৫২’র ভাষা আন্দোলন ও ২১ ফেব্রুয়ারির চেতনা ধারণ করে ২১ জন কবি-লেখকের সংগঠন ‘বাংলায়ন সভা’র যাত্রা শুরু হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়।
সংগঠনের নীতিমালার আলোকে সদস্যদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে ১ বছরের জন্য বাংলায়ন সভা’র মুখপাত্র কথাশিল্পী শামস সাইদ, সম্পাদক কবি ফারুক সুমন এবং সমন্বয়ক হিসেবে লেখক গাজী মুনছুর আজিজকে নির্বাচন করা হয়।
সভায় সংগঠনের ২১জন সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন : কবি সৌম্য সালেক, কথাশিল্পী শামস সাইদ, কবি ও কথাশিল্পী জব্বার আল নাঈম, কবি গিরীশ গৈরিক, কবি ও প্রাবন্ধিক ফারুক সুমন, কবি ও কথাশিল্পী খালেদ চৌধুরী, লেখক গাজী মুনছুর আজিজ, লেখক ও সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, কবি ও কথাশিল্পী উপমা তালুকদার, কবি সাম্মি ইসলাম নীলা এবং কথাশিল্পী তাহসিনুল ইসলাম।
সংগঠনটি ‘ বাংলা বিশ্বময়’ শ্লোগান ধারণ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করবে। সংগঠনের প্রস্তাবনায় ওঠে এসেছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বহুমুখী পরিকল্পনার কথা।
ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের গৌরবময় ইতিহাসের জন্য বাঙালি জাতি গর্বিত। ভাষাশহিদগণ প্রত্যেক বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয়। ৫২’র ভাষা সংগ্রামের চেতনা ছিল মুক্তিসংগ্রামের দিকে অগ্রবর্তী হবার অন্যতম প্রেরণা ও প্রতিশ্রুতি। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বসভায় উপস্থাপন করেন বাংলা ও বাংলা ভাষা। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো আমাদের শহিদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আজ বিশ্ববাসী ভাষার জন্য আমাদের আত্মদানের ইতিহাসকে সম্মান জানিয়ে তাদের নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে, এটি বাঙালি হিসেবে আমাদের জন্য গৌরবের। বাংলা ভাষার প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদ। বাংলার রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উত্তরাধিকার। চণ্ডিদাস, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাজী নজরুল ইসলামসহ অসংখ্য কবি-সাহিত্যিকগণ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। পৃথিবীতে ৬৫০০ এর অধিক ভাষা প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে শ্রুতি-মাধুর্য ও আবেগ প্রকাশের অনন্যতার দিক থেকে বাংলা বিশ্বময় ‘The sweetest language is the world’- হিসেবে সমাদৃত। ভাষাকেন্দ্রীক বৃহত্তর জনগোষ্ঠির দিক থেকে চীনের হান ও আরবদের পরে বাঙালি জাতির অবস্থান। বর্তমানে বিশ্বে ঊনত্রিশ কোটির অধিক মানুষ বাংলায় কথা বলে।
বাংলা ভাষার রাষ্ট্রিক-সাংবিধানিক স্বীকৃতি এসেছে ১৯৫৬ সালে, ৬৫ বছর আগে, মাঝে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ১৯৭১ সালে, আজ আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। ভাষা বিষয়ে জিজ্ঞাসা, বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কতটা সমুন্নত? কিংবা বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা ও উচ্চ আদালতসহ সর্ব-মাধ্যমে কি বাংলা প্রচলন হয়েছে? গৌরবের উজ্জ্বল ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও দুঃখজনক যে, বাংলা আজও দুখিনী, বিশ্বভাষায় গুরুত্বপূর্ণ ভাষা হিসেবে বাংলা তার তাৎপর্য প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি এমনটি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবেও বাংলার স্বীকৃতি মেলেনি। বাংলায় অসাধারণ সাহিত্যকর্ম রচিত হলেও আমরা বিশ্বময় পৌঁছাতে পারিনি। এ ভাষার সাহিত্যকে পৃথিবীর শিল্প-সাহিত্য সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ যে গুরুত্ব ও তাৎপর্য দিয়ে মূল্যায়ন করে না তা বোধ করতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়।
ভাষার বিশ্বায়ন বা বিশ্বময় প্রভাব সৃষ্টির সঙ্গে আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এটি বিবেচনায় রেখে ভাবলেও দেখবেন জনসমষ্টির দিক থেকে অনেক ক্ষুদ্র ভাষাও বিশ্বে বেশ শক্তিশালী, সেসব ভাষা ও সাহিত্যের কদর রয়েছে বিশ্বময়। তাহলে বাংলা ভাষার এই করুণ অবস্থার পেছনে সংকট কোথায়? সেসব উদঘাটন করতে হবে । ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া তথা বাংলা ভাষার বিশ্বায়নই বাংলায়নের অভিলক্ষ্য। ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতিকে জাতিসত্তার পরিচয়ের অন্যতম মাধ্যম বিবেচনা করে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে তাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসারে অবিরাম কাজ