এগারো বছরেও ক্ষতিপূরণ পায়নি টেংরাটিলাবাসী। এখনো গ্যাস উদ্গীরণ হচ্ছে এলাকায়। বুদবুদ হচ্ছে পরপর দুই দফা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গ্যাসকূপ এলাকা। বাতাসেও গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধ
গ্যাসের গন্ধ যেনো নিত্য সঙ্গী হয়ে গেছে টেংরাটিলাবাসীর। অপরদিকে নাইকোও দিচ্ছে না ক্ষতিপূরণ। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলমান থাকায় ক্ষতিপূরণ নির্ণয় হচ্ছে না। ফলে টেংরাটিলাবাসী আদৌ ক্ষতিপূরণ পাবে কিনা- এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এদিকে, দু’দফা অগ্নিকাণ্ডের এগারো বছর পূর্তিতে টেংরাটিলা দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদ, সিলেট গতকাল সমাবেশ করেছে।
আর এই সমাবেশ থেকে তারা নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় ও পেট্রোবাংলা দিয়ে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র পুনরায় সচলের দাবি জানিয়েছেন তারা। গত ২০০৫ সালের ৭ই জানুয়ারি ও ২৪শে জুন টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ দুটি দিন টেংরাটিলার ট্র্যাজেডির দিন। ভয়াবহ ও বিভীষিকার দিন। এ দুটি দিন টেংরাটিলাবাসী কোনোদিনই ভুলতে পারবেন না। কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকোর চরম অদক্ষতার কারণে গ্যাস ভাণ্ডারখ্যাত টেংরাটিলায় দুই দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুই বারে কম হলেও ৬ মাস আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে।
দ্বিতীয় দফা রিলিফ কূপে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরপর দুই বারের আগুনে টেংরাটিলা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়েছে। প্রকৃতিঘেরা টেংরাটিলা পরিণত হয় বিরানভূমিতে। এখানকার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়ে পড়ে।
অগ্নিকাণ্ডে টেংরাটিলা, আজবপুর, খইয়াজুড়ি, শান্তিপুর ও গিরিশ নগরের ৬১৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই ৫টি গ্রাম টেংরাটিলা গ্যাসকূপের চতুর্দিকের এক কিলোমিটার এলাকায় অবস্থিত। পরবর্তীতে সরকার বার বার টিম পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে ৬১৬টি পরিবার নির্ধারণ করেন। এই পরিবারগুলো এখনো অসহায়।
১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তারা পায়নি কোনো ক্ষতিপূরণ। প্রথমে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করলেও এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে এলাকার মানুষ। তবে এখনো ক্ষতিপূরণের আশায় পথ চেয়ে বসে আছে মানুষ।
কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকো অগ্নিকাণ্ডের সময় সিঙ্গাপুর থেকে বীমার টাকা আদায় করলেও বাংলাদেশ সরকার কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়নি। বরং তারা পর্যায়ক্রমে টেংরাটিলা থেকে চলে যায়। এ কারণে আমাদের দাবি হচ্ছে- টেংরাটিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নাইকোর কাছ থেকে আদায় করে ক্ষতিগ্রস্তদের ফিরিয়ে দেয়া হোক।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, অদক্ষের মতো গ্যাসের ভাণ্ডার বলে খ্যাত টেংরাটিলায় গ্যাসকূপ খনন করতে গিয়ে এ বিপত্তি ঘটেছে। আর দুই দফা অগ্নিকাণ্ডের পর তারা নীরবেই চলে গেছে। এই অবস্থায় টেংরাটিলায় অফুরন্ত গ্যাস ভাণ্ডার এখনো অক্ষত রয়েছে। বিভিন্ন সময় গ্যাস বিশেষজ্ঞরা অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদের দাবি- টেংরাটিলা দেশীয় কোম্পানি পেট্রোবাংলা দিয়ে ফের সচল করা হোক। এতে করে সরকার গ্যাস সংকট কাটাতে পারবে।
এদিকে, টেংরাটিলাকে সচল করতে ১১ বছর পূর্তিতে টেংরাটিলা দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ৫ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করবে। আর টেংরাটিলা ট্র্যাজেডির দিন সিলেট শহরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
টেংরাটিলা দাবি আদায় সংগ্রাম পরিষদের রূপকার নুরুল আমীন রোববার (১ জানুয়ারি) জানিয়েছেন, নাইকো টেংরাটিলাকে বিপর্যস্ত করেছে। আমরা জানি টেংরাটিলায় অফুরন্ত গ্যাস ভাণ্ডার রয়েছে। দ্রুত নাইকোর সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি করে টেংরাটিলায় পেট্রোবাংলা দিয়ে গ্যাস উত্তোলন করলে দেশের গ্যাস সংকট অনেকটা কেটে যাবে। এ জন্য তিনি সরকারের উচ্চ মহলের সুনজর কামনা করেন। গতকাল সিলেট শহরে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নুরুল আমীন।
বক্তব্য রাখেন টেংরাটিলার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম, এলিছ আহমদ, রফিকুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন, সুবর্ণা সিনহা, সাদিয়া আমিন, শান্তনা বেগম প্রমুখ। (মানবজমিন)