সারাদেশ

এক বিছানায় একসাথে যখন ছাগল আর মানুষ!

দুপুরের খাবার যোগাড় হয়নি। ক্লান্ত হয়ে আবুল মিয়া চৌকির ওপর ঘুমিয়ে পড়েন। সেখানে কোনো বিছানাপত্রের ব্যবস্থা ছিল না। বানের পানি সবকিছু ভেসে নিয়ে গেছে। ফলে, শক্ত চৌকিতেই ঘুমাতে বাধ্য হন তিনি।

তারপাশে একই চৌকিতে ঘুমোচ্ছিল কালো-সাদা রঙের একটি ছাগল। আর চৌকি ঘেঁষে গোয়ালঘর। সেখানে রয়েছে ৩টি গরু। কিন্তু কোনো খাবার নেই। সবমিলিয়ে এক ঘরে ভাগাভাগি করে মানুষ, গরু ও ছাগলকে বসবাস করতে হচ্ছে।

বন্যায় আক্রান্ত বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার রৌহদহ-কামালপুর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৮কিলোমিটার জুড়ে আশ্রয় নেওয়া বানভাসিদের প্রতিটি রাতদিন এভাবে কাটাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের দু’পাশ দিয়ে খুপড়ি ঘর তুলে পাঁচ হাজারের মতো পরিবার এই বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। এসব পরিবারের সিংহভাগ মানুষ দরিদ্র। কৃষি ও দিনমজুরের কাজ করে চলে তাদের সংসার। আবার কারো কারো সংসার চলে ভিক্ষার টাকায়। অনেকেই গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করে চালান সংসার।

কিন্তু যমুনা এসব পরিবারে সর্বনাশা ডেকে এনেছে। বানের পানিতে বেশির ভাগ মানুষের হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। রাস্ত-ঘাট, জমিজমা তলিয়ে যাওয়ায় তাদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে পড়েছে। হিংস্র যমুনা এসব খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের পথ রূদ্ধ করে রেখেছে।

বোহাইল গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস, কুতুবপুর ফকিরপাড়া জমিলা বেওয়া, কামালপুরের সুমন্তসহ একাধিক বানভাসি মানুষ বাংলানিউজকে জানান, যমুনা তাদের সবকিছু গিলে ফেলেছে। শুধু জীবন ও পরণের কাপড়টুকু সঙ্গে রয়েছে। হাঁস-মুরগিও সব শেষ। আক্রান্ত হওয়ার পরদিন বহু কষ্টে গরু-ছাগলগুলো বাঁধে আনা সম্ভব হয়েছে।

তারা আরো জানান, ঘরে নিজেদের খাবার নেই। কাজকর্ম বন্ধ। গবাদি পশুর খাবারের একই অবস্থা। এছাড়া প্রাণিগুলো রাখার জায়গা না থাকায় নিজেরা যেখানে থাকছেন সেখানেই রাখছেন। এ অবস্থায় অত্যন্ত দুর্বিসহ তাদের মতো বানভাসি মানুষদের জীবন কাটাতে হচ্ছে। (বাংলানিউজ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৬:৫০ পিএম, ৩ আগস্ট ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

Share