প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি শুধু একটা দিবস নয়। এটা আমাদের চেতনার বিকাশ ঘটায়। এই চেতনাকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে। মাতৃভাষার ওপর আর কী থাকতে পারে। এই ভাষার যে মাধুর্য, এর যে মর্যাদা, সেটা আমাদের দিতে হবে, ধারণ করতে হবে। শুধু ভাষা নয়, একটা চেতনাবোধ থেকেই এ দেশটার জন্ম হয়েছে।’
শনিবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত ১৬ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ২১শে পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংষ্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সালাম, রফিক, বরকতসহ নাম না জানা অনেক শহীদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা মাতৃভাষায় কথা বলা অধিকার পেয়েছি। সংগ্রাম করেই মাকে মা বলার অধিকার অর্জন করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একটি জাতিকে জাতি হিসেবে ধ্বংস করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল আমাদের ভাষার ওপর আঘাত দিয়ে। ১২শ মাইল দূরে হলো পাকিস্তান। সেখান থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল উর্দুই হবে এদেশের মাতৃভাষা। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের রক্ত দিয়ে আমাদের জন্য এ ভাষা উপহার দিয়ে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটা অবস্থান করে নিয়েছে। কারও কাছে হাত পেতে নয়, কারও কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে নয়। আমাদের যেটুকু সামর্থ রয়েছে তা দিয়েই আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করবো। ২০৪১ সালের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবো। স্বাধীনতার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার পাশাপাশি আমরা দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবো।’
মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের প্রয়োজনে। জীবনের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অনেক ভাষাই আমাদের রপ্ত করতে হয়। অবশ্যই ভাব আদান-প্রদানসহ কর্মক্ষেত্রের জন্য অন্য ভাষা প্রয়োজন। তাই বলে মাতৃভাষা ভুলে গেলে চলবে না। এটা শিখেই অন্য ভাষা শিখলে সেটা ভালো হয়।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৬ বিশিষ্ট নাগরিককে ২০১৬ সালের একুশে পদক প্রদান করা হয়। পদক প্রাপ্তরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, ডা. সাঈদ হায়দার, মরহুম সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া (মরনোত্তর), ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ, শিল্পকলায় বেগম জাহানারা আহমেদ (টিভি ও চলচ্চিত্র অভিনয়), পণ্ডিত অমরেশ রায় চৌধুরী (শাস্ত্রীয় সংগীত), বেগম শাহীন সামাদ (সংগীত), আমানুল হক (নৃত্য), মরহুম কাজী আনোয়ার হোসেন (চিত্রকলা- মরণোত্তর), মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মফিদুল হক, সাংবাদিকতায় তোয়াব খান, গবেষণায় অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ও মংছেন চীং মংছিন, ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ ও হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, কূটনৈতিকসহ আরো অনেকে।
প্রসঙ্গত, পদক প্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি পদক, ২ লাখ টাকা, সম্মাননাপত্র এবং একটি রেপ্লিকা দেয়া হবে।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০২:০২ অপরাহ্ন, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শনিবার
এমআরআর