একুশের চেতনা নিয়ে জামতলায় ৩৯ বছর

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে ভাষার মাসে কুমিল্লায় টানা ৩৯ বছর ধরে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘তিন নদী পরিষদ’।

অবিভক্ত কুমিল্লা জেলা গোমতী, মেঘনা ও তিতাস নদী বিধৌত এক জনপদ। কালের বিবর্তনে এ জনপদটি তিন ভাগে বিভাজিত। কিন্তু তিন নদী বিধৌত কুমিল্লা-ব্রহ্মণবাড়িয়া-চাঁদপুর এর অভিন্ন ভাষারীতি, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, আচার ও মাসাজিক মেলবন্ধনের স্মারক এই তিনটি নদী। আর এই তিন নদীর আদ্যক্ষর নিয়ে নামকরণ করা হয়েছে আশির দশকের গোড়াতে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘তিন নদী পরিষদ’।

১৯৮৪ সালের ১৫ জানুয়ারি। নগরীর বাদুরতলার সিংহ প্রেস ছাপাখানায় বসে প্রদীপ সিংহ রায়, বদরুল হুদা জেনু, সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, নওশাদ কবীর এই চার সমমনার সাথে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধির কথা ব্যক্ত করেন সাংবাদিক আবুল হাসানাত বাবুল। পরে এই পাঁচজন মিলেই গড়ে তোলেন ‘তিন নদী পরিষদ’। প্রথম কমিটির সভাপতি হলেন প্রদীপ সিংহ রায়, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসানাত। দুই সদস্যবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটি নিয়ে এর যাত্রা। ওই বছরই পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে নগরীর নগর উদ্যানে জামতলায় ২১ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদ্বোধন করেন কুমিল্লার প্রাচীন পত্রিকা রূপসী বাংলার সম্পাদক আবদুল ওহাব।
এই সংগঠনটির উদ্যোগেই ৩৯ বছর ধরে টানা ২১ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে শহরের পৌর উদ্যানের শতবর্ষী জামতলায় শুরু হয় এ আয়োজন। একুশের গোড়াতে কুমিল্লার অবদানের কথা এবং একুশের চেতনাকে প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার মানসে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।

নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনে তিন নদী পরিষদের জামতলার অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এখান থেকে সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনীতিকেরা নানা অনুষ্ঠান, নাটক ও বক্তৃতার মাধ্যমে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে তোলেন।

৩৯ বছরের ধারাবাহিকতায় কুমিল্লা নগর উদ্যানের জামতলায় এবছরও একুশদিন ব্যাপি নানান অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করে সংগঠনটি। এবারের আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল হাসানাত বাবুল।

তিন নদী পরিষদ আয়োজিত ধারাবাহিক এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন দিনে আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ হেলাল উদ্দিন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী মোঃ সফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ শাহাদাৎ হোসাইনসহ কুমিল্লার সুধীজনেরা।

প্রতিবছর ২১ দিনের এই আয়োজনে কুমিল্লার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ আলোচনা, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতি পরিবেশনায় অংশ গ্রহণ করেন।

আলোচকগন বলেন, বাংলা ভাষার ইতিহাসের সাথে কুমিল্লা গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সালাম, রফিক, জব্বরসহ আরো অনেকে রক্ত দিয়েছিলেন। এরও আগে ১৯৪৮ সালে কুমিল্লার কৃতীসন্তান ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান পার্লামেন্ট বাংলা ভাষাকে অন্যতম মাতৃভাষার দাবি তুলেছিলেন। পরে কুমিল্লারই আরেক কৃতীসন্তান রফিকুল ইসলাম বাংলা ভাষাকে নিয়েগেছেন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে। নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানতে হবে।

একুশে ফেব্রয়ারি এখন বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ নয়, সারা বিশ্বময়। একুশে ফেব্রয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে পৃথিবীর ১শ’ ৮৮টি দেশে।

২১ফেব্রুয়ারি বিকেলে কুমিল্লা নগরীর জামতলায় নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে তিন নদী পরিষদের এবারের আয়োজন।

প্রতিবেদকঃ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Share