শিক্ষাঙ্গন

‘নিরিবিলি পরিবেশ পেলে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে ওরা’

রাজধানীর স্বনামধন্য একটি স্কুলের মেধাবী ছাত্রী মুনা (ছদ্মনাম)। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাভেল। সমবয়সী। এক স্কুলে না পড়লেও এক ক্লাসেই ওরা পড়ে। ওরা এতটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে তারা স্কুল ফাঁকি দিয়ে দুজন দেখা করে বিভিন্ন পার্কে। এক দিন নয় দিনের পর দিন।

একপর্যায়ে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে দুজনই। ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রীটি ফেল করে বসে। তার বাবা-মা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না। কেন তাদের মেয়ে ফেল করে বসল।

খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারেন, তাদের মেয়ে স্কুল ফাঁকি দিত। বন্ধুদের সঙ্গে পার্কে যেয়ে আড্ডা দিয়েই নিজের ক্ষতি করেছে। যা বাবা-মা জানতেও পারেননি।

শুধু মুনা বা পাভেল নয়, রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ পালিয়ে পার্কে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে কেউ করছে প্রেম এবং যে বয়সে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করার কথা, সে বয়সে ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

নজর নেই অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের। নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের অনেকেই স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে বন্ধু-বান্ধব, ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’কে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুল-কলেজ চলার সময় স্কুল পোশাক পরেই ছেলে-মেয়েরা বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও টিএসটির মতো স্থানে ঘোরাঘুরি করছে।

অনেকে নিরিবিলি পরিবেশ পেলে একে-অপরকে জড়িয়ে ধরছে। স্কুল-কলেজ ছুটির সময় হলে আবার সময়মতো বাড়িতে রওনা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক পার্কে স্কুল পোশাক পরে প্রবেশ নিষেধ থাকায়, তারা বাসা থেকে ব্যাগে আলাদা পোশাক নিয়ে আসে।

ছেলেরা টি-শার্ট ও মেয়েরা স্কুল পোশাকের ওপর বোরকা পরে আসায় পার্ক কর্তৃপক্ষ কিছুই করতে পারছেন না। আবার দেখা যাচ্ছে অনেকে স্কুল ফাঁকি দিয়ে পোশাক পরেই পার্কে ঘুরছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা গেল, এক মেয়ে শিক্ষার্থী সাধারণত ‘ক্লাস চলার সময়’ তার ছেলে বন্ধুর হাত ধরে পার্কে হাঁটছে। পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেল এমন বহু চিত্র।

পুরান ঢাকার একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বেশ পরিচিত বলধা গার্ডেন। ওয়ারীর নবাব স্ট্রিটে এটি অবস্থতি। সৌন্দর্য পিপাসু মানুষরা সপরিবারে বলধা গার্ডেনে বেড়াতে যান। মাদক সেবন আর অসামাজিক কাজের কারণে বলধা গার্ডেনের ঐতিহ্য প্রায় ধ্বংসের মুখে।

গার্ডেনটিতে দেখা গেল, গাছের ফাঁকে ফাঁকে স্কুল পোশাক পরা শিক্ষার্থীদের। ছাতার আড়ালে চুম্বন দৃশ্যও চোখে পড়ল। দীর্ঘক্ষণ গার্ডেনটিতে থাকায় দেখা গেল এমন বহু ‘কর্ম’। বলধা গার্ডেন থেকে বেরিয়ে আসল এক বেসরকারি কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র রহিম (ছদ্মনাম)।

কথা হলো তার সঙ্গে। সে বলল, একটু প্রেমিকাকে নিয়ে সময় কাটাতে এখানে এসেছি। ভাই নাম লিখবেন না আর আসব না। বলেই দ্রুত চলে গেল সে। স্কুল পোশাক পরে আসা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বলধা গার্ডেন কর্তৃপক্ষের কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

স্কুল চলার সময় পার্কে শিক্ষার্থীদের ঘোরাঘুরির বিষয়ে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা মোহাম্মদ বাবর বলেন, বাচ্চাদের কাউন্সেলিং করতে হবে— যাতে স্কুল চলার সময় বাইরে ঘোরাঘুরি না করে। এ জন্য অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

সমাজ বিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল আলম বলেন, ‘স্কুল চলার সময় ছাত্র-ছাত্রীরা যেন বাইরে ঘোরাঘুরি না করে— সে জন্য প্রশাসনের দায়িত্বের সঙ্গে অভিভাবককেও সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলা। পরিবার থেকেই শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে নৈতিক ও অনৈতিক শিক্ষা দেওয়া দরকার। পরিবার থেকেই সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

বার্তা কক্ষ

Share