আমার কেউ নেই বাবা। প্রায় ৩০ বছর আগে আমি আমার স্বামীকে হারিয়েছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পর ভিটে মাটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পরে চাঁদপুর শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছি। সেই থেকে চাঁদপুরে বসবাস করছি। ঘুরে ফিরে মানুষের কাছে হাত বাড়িয়ে যা পাই তাতে আমার কোনো রকম দিন পার হয়। কথাগুলো বলছিলেন আয়াতুনেছা (৮০) নামের এক অসহায় বৃদ্ধা।
৫ ডিসেম্বর শনিবার চাঁদপুর শহরের বিপনিবাগ এলাকায় লাঠি হাতে করে এভাবেই তাকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে দেখা যায়। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় এসে লাঠিতে ভর করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা বৃত্তি করতে দেখে, তার জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সাথে।
অসহায় বৃদ্ধ আয়াতুননেছা জানান, শরীয়তপুর জেলার তারাবুনিয়া গ্রামে তারাবুনিয়া গ্রামে তার গ্রামের বাড়ি।
স্বামী সমির উদ্দিন শেখ মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ৩০ বছর পূর্বে সেই থেকে অসহায় হয়ে পড়েন এই বৃদ্ধা আয়তুননেছা।
তারপর তারপর দেশ স্বাধীনের এক বছর পর তিনি নিঃস্ব হয়ে চাঁদপুর শহরের গাজী সড়কে এসে কাশেম বোয়ালের বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেই থেকে সেখানেই ছেলে মেয়ে নিয়ে বসবাস।
আয়াতুনেছার এক ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও একটি মেয়ের স্বামী পরিত্যাক্তা হয়ে যাওয়ায় সেই মেয়েকে নিয়েই তার একত্রে থাকা হয়। তিনি জানান, তার যে একমাত্র ছেলে সন্তান রয়েছে ওই ছেলেটি দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ বার্ধক্যজনিত কারণে প্রতিবন্ধীর মতো ঘর বন্দী হয়ে আছে। তাই এই বৃদ্ধ বয়সে এসেও লাঠির ওপর ভর করে পেটের তাগিদে এক মুঠো অন্ন জোগাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ান। তবে তিনি কারো কাছ থেকে সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা কিংবা কোন বয়স্ক ভাতা পাননি বলেও তিনি জানান।
আর এই অসহায় বৃদ্ধার সম্পর্কে প্রতিবেদকের কথা হয় চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান জুয়েল এর সাথে। তার কাছে বৃদ্ধার অসহায়ত্বের বিষয়টি খুলে বললে তিনি সঙ্গে সঙ্গে ওই বৃদ্ধাকে প্রতিমাসে আর্থিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়ে দেন।
এছাড়াও বৃদ্ধার অসহায়ত্বের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি হলে, নাম প্রকাশ না করার শর্তে, চাঁদপুরের একজন স্বনামধন্য চিকিৎসক ওই বৃদ্ধাকে প্রতিমাসে চাল-ডালসহ বাজার সদাই দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
প্রতিবেদক:কবির হোসেন মিজি,৫ ডিসেম্বর ২০২০