এখন মাশরাফি যে স্বপ্ন দেখেন

চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক:

বিরাট কোহলির উইকেট নেওয়া স্পিনার নাসির হোসেনের পিছনে দৌড়লেন বাংলাদেশের সাংবাদিকরা৷ তার আগে টিম হোটেলের সামনে দাঁড়িয়েই বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের সাংবাদিক সম্মেলন৷

ভারতকে হারিয়ে ইতিহাসে পা রাখার পরদিন এটাই টিম বাংলাদেশ! রাস্তা পার হওয়ার সাবওয়ের টিভিতে চোখে পড়ল ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের হাইলাইটস দেখানো হচ্ছে৷ সেখানে হামলে পড়েছে সাধারণ মানুষ৷ সকাল, বিকেল বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের জয় নিয়ে নানা অনুষ্ঠান৷

সবই আছে৷ কিন্তু সবের মাঝে অদ্ভুত রকম শান্ত, সংযত মাশরাফি মোর্তাজা অ্যান্ড কোম্পানি৷ কেউই মনে করছেন না, দারুণ কিছু করে ফেলেছেন৷ ভারতকে ৩-০ বাংলাওয়াশের হুঙ্কারও নেই৷ কাল বুধবার স্রেফ আর একটা ম্যাচ বাংলাদেশের কাছে! তবে অনুচ্চারিত লক্ষ্য অবশ্যই জয়ের হ্যাটট্রিক করে ভারতকে বাংলাওয়াশ!

আসলে জিম্বাবোয়ে, পাকিস্তানের পর ভারত, ওয়ান ডে-তে দেশের মাঠে টানা দশটা ম্যাচ জেতা বাংলাদেশের বিশ্বাসই ছিল, ব্যাপারটা সম্ভব৷ সে জন্য জয়ের পর অধিনায়ক মাশরাফি মোর্তাজা ভীষণ সহজ গলাতেও বলে দিতে পারলেন, ‘এখনও নিজেদের পুরোপুরি পারফেক্ট বলব না৷ অনেক জায়গায় উন্নতি করার আছে৷’

উন্নতির নেশাটাই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইউএসপি৷ আর টিমের মধ্যে এই দর্শনের কারিগর দু’জন৷ এক জন যদি বাংলাদেশের কাছের মানুষ মাশরাফি হন, অন্য জন তা হলে কোচ চন্ডিকা হাতুরেসিঙ্ঘে৷ দু’জনের বোঝাপড়া দুর্দান্ত৷ সে জন্যই মাশরাফি অবলীলায় বলে দেন, ‘আমাদের টিমে কোচের ইনপুটগুলো খুব জরুরি৷’ আবার শ্রীলঙ্কান কোচ বলতে দ্বিধা করলেন না, ‘ড্রেসিংরুমে ক্যাপ্টেন মাশরাফিই আসল লোক৷ ওকে সবাই খুব শ্রদ্ধা করে৷’

এই বোঝাপড়া থেকেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবের রূপ নেয়৷ কখনও হয়, কখনও বা হয় না৷ বাংলাদেশ শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাতুরেসিঙ্ঘে কখনও নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে দোনোমোনা করেন না৷ টেস্টে এক পেসার বা ওয়ান ডে-তে চার পেসার, সবই কংক্রিট সিদ্ধান্ত৷

এমনিতে কোচ হিসেবে দারুণ কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড নেই৷ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বলতে বিগ ব্যাশে সিডনি থান্ডার্সের কোচিং আর নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে কাজ৷ কিন্তু চোখ যেন জহুরির৷

সেই চোখেই মুস্তাফিজুর রহমনকে খুঁজে পাওয়া৷ সে ঘটনাই বলছিলেন বাংলাদেশের বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক, ‘বছর খানেক আগে মুস্তাফিজুরকে দেখি৷ তখনই পছন্দ হয়েছিল৷ জাতীয় টিমের নেটে নিয়ে আসি৷’ জিম্বাবোয়ের প্রাক্তন পেসার স্ট্রিককে কোচ করাও বিসিবির মোক্ষম চাল বলে মনে করেন অনেকে৷

নেটে বল করতে দেখে মুস্তাফিজকে পছন্দ হয় হাতুরেসিঙ্ঘের৷ মাশরাফির সঙ্গে কথা বলেন৷ অধিনায়কও আর দ্বিতীয়বার ভাবেননি৷ একেবারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছিলেন নতুন বল৷ যেমন ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে তুলে দিয়েছেন প্রথম দুটো ওয়ান ডে-তে৷
হতাশ করেননি মুস্তাফিজুর৷ তবে ভারতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ান ডে-র আগে কিছুটা সংশয় ছিল মাশরাফির৷ মুস্তাফিজকে সতর্কও করেছিলেন৷ কারণ ভারতীয়রা তাঁর কাটারগুলো নিয়ে হোমওয়ার্ক করে নামবে৷ মুস্তাফিজ আশ্বস্ত করে মাশরাফিকে জানিয়েছিলেন, তাঁর হাতে আরও স্টক বল আছে৷

কী ভাবে এত বৈচিত্র্য সম্ভব? মুস্তাফিজুরের সারল্যে ভরা জবাব, ‘প্র্যাক্টিস করে৷’ লাজুক মুস্তাফিজ বল হাতে পড়লেই অন্য মানুষ৷ যাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ৷ মাশরাফিও লুকোলেন না নিজের স্বপ্নের কথা, ‘আমি বিশ্বাস করি, অন্তত দশ বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলবে মুস্তাফিজ৷ দেশকে আরও অনেক জয় এনে দেবে৷’

শুধু মুস্তাফিজুরই নন, বাংলাদেশ থেকে উঠে আসছেন এক ঝাঁক তরুণ মুখ৷ সৌম্য সরকার থেকে উইকেটকিপার লিটন দাস যেমন আসছেন, তেমনই উঠে আসছেন তাস্কিন আহমেদ, আরাফত সানি, নাসির হোসেনরা৷

লিটন দাস এই মুহুর্তে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে এক মরসুমে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক৷ তারপর আবার রবিবার জীবনের দ্বিতীয় ওয়ান ডে ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ৩৬ রানের কার্যকরী ইনিংস৷

উঠতি তারকা এনামুল হক বিশ্বকাপের সময় চোট পেয়েছিলেন৷ এখন চোট সারালেও জাতীয় টিমে ফিরতে পারেননি৷ এই ঘটনা দিয়েই বোঝা যায়, জাতীয় টিমে ঢোকার প্রতিযোগিতা কতখানি৷

আসলে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই জুনিয়র থেকে সিনিয়র টিমে উঠে আসছে নতুন মুখ৷ কয়েকদিন আগে কথা হচ্ছিল, সিনিয়র টিমের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের সঙ্গে৷ তাঁর সাফ কথা, ‘এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়৷ আমরা একটা সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি৷ আর সেখান থেকেই ক্রিকেটার উঠে আসছে৷ শুধু মুস্তাফিজুরই নয়, আরও অনেক নতুন প্রতিভা রয়েছে বাংলাদেশে৷’

বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের উত্‍সবের মধ্যে বিতর্কও রয়েছে৷ ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যান সুধীর গৌতমের সঙ্গে ম্যাচের পর কিছু বাংলাদেশি সমর্থকদের ঝামেলা হয়েছে বলে অভিযোগ৷ যদিও একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট মহল৷

আসলে এখন আর ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ভাবে না বাংলাদেশ৷ মানসিকতা বদলে বড় স্বপ্নে চোখ এ পার বাংলার৷

চাঁদপুর টাইমস-ডিএইচ-2015

Share