অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হলো চাঁদপুর তরুণ কবি ও গল্পকার আশিক বিন রহিম -এর গল্পগ্রন্থ ‘জাল ও জলের আখ্যান’। গ্রন্থটি পরিবার পাবলিকেশন্স কর্তৃক আয়োজিত ‘তারুণ্যের সন্ধানে পান্ডুলিপি প্রতিযোগীতা-২০১৯ এর (কথাসাহিত্য বিভাগে) নির্বাচিত গল্পগ্রন্থ। এ প্রতিযোগিতায় প্রায় সহস্রাধিক পান্ডুলিপি থেকে বিচারক প্যানেল ৩টি বিভাগে ৯টি পান্ডুলিপিকে নির্বাচিত করে।
‘জাল ও জলের আখ্যান’ বইটিতে স্থান পেয়েছে ৯টি ছোটগল্প। প্রতিপটি গল্পেই লেখক আমাদের যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি আঁকতে চেয়েছেন। ভিন্ন ভিন্ন পেক্ষাপটের হলেও প্রতিটি গল্পই জীবনের; গল্পগুলো আপমর সাধরণ মানুষের।
নদী বিধৌত ইলিশের জেলা চাঁদপুরে জাল ও জলের কাছাকাছি থেকে বেড়ে উঠেছেন প্রতিভাবান এই তরুণ কথাসাহিত্যিক। এখানকার মাটি ও মানুষের সাথে রয়েছে তাঁর সখ্যতা। ফলে আশিক বিন রহিমে প্রতিটি গল্পে সোঁদা মাটির গন্ধ লুকিয়ে থাকে, মানবজীবনের হাসি-কান্না ধরা দেয় চিরায়ত রূপে। বইটির নাম গল্পে তিনি যেমন তুলে ধরেছেন, পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ জেলেদের কষ্টগাঁথা জীবন-সংগ্রাম, তেমনিভাবে ‘গতর খাটার হাট’ গল্পে লিখেছেন, উন্নত রাষ্ট্রের পথে হেঁটে চলা প্রিয় বাংলাদেশে দারিদ্রপিড়িত মানুষদের হাঁটে বসে নিজেদের বিক্রি করার কথাও।
রেল স্টেশনে সংসার যাপন করা একজন ভবঘুরে বিলাতুননেছার জীবনকথা নিয়ে ‘রোদ্রছায়ার খেদ’ গল্পে তুলে ধরেছেন, ঘুণেধরা সমাজবাস্তবতার রূঢ় চিত্রকে। এদেশের কিছু সংখ্যক বিকৃত রাজনীতিকদের হরতাল-অবরোধের নামে জন্মদেয়া আগুণ সন্ত্রাসের নির্লজ্জতাও বাদ যায়নি তাঁর লেখায়। ‘ব্রেকিং নিউজ’ গল্পে সে চিত্রই এঁকেছেন চমৎকারভাবে।
আছে প্রেম ও দ্রোহের কথন। ‘দ্বিতীয় চাঁদ’ গল্পটি চমৎকার এক প্রণয়াখ্যান। জাল ও জলের আখ্যান গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন আইয়ূব আল আমিন। মূল্য ধরা হয়েছে ১৬০ টাকা। বইটি পাওয়া যাবে একুশে গ্রন্থমালায় পরিবার পাবলিকেশন্স -এর ২৭০ নং স্টলে।
আশিক বিন রহিম প্রায় দেড়যুগ ধরে লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত। দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, অনলাইন জার্নাল ও ছোটকাগজে নিয়মিত লিখছেন। গল্প-কবিতার পাশাপাশি ফিচার, প্রবন্ধ ও ভ্রমণ কাহিনী লিখে থাকেন। অর্ধযুগ ধরে সম্পাদনা করছেন কবিতার কাগজ তরী।
বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, খুব সাধারণ মানুষ আমি। কবি কিংবা গল্পকার হতে হবে এমন চিন্তা থেকে লিখি না। লেখাগুলো নিতান্তই যাপিত জীবনের ভালোলাগা কিংবা অন্তদহনের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। জীবনে অনেক দূর যেতে হবে এমন কোনে তাড়াও নেই আমার। তবে ঠিক ততটুকুন যেতে চাই, যতটুকুন যাবার সামর্থ্য আমার আছে। এজন্যে নিজেকে নিজের ছাড়িয়ে যাবার জুয়া খেলি। ‘জাল ও জলের আখ্যান’ গ্রন্থের প্রায় সবগুলো গল্পই বিভিন্ন সময়ে দেশের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যসাময়িকীতে প্রকাশ পেয়েছে। পাঠকই আমার পরম বন্ধু, সমালোচক কিংবা বিচারক। তাই জাল ও জলের আখ্যান -এর ভাল-মন্দ বিচারভার পাঠকের হাতে রেখে দিলাম।
প্রসঙ্গত : আশিক বিন রহিম ১৯৮৭ সালের ২৫ নভেম্বর চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম আ. রহিম শেখ, মা বেগম ফয়জুন্নেছা। তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন, সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুর পুরস্কার, নাগরিক বার্তা লেখক সম্মাননা, নতুন কুঁড়ি লেখক সম্মাননা, চতুরঙ্গ ইলিশ উৎসব পুরস্কার, ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম পদক, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পুরস্কার (কবিতায়), চাঁদপুর কণ্ঠ লেখক সম্মাননা, পাঠক সংবাদ সম্মাননা, মোহনবাঁশী ছড়া উৎসব পুরস্কার, লিটলম্যাগ সম্পাদনায় ছায়াবানি মিডিয়া কমিউনেকেশন সম্মাননাসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মান। ২০১৯ সালে একুশে গ্রন্থমেলায় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ পদ্মপ্রয়াণ প্রকাশিত হয়।
স্টাফ করেসপন্ডেট