পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীদের অনেকেই উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। এর মধ্যে আদালতের রায়ে প্রায় ২’শ জনের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয়ার আদেশ নির্বাচন কমিশনে এসেছে। তবে শেষ মুহূর্তে এসে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন ।
কমিশন সূত্রে জানা যায়, গত ৫ ও ৬ ডিসেম্বর মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে বাছাইয়ে ঋণখেলাপি, হলফনামায় মিথ্যা তথ্য, সমর্থন তালিকার স্বাক্ষরে ভুলসহ নানা ত্রুটিতে হাজার খানেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিল। পাঁচ শতাধিক প্রার্থী এর বিরুদ্ধে রিট পিটিশন করেছিলেন। এর মধ্যে ১৯৪ জনের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন নিয়ে কমিশনে এসেছেন। এমন বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা আগামী এক সপ্তাহে আরো বাড়তে পারে বলে জানা যায়।
এসব আপিল আবেদনের মধ্যে চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভায় বিএনপির মনোনিত প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীনের মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে। তবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনে তথ্যে গরমিলের কারণে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার। এর ফলে ওই পৌরসভায় একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছিলেন। তবে আদালতের আদেশে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ফিরে পাওয়ার আদেশে তা আটকে গেল।
এদিকে ছেংগারচরের ঘটনার বিষয়ে কমিশন রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্ত প্রতিবেদন নেয়। সেই প্রতিবেদনের বক্তব্যে কমিশন মনে করছে, রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তই সঠিক। এ কারণে আদালতের ‘স্টে ও ডিরেকশন’ এর আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আপিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও কুমিল্লার দাউদকান্দি মেয়র প্রার্থীদের আদেশের বিষয়েও আপিলের সুপারিশ রয়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে পৌর ভোটের আর কয়েকটি দিন বাকি। সেই সঙ্গে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়র প্রার্থীদের ব্যালট পেপার ছাপানো সম্পন্ন করার পরিকল্পনা আছে কমিশনের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে তা বিতরণেরও কথা। এসব কারণে ব্যালট জটিলতা এড়াতেও উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন বলেও জানান তারা।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আপিল আবেদন করা হলে ২‘শ প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নেয়া আদালতের চূড়ান্ত রায়ের ওপরই নির্ভর করবে। তবে এতে নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে তাদের দাবি।
২৩৪ পৌরসভার সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের সিংহভাগ ব্যালট পেপার ছাপানো হয়ে গেছে। মেয়র পদের নাম ও প্রতীক দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো চলছে। তবে বৈধ প্রার্থী হিসেবে আদালতের আদেশ পাওয়ার সংখ্যা বাড়তে থাকায় কিছু পৌরসভার ব্যালট পেপার ছাপানো বন্ধ রয়েছে।
কাউন্সিলর পদে এ মুহূর্তে প্রার্থী বাড়লে জটিলতা কিছুটা কম। তবে মেয়র পদে প্রার্থী এলে নতুন ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহান বলেন, ‘এখন পর্যজন্ত ১৯৪ জনের বিষয়ে আদেশ পেয়েছি আমরা। আদালতের আদেশ মেনে সংশ্লিষ্টদের বৈধ প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে প্রতীক দিতে হবে তাদের। সেক্ষেত্রে ব্যালট পেপারে মেয়র পদে নাম, প্রতীক এবং কাউান্সিলর পদে প্রতীক বরাদ্দ থাকবে।’
ইসির একজন উপ সচিব জানান, কাউন্সিলর পদে ‘কমন’ ব্যালট পেপার থাকায় প্রার্থী বাড়লেও সমস্যা নেই। ইতোমধ্যে সব ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। অতিরিক্ত প্রতীকে করতে গেলে সমস্যা হবে না। তবে মেয়র পদে প্রার্থী বাড়লেই ইতোমধ্যে ছাপানো ব্যালট নষ্ট করতে হবে, নতুন প্রার্থীকে নিয়ে নতুন করে ছাপাতে হবে ব্যালট পেপার।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ‘আর মাত্র এক সপ্তাহ রয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের আগের দিন ব্যালট পেপার পৌঁছাতে হবে। এতো আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা কষ্টকর হবে। কারণ ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যেন্ত সুপ্রিম কোর্টে শীতকালীন অবকাশ। তবে জরুরি বিষয় নিষ্পত্তিতে অবকাশকালীন বেঞ্চ থাকছে। সেখানে বাছাইকৃত কিছু পদে আপিল করা হবে।’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩ ডিসেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ সময় পযন্ত তিনটি পদে ১৩ হাজারারেও বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এ চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৫ জন।
এর মধ্যে মেয়র পদে বাতিল হয়েছে দেড় শতাধিক রয়েছে, প্রত্যাহার করেছেন ১৬২ জন, বাকিগুলোর মধ্যে সাধারণ ও সংরক্ষিত পদে বাতিল হয়েছে পাঁচ শতাধিক। (বাংলামেইল)
ডেস্ক ।। আপডেট : ০৬:৩০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫, সোমবার
ডিএইচ