এক বছরে চাঁদপুরে ৩শ’ ৭৪ সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল

এক বছরে চাঁদপুরে ৩শ’ ৭৪ সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল, ২৬টি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, ১০টির সমিতির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের।

সরকারের সমবায় নীতিমালা অনুসরণ না করে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাঁদপুরে গত এক বছরে ৩শ’ ৭৪টি সমবায় সমিতির নিবন্ধন বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও ২৬টি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে মামলা দায়ের হয়েছে ১০টি সমিতির বিরুদ্ধে।

যদিও গত এক বছরে ৬৮টি নতুন সমবায় সমিতিকে নিবন্ধন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সমবায় অধিদপ্তর চাঁদপুর কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

এছাড়া গত কয়েক মাসে একাধিক সমবায় সমতিরি মালিক পক্ষ সাধারণ গ্রাকদের টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। এদিকে যেসব সমবায় সমিতির মালিক পক্ষ উধাও হয়েছে এর জন্যে দায়ী কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনটাই অভিযোগ সমিতির সাধারণ সদস্য তথা ক্ষতিগ্রস্তদের।

জানা গেছে, বেকারত্ব দুরীকরণ বহুমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে একটি সমিতি নিবন্ধন নেয় ২০০৯ সালে। যার রেজিস্ট্রেশন নং-০৮/চাঁদ/০৯।

প্রধান কার্যালয় ছিলো হাজীগঞ্জ উপজেলার বাকিলা বাজারের ফকির বাজার সড়কে। হঠাৎ করে কিছুদিন আগে সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে মালিক পক্ষ পালিয়ে যায়।

অপরদিকে মতলব উত্তরে আলোর সন্ধানে বহুমূখী সমবায় সমিতির লিঃ এর বিরুদ্ধে গ্রাহকের প্রায় ২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সমিতির ৭ শতাধিক গ্রাহক কর্তৃপক্ষের কাছে টাকার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরে কোন পাত্তাবা সমাধান পাচ্ছে না। এছাড়া গ্রাহকরা টাকা পেতে প্রতিদিন অফিসের সামনে এসে জড়ো হচ্ছে।

হাজীগঞ্জের বাকিলা ইউনিয়নের ফুলছোঁয়া গ্রামের বিধবা আয়েশা বেগম বলেন, ‘দ্বিগুণ লাভের আশায় স্থায়ী আমানত ১০ টাকা জমা রাখি। আর মাসিক সঞ্চয় করে জমা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমার টাকা না দিয়ে তারা পালিয়ে গেছে।’

একই গ্রামের বিধবা হাজেরা বেগম, ‘ঘর ঠিক করমু কইয়া টাকা জমাইতে গিয়া আমার সব শেষ হইয়া গেলো।’

বিধবা শেফালী বেগম জানান, ‘মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে যা সঞ্চয় করছি তা সমিতিতে রাখছি। আইজ তারা সব নিয়া ভাইগ্যা গেছে।’

এ তিন জন হতদরিদ্র নারী বাকিলা বেকারত্ব দূরীকরণ সমিতির সাধারণ গ্রাহক। এমন আরো হাজার হাজার গরিব গ্রাহক আছেন যাদের টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়েছে এ সমিতি।

বেকারত্ব দূরীকরণ সমিতির মাঠ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমার মাধ্যমে সমিতিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা রাখা হয়েছে। এখন গ্রাহকরা আমার কাছে টাকা চাচ্ছে। আমি কী করবো বুঝতে পারছি না। সমবায় অফিসের তদারকির অভাবে এসব সমবায় সমিতি মানুষের টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছে।’

চাঁদপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘আমরা সব সময় সমবায় সমিতিগুলো পরিদর্শন করি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেই। গ্রাহকের টাকা পেতে সার্বিক অনিয়ম পাওয়া গেলে নিবন্ধন বাতিল করে দেই। বর্তমানে যে সমিতি গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এদের ব্যাপারে পূর্বে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো।’

About The Author

প্রতিবেদক- মাজহারুল ইসলাম অনিক
Share