, তা বলতে পারবো না।

বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী শাহজাহান আলী জানান, দুপুরের আগেই ইমতিয়াজ সপরিবারে গাড়িতে করে বেরিয়ে গেছেন। বাসায় এখন কেউ নেই। কাউকে যেতেও নিষেধ করেছেন মালিক।

উল্লেখ্য, গুলশান হামলার পর সাইট ইন্টেলিজেন্স হামলাকারী হিসেবে যেসব জঙ্গির ছবি প্রকাশ করে সেখানে রোহানের নাম রয়েছে। তার পরিচিতজনরা রোহান ইমতিয়াজের পরিবারের একটি ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করে। রোহান ইমতিয়াজের ছবির সঙ্গে বেরিয়ে আসে তার পারিবারিক তথ্যও।

ইমতিয়াজ খান বাবুল নিজেও ছেলের সঙ্গে তার ছবি প্রকাশ করেছিলেন এ বছরের ২১ জুন, যেখানে তিনি গত বছরের একই দিনে পোস্ট করা এক ছবি প্রকাশ করে লেখেন, ‘বাবা তুমি কোথায়, প্লিজ ফিরে এসো’।

ইমতিয়াজ খান বাবুল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল, সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও ফিবার রেফারি।

রোহানের মা স্কলাসটিকা স্কুলের একজন শিক্ষিকা। মা-বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান রোহানের দুই বোন আছে।(বিডি লাইভ২৪.কম)

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ০৮:৪৫ পিএম,০৩ জুলাই ২০১৬,রোববার
এইউ

Share