এক বাগানেই ৯০ জাতের আম!

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁসহ দেশের সব অঞ্চলের আম রয়েছে এ বাগানে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, নেপাল, ভারত, ভুটান, চীনসহ বিদেশি বাহারি নানা স্বাদের আমও রয়েছে এখানে।

সব মিলিয়ে ৯০ জাতের আম মিলছে ফেনীর সোনাগাজীর একটি আম বাগানেই।

ফেনী নদী তীরবর্তী মুহুরী সেচ প্রকল্পের এলাকায় সোনাগাজী অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে ৬ হাজার গাছের এই আমের বাগানটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর ও স্থানীয় সাহাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সোলায়মান।

তিনি জানান, ৬৫ একরের সমন্বিত খামারে প্রায় ১৫ একর জমিতে রয়েছে আমবাগান। এর মধ্যে ৪ একর জমিতে শুধুই আম বাগান। বাকি আম গাছগুলো লাগানো হয়েছে পুকুরের পাড়ে।

তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে এ বাগান থেকে ৪০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হওয়ায় এখন তা ধরা হয়ে ২৫ টন।

বাগানে রয়েছে ব্যানানা, হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, রূপালি, তোলাপুলি, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, লুবনা, পালমার, ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ, মোহনভোগ, ক্ষিরপুলি, শাহী-পছন্দ, রাজভোগ, মির্জাপুরী, কিষাণভোগ, ফজলি, চোষা, আশ্বিনা, অমৃতভোগ, রানী পছন্দ, কৃষ্ণভোগ, দিল পছন্দ, বোম্বাই (মালদা), সূর্যপুরী, মিসরীভোগ, শ্রীধন, গোলাপ খাস, বৃন্দাবনী, দিল খোশ, কোহিতুর, বারমাসী ও কাঁচা মিঠা, কোহিনুর, চৈতালী, জাফরান, দুধ কুমার, দুধসর, বাবুই ঝাঁকি, মধুচাকী, মিঠুয়া, শ্রাবণী, স্বর্ণরেখা, সুবর্ণরেখা, ইত্যাদি জাতের আম।

সম্প্রতি বাগানে গিয়ে দেখা যায় গাছে গাছে ঝুলছে নানা জাতের বাহারী আম। কিছু আমে পাক ধরেছে। কিছু এখনও অপরিপক্ষ, আবার কিছু আম রয়েছে বারোমাসি। গাছে আম ঝুলছে। পুরো খামারটি যেন আমের রাজ্য। আমের ঘ্রাণে মাতোয়ারা চারপাশ।

খামারের মালিক মেজর সোলায়মান জানান, সাধারণ জাতের আমগুলো প্রতি কেজি ১শ টাকায় বিক্রি হয়। ব্যানানাসহ কয়েকটি জাতের আম বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২শ টাকায়।

তিনি আরও জানান, এসব আম বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। খামারে এসেই ক্রেতারা কিনে নিয়ে যান। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু ক্রেতা রয়েছেন যারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম সংগ্রহ করেন। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পরে ঠিকানায় পৌঁছে যায় অর্ডার করা আম।

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা জানান, বাগানে কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন না। কেবল আমের মুকুল আসার দুই মাস আগে একবার কীটনাশক ছিটানো হয়। আর সারা বছর ব্যবহার করেন জৈব সার। বাগানে স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা ২৫। আর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে আছেন আরও ১০ জন। তারাই বাগান পরিচর্যা করেন, ফল তোলেন এবং বিপণন করেন।

তিনি জানান, এ খামারটির শুরু করেছিলেন মাত্র ৬ একর জমিতে। বাড়তে বাড়তে এখন সেটি ৬৫ একরের সমন্বিত খামার। খামারের বড় বড় পুকুরে মাছ চাষ হয়। পুকুরের চারপাশে দেশি-বিদেশি জাতের আমগাছ। আছে কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, নারকেল, ড্রাগন, জামরুলসহ নানা ফলের গাছ। এক পাশে গবাদিপশুর খামার, আরেক পাশে নার্সারি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার বলেন, যেহেতু মেজর সোলায়মান সোনাগাজীর মাটিতে দেশের বিভিন্ন প্রজাতির আম চাষাবাদ করে সফল হয়েছেন সেহেতু ফেনীর এই অঞ্চল আমবাগান করার জন্য উপযোগী।

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, বাগানটি তিনিসহ কৃষি বিভাগের অন্যরাও পরিদর্শন করেছেন। এ বাগানে উৎপাদিত আমের গুণগত মান ভালো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কিনে নিয়ে যায় এ বাগানের আম।

স্থানীয়রা বলেন, শুধু আমের মৌসুমে নয়, সারা বছর আম পাওয়া যায় মেজর সোলায়মানের বাগানে। প্রতিদিন জেলা শহর ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে আসেন বাগান দেখেতে এবং আম কিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

এ উদ্যোক্তা বলেন, সেনাবাহিনী থেকে অবসরে এসে কৃষিতে শ্রম ও মেধা দিয়ে তিনি সফল হয়েছেন। নিজে শ্রমিকদের সঙ্গে বাগান ও খামার পরিচর্যার কাজ করেন বলে বৃদ্ধ বয়সেও সুস্থ, সবল আছেন। কৃষিতে সময় দিলে কৃষি ভাল ফল দেয়।

মো. সোলায়মান ১৯৮৬ সালে সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে যান। এরপর দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আম, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালন, মধু, সরিষা উৎপাদন ও নার্সারি তৈরির বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে ১৯৯২ সালে ৩ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে পারিবারিক জমিতে খামার প্রতিষ্ঠা করেন।

বার্তা কক্ষ, ১৬ মে ২০২২

Share