এক বছর পিছিয়ে ওই ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সেশনজট কাটছে না। প্রায় এক বছর পিছিয়ে রয়েছেন কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সেশনজটে স্নাতক ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ এবং ডিগ্রি ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

স্নাতক ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রায় ১৪ মাসের মতো আর ডিগ্রি ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা দু’ বছরের মতো সেশনজটে রয়েছেন। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা।

শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সেশনজট নিরসনে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজধানীর ৭ সরকারি কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়। এরই মধ্যে দেড় বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

বিষয়টি অপরিকল্পিতভাবে করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অধিভুক্ত হওয়ার পর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতকে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের সেশনজটের সমস্যায় পড়তে হবে না বলে জানিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের অধীনে প্রথমবারের মতো স্নাতকে ভর্তি হন শিক্ষার্থীরা। এর আগে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হতেন। বর্তমানে নিয়মিত তাদের ক্লাস চলছে। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার বলেন,‘নিয়মিত ক্লাস চলছে। কয়েকটি বিষয়ের ইনকোর্স পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।’

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে নিউ সেকেন্ড ইয়ারে। এখনও তাদের প্রথম বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীনে একই বর্ষের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বর্ষের ইনকোর্স পরীক্ষা শেষ করে সমাপনী পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করেছেন। ৫ থেকে ৬ মাসের সেশনজটের মধ্যে রয়েছেন তারা।

এ বর্ষের ঢাকা কলেজের ছাত্র মোহাম্মদ ইব্রাহিম আবির বলেন,‘ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল দিয়ে সেকেন্ড ইয়ারের ফরম ফিলাপও করে ফেলেছেন, অথচ আমাদের এখন কিছুই হয়নি। সামনে নির্বাচন, খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।’

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সমাপনি পরীক্ষা শেষ হয় চলতি মাসের ৮ তারিখে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ হয় গেল বছরের ডিসেম্বরে। ৯ মাসের মতো সেশনজটের মধ্যে রয়েছে তারা। এ বর্ষের ইডেন কলেজের ছাত্রী আনিকা ইসলাম বলেন, আমাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল গেল বছরের ডিসেম্বর মাসে। সেটা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। দুই দিন আগে আমাদের পরীক্ষা শেষ হয়।

২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সমাপনি পরীক্ষা অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭ ফেব্রুয়ারিতে এটা শেষ হয়েছে। ১৪ মাসের মতো পিছিয়ে রয়েছে এ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

কবি নজরুল কলেজের এ বর্ষের শিক্ষার্থী আকিদ হাসান বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি সেশনজটে স্নাতক ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। প্রায় ১৪ মাসের মতো সেশনজটে। চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি আমরা।’

২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ফাইনাল ইয়ারে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের সমাপনী পরীক্ষার ফল ৯ মাসেও প্রকাশ করেনি। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফল পেয়ে ফাইনাল ইয়ারের ক্লাস করছেন। তাদের এ বছর ফাইনাল পরীক্ষা হবে। ৯ মাসের মতো পিছিয়ে রয়েছেন এ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এ বর্ষের শিক্ষার্থী সজল বলেন, পরীক্ষার ৯ মাস পরও ফল প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা ২০১৮ সালে হবে কি না তা নিয়েও আমরা চিন্তিত। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর সমাপনি পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ফাইনালের ফল এখনও পায়নি। অথচ তাদের স্নাতকোত্তরে থাকার কথা ছিল। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল দিয়ে স্নাতকোত্তরের অর্ধেক ক্লাসও শেষ হয়ে গেছে। বাসার বলেন,‘স্নাতক ফাইনালের ফল না পাওয়াতে কোনো চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না। অথচ অন্যরা ঠিকই পারছে।’

এদিকে ২ বছর পর স্নাতকোত্তরের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সমাপনি পরীক্ষা এখন চলছে। এসব শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ৬ মাসের মতো পিছিয়ে রয়েছেন। ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও ৬ মাসের মতো পিছিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে ডিগ্রি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ৮ মাস এবং ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা এক বছর পিছিয়ে রয়েছেন। তাছাড়া ডিগ্রি ২০১৪-১৫ (পুরানো) শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সেশনজটে রয়েছেন। এসব শিক্ষার্থী দু’ বছরের মতো সেশনজটে রয়েছেন। এছাড়াও ডিগ্রি ২০১৪-১৫ (নতুন) শিক্ষাবর্ষের এবং ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও এক বছরের মতো সেশনজটে রয়েছেন। ডিগ্রি ২০১৪-১৫ (পুরানো) শিক্ষাবর্ষের ছাত্র অমেলেন্দু পাল বলেন, ডিগ্রিতে আমাদের ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সেশনজটে। দু’ বছরেও আমাদের পরীক্ষা হচ্ছে না। এর দায়ভার কেউ নিচ্ছেন না। আমরা খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড.মো.আখতারুজ্জামান বলেন,‘সাত কলেজের অধিভুক্তি ছিল একটি খুবই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এতে ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালার ঘাটতি ছিল। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এক বছর পিছিয়ে আছে। তবে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের সমস্যা হবে না। এসব কলেজ দেখাশোনার জন্য কিছু স্বতন্ত্র লোক দেয়া হয়েছে এবং নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে গেল বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজধানীর ৭ সরকারি কলেজকে অধিভুক্ত করে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। এরপর থেকে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের ভর্তি পরীক্ষা, পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
বার্তা কক্ষ
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৮ : ৪৫ পিএম, ১১ আগস্ট ২০১৮
এজি

Share