এক শিয়াল মারতে পারলে ১ হাজার টাকা

ডেস্ক:
বাগমারায় শিয়ালের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়ায় মাইকিং করে শিয়াল নিধনের ঘোষণা দিচ্ছেন এলাকাবাসী। মঙ্গলবার সকাল থেকেই উপজেলার নরদাশ, সোনাডাঙ্গা ও দ্বীপপুর ইউনিয়নে মাইকিং করে স্থানীয় লোকজনকে একত্রিত করা হয়। এরপর শিয়াল নিধনের জন্য তিনটি ইউনিয়ন থেকে প্রায় দুই হাজার লোকজন লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকার বিভিন্ন জঙ্গলে হানা দেয়। লোকজনের হানায় মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পাঁচটি শিয়াল মারা পড়ে।

নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ মাস্টার জানান, গত কয়েক দিনে তার ইউনিয়নের পূর্ব দৌলতপুর গ্রামসহ ওই অঞ্চলে শিয়ালের কামড়ে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। গ্রামগুলোতে শিয়াল আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

শিয়াল তাড়াতে তিন ইউনিয়নের লোকজন একজোট হয়েছে। এলাকার লোকজন সর্তকভাবে চলাফেরা করার জন্য শিয়ালের দল এখন গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণির ওপর আক্রমণ করছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেম্বার ও গ্রাম প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় করে একটি শেয়াল মারার জন্য এক হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

বুধবার থেকে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। তবে এভাবে শিয়াল নিধন আইন সম্মত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, এছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই। এটা আমাদের বাঁচা মরার সমস্যা।

শনিবার রাতে পূর্বদৌলতপুর গ্রামের সিয়ারুল ইসলাম (৩০) নামের এক ব্যক্তি মসজিদে এশার নামাজ পড়তে গিয়ে প্রথমে শিয়ালের আক্রমণের শিকার হন। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে কামড়িয়ে রক্তাক্ত করে। তার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে ক্ষ্যাপা শেয়ালগুলো এলোপাতাড়িভাবে উপস্থিত মানুষদের কামড়াতে থাকে।

পরে ক্ষ্যাপা শিয়ালের কামড়ে আহত সিয়ারুল ইসলামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ভবানীগঞ্জ ক্লিনিকের পরিচালক চিকিৎসক আবদুল বারী জানান, তিনি শিয়ালে কামড়ানো চার-পাঁচজন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও বেশ কয়েকজনকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন। সিয়ারুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক।

সোনাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন জানান, বন্যার পানি বাড়তে থাকায় গত শুক্রবার রাতে কমপক্ষে অর্ধশত শিয়াল ফকিন্নী নদীর পাশে এসে ভিড় জমায়। শিয়ালগুলো পূর্বদৌলতপুর গ্রামের বিভিন্ন জঙ্গল ও ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয়। এরপর এরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে লোকজনের ওপর আক্রমণ শুরু করে।

দ্বীপপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ চন্দ্র ভৌমিক জানান, ক্ষ্যাপা শিয়ালের আক্রমণে লোকজন আহত হওয়ায় গ্রামের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তারা লাঠি, ধারাল অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে চলাফেলা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ওই অঞ্চলের লোকজন গত কয়েক দিনে প্রায় ১৫-২০ টি ক্ষ্যাপা শিয়ালকে পিটিয়ে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলেছে। তবে তিনিও শেয়াল মারার জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছেন।

স্থানীয় লোজকন জানান, ক্ষ্যাপা শিয়ালের আক্রমণের কারণে এলাকার লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তারা স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছে না বলে জানিয়েছে।

Share