একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক হবিগঞ্জের দুই সহোদর ও তাদের এক চাচাত ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রায়ে মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়াকে ফাঁসির আদেশ এবং তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়া ও চাচাত ভাই আব্দুর রাজ্জাককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদী ২৪০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়েন। এরপর বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম রায়ের বাকি অংশ পড়েন এবং সবশেষে বিচারপতি আনোয়ারুল হক সাজা ঘোষণা করেন।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর এটি ২৪তম রায়। গত ১১ মে মামলাটি যে কোনো দিন রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।
সকালে তিন আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এনে তাদেরকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চারটি ঘটনায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম কিবরিয়া, পারভেজ হোসেন ও এম. মাসুদ রানা।
২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একই মামলার আসামি মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নূর হোসেন। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল তা শেষ হয়। এরপর ওই বছরই ২৯ এপ্রিল ধানমণ্ডি কার্যালয় সেফহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা।
২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্তের স্বার্থে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেপ্তারের আবেদন জানান প্রসিকিউশন। ওই আবেদনের শুনানি শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল-২।
এর পরপরই দুপুর ১২টার দিকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইমামবাড়ী এলাকা থেকে খাগাউড়া ইউপির প্রাক্তন চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও তাঁর ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে গ্রেপ্তার করে হবিগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ। ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল। অপর আসামি আবদুর রাজ্জাক পলাতক।
এর পর ৩১ মে এ তিনজনের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মো. আনোয়ার-উল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজবিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪-এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলা (নম্বর ২৭০/০৯) দায়ের করেন।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।(বাংলামেইল)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৬:৫৩ পিএম, ০১ জুন ২০১৬, বুধবার
এইউ