রাত গভীর হলেও ভাষা শহীদদের ঋণে শ্রদ্ধাবনত জাতির ঠিকানা শহীদ মিনার। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে আলোকিত মানুষের ঢল নেমেছে স্মৃতির মিনারে।
শোকার্ত মানুষের হাতে হাতে শ্রদ্ধার ফুল, বুকে কালো ব্যাচ। ১৯৫২ সালের ঘটনায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা মানুষের জীবন উৎসর্গের ঘটনায় শাণিত হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা খুঁজছে জাতি।
শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
রাত ১২টা ১টি মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর তারা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং সকল শ্রেণী-পেশার নাগরিক।
সোমবার রাত ১২-১ মিনিটে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ।
এরপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি দলীয় প্রধান হিসেবে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।
শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ফুল দেওয়ার মাধ্যমে শুরু হল শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল কর্মসূচি।
পরে শেখ হাসিনা দলীয় নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংসদ সদস্যদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল মাইক থেকে আমার ভাইয়ে রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটির সুর বাজছিলো।
এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগী সংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ একে একে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন।
কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংষ্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। কালো ব্যানার নিয়ে আসছেন একের পর এক।
দেশ বিভাগের পর বাংলা ভাষা-ভাষীদের মধ্যে যে ভাষা চেতনা বেড়ে উঠতে থাকে, তারই পূর্ণ প্রকাশ ১৯৫২ সালে। পাকিস্তানি শাসকদের উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে নামে পূর্ব বাংলার মানুষ। ১৪৪ ধারা ভেঙে ১৯৫২ সালের এই দিনে (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, সফিউরসহ কয়েকজন তরুণ শহীদ হন।
১৯৯৮ সালে কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম প্রথম তখনকার জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন।
ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১:৩২ এএম ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার
এমআরআর