এ বছরে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার (২ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিবের স্বাক্ষরিত এ নীতিমালা প্রকাশিত হয়। ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি মিলে জিপিএ কমপক্ষে ৯ পয়েন্ট এবং আদিবাসী ও পার্বত্য জেলার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে জিপিএ কমপক্ষে ৮ পয়েন্ট হতে হবে।
লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য দশমিক ২৫ নম্বর কাটা হবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচিত হবেন শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমঅ্যান্ডডিসি) প্রণীত এই নীতিমালা দেশের সব সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমবিবিএস-বিডিএস কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
প্রার্থীর ভর্তির যোগ্যতা
আবেদনকারীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। কেবল সরকার কর্তৃক বিদেশিদের সংরক্ষিত আসনের জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ পয়েন্ট হতে হবে। সব আদিবাসী ও পার্বত্য জেলার প্রার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা দুটিতে মোট জিপিএ কমপক্ষে ৮ পয়েন্ট হতে হবে। তবে এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫০ পয়েন্টের কম গ্রহণযোগ্য নয়।
এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান থাকতে হবে। জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ পয়েন্ট থাকতে হবে।
যে শিক্ষাবর্ষের জন্য মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে সেই ইংরেজি বর্ষে বা পূর্ববর্তী ইংরেজি বর্ষে প্রার্থীকে এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করতে হবে। সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে তাঁর এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের পূর্ববর্তী দুই ইংরেজি বছরের মধ্যে এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাস করতে হবে।
‘ও’ লেভেলের জন্য তিনটি বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান থাকতে হবে এবং সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ৫ বিষয় এবং অতিরিক্ত বিষয়ে জিপিএ ২ পয়েন্টের অতিরিক্ত প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে জিপিএ নির্ধারণ করা হবে।
তবে সর্বোচ্চ জিপিএ ৫ পয়েন্টের বেশি হবে না। ‘এ’ লেভেলের জন্য স্থানীয় তিনটি বিষয় পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান থাকতে হবে। কিন্তু জিপিএ নির্ধারণের জন্য সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত যেকোনো তিনটি বিষয় বিবেচনায় আনা হবে। অতিরিক্ত বিষয়ে জিপিএ ২ পয়েন্টের অতিরিক্ত প্রাপ্ত নম্বর যোগে করে জিপিএ নির্ধারণ করা হবে। তবে সর্বোচ্চ জিপিএ ৫ পয়েন্টের বেশি হবে না। সনদ সরকারি/বেসরকারি মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ভর্তির জন্য প্রার্থী নির্বাচনপ্রক্রিয়া
এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ মোট ২০০ নম্বর হিসাবে নির্ধারণ করা হবে। এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রাপ্ত জিপিএ এবং ভর্তির জন্য লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করে প্রার্থী নির্বাচন করা হবে। কোনো শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস/বিডিএস ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি পরীক্ষায় সদ্য উত্তীর্ণদের মোট (Aggregated) নম্বর (এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ-এর ১৫ গুণ+ এইচএসসি/সমমান পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএর ২৫ গুণ + ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর)-এর ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে। পূর্ববর্তী বৎসরের এইচএসসি পাস প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৫ নম্বর এবং পূর্ববর্তী বছরের সরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল কলেজ ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মোট নম্বর থেকে ৭ দশমিক ৫ নম্বর কেটে মেধাতালিকা তৈরি করা হবে।
সরকারি ও বেসরকারি সব মেডিকেল কলেজের জন্য একই সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মেডিকেল কলেজে ভর্তির পর সরকারি ও বেসরকারি সব ডেন্টাল কলেজ এবং ডেন্টাল ইউনিটের জন্য একই সঙ্গে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইংরেজি মাধ্যমের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল পাস করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে।
লিখিত ভর্তি পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের। ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটি ১ নম্বর করে মোট (এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী) ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। পদার্থ ২০, রসায়ন ২৫, জীববিজ্ঞান ৩০, ইংরেজি ১৫ ও সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ) ১০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
লিখিত পরীক্ষার প্রতিটি ভুল উত্তর প্রদানের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। লিখিত পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের কম পেলে অকৃতকার্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
মেধাতালিকা ও প্রার্থী নির্বাচন
অনুচ্ছেদ ২.১ অনুযায়ী শুধু ভর্তি (লিখিত) পরীক্ষায় কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের জাতীয় মেধাতালিকা (বিশেষ কোটা যদি থাকে উল্লেখসহ) প্রকাশ করা হবে।
সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি ও পার্বত্য অঞ্চলের অ-উপজাতীয়দের জন্য নির্ধারিত আসন বাদে অবশিষ্ট আসনে জাতীয় মেধায় ৮০ শতাংশ এবং জেলা কোটায় (সংশ্লিষ্ট জেলার প্রার্থীদের মেধা অনুসারে) ২০ শতাংশ প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
জাতীয় মেধাতালিকা প্রকাশের পরপরই বেসরকারি মেডিকেল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ/ডেন্টাল ইউনিটে ভর্তির জন্য একটি শিডিউল প্রকাশ করতে হবে। নিজ নিজ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ/ডেন্টাল কলেজ উক্ত শিডিউল অনুযায়ী একাধিক জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ভর্তির জন্য ব্যাপক প্রচার চালাবে। এ ক্ষেত্রে ভর্তি ফরমের দাম হিসেবে সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা নিতে পারবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ/ডেন্টাল কলেজগুলোতে প্রাপ্ত আবেদনকারীদের জাতীয় মেধাতালিকার ক্রম অনুযায়ী বিন্যাস করে একটি মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে। এ তালিকা থেকে ভর্তির জন্য শিডিউল প্রস্তুত করবে। এ তালিকা ও শিডিউল সংশ্লিষ্ট কলেজের ওয়েবসাইট, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও দৃশ্যমান স্থানে প্রকাশ করবে। প্রকাশের দিন থেকে ন্যূনতম পাঁচ কর্মদিবসের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। পরে শূন্য আসনে একইভাবে ন্যূনতম তিন কর্মদিবসের জন্য ভর্তি কার্যক্রম উন্মুক্ত থাকবে। কোনোক্রমেই মেধাক্রমের ব্যতিক্রম করা যাবে না।
কলেজ কর্তৃপক্ষ শিডিউল অনুযায়ী ভর্তির অগ্রগতি তালিকাসহ পরিচালক (চিশিজ), স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, মহাখালী, ঢাকাকে দফায় দফায় তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং সন্তানদের জন্য মোট আসনের ২ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে। এ ছাড়া পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ উপজাতীয় এবং তিনটি পার্বত্য জেলার অ-উপজাতীয় কোটাভুক্ত আসনের জন্য ৯+৩=১২ টি, এবং পার্বত্য জেলা ছাড়া অন্যান্য জেলার পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী (উপজাতীয়) প্রার্থীদের জন্য ৮টিসহ মোট ২০টি আসন সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
বার্তা কক্ষ,৩ নভেম্বর ২০২০