একুশে গ্রন্থমেলা শুরু হচ্ছে আজ

ভাষার মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপি অমর একুশে বই মেলা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী এই বই মেলার উদ্বোধন করবেন।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেল ৩টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন। এছাড়া, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।’

এর আগে ২০২০ সালে ঢাকার দু’ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে ঐতিহ্যবাহী বইমেলা শুরু হয় ২ ফেব্রুয়ারি। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির কারণে,২০২১ সালে ১৮ মার্চ এবং ২০২২ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলা শুরু হতে বিলম্ব হয়।

বাংলা একাডেমির পরিচালক (প্রশাসন, মানবসম্পদ ও পরিকল্পনা বিভাগ) ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। তবে দর্শক ক্রেতা ও পাঠকরা রাত সাড়ে আটটার পরে মেলা প্রাঙ্গনে ঢুকতে পারবেন না। সরকারি ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং দুপুরে খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে।

এবারের মেলায় ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯০১টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি মাঠে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া এ বছর মোট ৩৮টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছর ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।

এছাড়া লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৫৩টি স্টল থাকবে, যা ২০২২ সালে ছিল ১২৭টি, ২০২১ সালে ১৪০টি এবং ২০২০ সালে ১৫৫টি। অন্যদিকে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বইমেলা ভেন্যু ও এর আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে এবং মেলার ১১ লাখ বর্গফুট জায়গার প্রতিটি স্থান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে।
মুজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, স্টল ও প্যাভিলিয়ন এবং প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্টের ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।

শৃঙ্খলা ও মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হবে এবং আগের অ্যানালগ তথ্য বোর্ডগুলোর পরিবর্তে ডিজিটাল বোর্ড স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন,‘আমরা এ বছর দ’ুটি কারণে এ ধরনের পরিবর্তন এনেছি- এক,বাংলা একাডেমির কাছে মেট্রোরেল স্টেশন থাকা; দু,প্রকাশকদের অনুরোধে ইন্সটিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স এলাকা থেকে মেলার মূল আঙিনায় ১৮২টি স্টলসহ সাতটি প্যাভিলিয়ন স্থানান্তর করা।

এবারের বই মেলায় স্টল স্থাপনে বড় ধরনের পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে উল্লেখ করে, এর কারণ হিসাবে মুজাহিদুল বলেন,আগের গুচ্ছ পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে ৭৩৬টি স্টলের সবগুলোই এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা মেলার যেকোনো কোণে দাঁড়িয়ে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ দেখতে পারেন।

এছাড়া প্রকাশকদের অনুরোধে ১৮২টি স্টলসহ সাতটি প্যাভিলিয়ন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকা থেকে মেলার মূল ভেন্যুতে স্থানান্তর করা হয়েছে। একারনে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় প্রবেশের মূল ফটক পরিবর্তন করা হয়েছে এবং বাংলা একাডেমির ঠিক বিপরীতে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির গেটটিই প্রবেশের প্রধান ফটক হবে বলে জানান তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কাছে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল এবং মূল ভেন্যুর বাইরে দ’ুটি স্থান ফুড কোর্টের জন্য রাখা হয়েছে। বইমেলায় অনুমোদনহীন, খোলা বা রাস্তার পাশের দোকানের মতো কোনো খাবারের দোকান থাকবে না। ‘শিশু চত্বর’ও এবার আগের স্থান থেকে সরিয়ে সাধুসঙ্গ এলাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি জানান,বিগত বছরের মতো এবারও মেলার মূল মঞ্চ থাকবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। এবারের গ্রন্থমেলার আরেকটি সংযোজন হচ্ছে- ‘ডিজিটাল বোর্ড’,যা মেলার মূল পয়েন্টগুলোতে দৃশ্যমান হবে, যাতে নতুন প্রকাশিত বইসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য থাকবে। এতে দর্শনার্থীরা সহজেই এসব তথ্য অবহিত হতে পারবেন।

গ্রন্থমেলায় নিয়ম-কানুন ও নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে কি-না, তা নিশ্চিত করতে টাস্কফোর্স প্রথম দিন থেকেই ‘হার্ডলাইনে’ থাকবে। প্রকাশকদের প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণে আসা প্রতিটি নতুন বইয়ের তথ্য বাংলা একাডেমিতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এবারের বইমেলা শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে চারটি পুরস্কার দেয়া হবে। এর মধ্যে বইয়ের বিষয়বস্ত ও মান বিবেচনা করে ২০২২ সালে প্রকাশিত সর্বোচ্চ সংখ্যক বইয়ের জন্য ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।

বইয়ের শিল্প বিবেচনায় সেরা বইয়ের জন্য,তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ এবং শিশুদের ওপর ভিত্তি করে লেখা সেরা বইকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এবারের বইমেলায় যারা অংশ নেবেন, সেরা অলঙ্করণ বিবেচনা করে তাদের মধ্য থেকে একটি স্টলকে ‘শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে।

১. ২.২০২৩
এজি

Share