আগামি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন । আগামি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার এডিপির আকার বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ। এডিপিতে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় এডিপি অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
নতুন এডিপিতে ৯৪ হাজার কোটি টাকা দেবে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী। আর বাকি ১ লাখ ৭৯ হাজার কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে ব্যয় করা হবে। এবার এডিপির আকার বেড়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। যেখানে গত বছর এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এবারের অনুমোদিত এডিপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য সবচেয়ে বেশিÑ ৭৫ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যাতে সরকারি ব্যয় এবং উন্নয়ন সহযোগীরা দেবে ৩১ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের বরাদ্দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এই বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা।
এর পরেই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৯ হাজার ৪৭৩ কোটি, সেতু বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৬৪ কোটি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জন্য ৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। এ খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ বিভাগের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে শিক্ষা খাত। শিক্ষা অবকাঠামো ও উচ্চশিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন অর্থবছরের বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। আগামী এডিপিতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। যা মোট এডিপির ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা সব খাতের এডিপির মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ।
এছাড়া গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলির জন্য ২৭ হাজার ৪৫ কোটি। যা চতুর্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে। আর পঞ্চম স্থানে থাকা স্বাস্থ্য খাতে ১৬ হাজার ২০৪ কোটি। এরপর কৃষিতে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদের জন্য ৮ হাজার ৯৯৫ কোটি। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৬২ কোটি।
অন্যগুলোর মধ্যে জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ৩ হাজার ৪৩৬ কোটি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫ হাজার ৩২১ কোটি, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদনে ২ হাজার ২৯০ কোটি, সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ২ হাজার ১১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের সবচেয়ে কম বরাদ্দ পাচ্ছে প্রতিরক্ষা খাত। এ খাতের বরাদ্দ ১ হাজার ১০ কোটি টাকা।
এদিকে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০টি বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে- প্রথমে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ৪০ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এ খাতে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সড়ক পরিবহন বিভাগ পেয়েছে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগ পেয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয় পেয়েছে ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ পেয়েছে ১৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় পেয়েছে ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ পেয়েছে ১২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। ১২ হাজার ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় পেয়েছে ৯৪৭৩ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ পেয়েছে ৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্প ॥ এদিকে এডিপিতে বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাতারবাড়িতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্প, বরাদ্দ পেয়েছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। এরপর ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। পদ্মা রেল সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। এমআরটি-১ এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৯১০ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে বরাদ্দ হয়েছে ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এমআরটি লাইন-৬ এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
এক হাজার ৩০৯টি প্রকলল্পের বিপরীতে বিশাল এ এডিপি অনুমোদন করা হয়েছে। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কৃচ্ছ্র, কৃচ্ছ্র, কৃচ্ছ্র। ব্যয় বন্ধ করা হবে না তবে লাগাম টেনে ধরা হবে। নির্বাচনকালীন এডিপি দেয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছেন নির্বাচনের জন্য আলাদা কোনো কার্যক্রম করা হয়নি। ঐটা ইশতেহার অনুযায়ী প্রতি বছরই করা হচ্ছে। দেশের স্বার্থ আগে, পরে নির্বাচনে যা হয় হবে।
পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, নৌ-পরিবহন, স্বাস্থ্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি খুবই খারাপ ছিল। প্রধানমন্ত্রী এসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সচিবকে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বলেছেন। এছাড়া মহিলা এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি প্রকল্প গ্রহণে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে। আর করোনাকালীন সময় অনেক বরাদ্দ পাওয়া স্বাস্থ্য খাতে এবার বরাদ্দ কিছুটা কমেছে। করোনা কমে যাওয়ায় বরাদ্দ কমে এসেছে বলে জানান তিনি। তাছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েও আগের চেয়ে বরাদ্দ কমেছে। রূপপুর প্রকল্পে গত বছরের চেয়ে বরাদ্দ কমে আসায় এ খাতে মোট বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে।
১২ মে ২০২৩
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur