মিজানুর রহমান রানা | আপডেট: ০৭:৫৬ অপরাহ্ণ, ১৬ আগস্ট ২০১৫, রোববার
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস। সাহিত্যে রয়েছে তার অনবদ্য অবদান। কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস সাহিত্যের সব শাখায়ই তাঁর বিচরণ।
গুণী এই সাহিত্যিককে নিয়ে চাঁদপুর টাইমসের বিশেষ আয়োজন পাঠকের জন্যে পত্রস্থ করা হলো।
চাঁদপুর টাইমস : আপনার বর্তমান পেশা কী? লেখালেখিতে আগ্রহ হলেন কেনো?
জান্নাতুল ফেরদৌস : ছোটবেলা থেকেই অনেক বই পড়ছি। হাইস্কুলে উঠার পর কলকাতার অনেক লেখকের বই পড়ি। তাদের পর আমার মনে হতো, আহা, এত সুন্দর আমি যদি লিখতে পারতাম! সেই মনোবাসনা থেকে কিছু লেখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
চাঁদপুর টাইমস : আপনি কীভাবে, কখন সাহিত্যচর্চা তথা লেখালেখি শুরু করেছিলেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস : হাইস্কলে প্রতি বছর স্কুল ম্যাগাজিন বের হত। ক্লাস সেভেন থেকে স্কুল ম্যাগাজিনে ছড়া লিখতাম। পরে ক্লাস নাইনে মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি ছোটগল্প লিখেছিলাম।
চাঁদপুর টাইমস : একজন কবি-লেখকের মতো মহান কর্মে আসার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন কারা?
জান্নাতুল ফেরদৌস : স্কুল ম্যাগাজিনে লেখার জন্য আমার স্কুল শিক্ষকগণ খুব অনুপ্রেরণা দিতেন। এখন আমার স্বামী ও স্বজনরা খুব অনুপ্রেরণা দেন।
চাঁদপুর টাইমস : আপনার পূর্বে, বর্তমানে কারা উৎকৃষ্ট সাহিত্যের জন্ম দিয়েছেন? বাংলাদেশ অথবা আন্তর্জাতিকভাবে কারা কতটুকু সাহিত্যকে মানুষের দুয়ারে কীভাবে পৌঁছে দিয়েছেন?
জান্নাতুল ফেরদৌস : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র থেকে শুরু করে শামসুর রাহমান, হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, নির্মলেন্দু গুণ, আহসান হাবীব, আল মাহমুদসহ অসংখ্য লেখক ও কবি আছেন যারা বাংলা সাহিত্যকে অনেক সমৃদ্ধ করেছেন।
নারী সাহিত্যিকদের মধ্যে এ মুহূর্তে বিশেষ করে মনে পড়ছে সেলিনা হোসেন, রাবেয়া খাতুন, নাসরিন জাহানের কথা।
বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসদন দত্ত ও সত্যজিৎ রায়। আর এখন অনেকেই দক্ষতার সাথে একাজ করে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিকভাবে ও সাহিত্যকে মানুষের দুয়ারে নিয়ে যাচ্ছেন ড্যান ব্রাউন, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ সহ আরও অনেকেই।
চাঁদপুর টাইমস : লেখালেখি বা সাহিত্যচর্চা কি একটি চ্যালেঞ্জ অথবা নতুন করে সমাজ বিনির্মাণের কোনো মাধ্যম হতে পারে?
জান্নাতুল ফেরদৌস : যে কোনো ভালো কাজ ভালো করতে হলে সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে হয়। সাহিত্য পরিবার থেকে শুরু করে দেশে কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। অতীত, বর্তামান ও ভবিষ্যতে সাহিত্য অনেক বড় ভূমিকা রেখে চলেছে সমাজ গঠনে।
চাঁদপুর টাইমস : একজন কবি-লেখককে কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়?
জান্নাতুল ফেরদৌস : একজন কবি ও লেখকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তার ভাবনা ও কল্পনাকে সঠিকভাবে উস্থাপন করা। সমাজ ও নিজের কল্পনার সমন্বয় করাও অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
চাঁদপুর টাইমস : সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে সফল হওয়ার উপায় কী?
জান্নাতুল ফেরদৌস : পাঠকরাই একজন লেখকে ও একটি সাহিত্যকে সফল করে তোলে। অনেক বড় লেখকেরা নিজেদের সফল ভাবে না। তবে সফল লেখক হতে হলে প্রচুর সাহিত্যচর্চার প্রয়োজন।
চাঁদপুর টাইমস : আপনার দৃষ্টিতে একজন যথাযথ কবি-লেখক তথা সাহিত্যিকের মূল্যায়ন কী হওয়া প্রয়োজন?
জান্নাতুল ফেরদৌস : কাজের মূল্যায়ণ হলে কাজের গুণগত মান বহুগুণে বেড়ে ষায়। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে সাহিত্যের সর্বোচ্চ মূল্যায়ণ হওয়া উচিত।
চাঁদপুর টাইমস : সাহিত্যচর্চায় আসার জন্যে আগ্রহী নতুনদের জন্যে আপনার পরামর্শ।
জান্নাতুল ফেরদৌস : সাহিত্যচর্চায় আসার জন্যে আগ্রহীদের বলবো, প্রচুর বই পড়ুন। পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
চাঁদপুর টাইমস : শিক্ষাজীবন, কর্মজীবন, জীবনের উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় ঘটনা।
জান্নাতুল ফেরদৌস : আমার শিক্ষাজীবনের একটি ঘটনা আছে স্কুলজীবনের। তাহল প্রতিবছর স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য চার-পাঁচখানা ছড়া লিখতাম, তারপর চার-পাঁচজনের নামে জমা দিতাম। সবগুলো ছাপা হতো বিভিন্ন নামে। এখন কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, আমি একটি ব্যাংকে পচ মেশিনের জন্য আবেদন করি। ব্যাংক থেকে জানিয়ে দেয়, মহিলা বলে আমি ভালো ব্যবসা করতে পারবো না, তাই তারা মেশিন দেবে না। এখন তারা খুব আফসোস করে।
চাঁদপুর টাইমস : সাহিত্যচর্চা কী অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে?
জান্নাতুল ফেরদৌস : সাহিত্য কখনই টাকা উপার্জনের মাধ্যম হতে পারে না বা হওয়া উচিত নয়। বর্তমান সময়ে সাহিত্যচর্চা করে আয় করা খুবই কঠিন আর নতুনদের জন্য অসম্ভব।
চাঁদপুর টাইমস : একজন লেখক মানুষ, সমাজ, জাতি, দেশের কল্যাণে কতটুকু কাজ করতে পারে?
জান্নাতুল ফেরদৌস : সুস্থ সাহিত্য সবসময় দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছে ও যাবে। দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন সাহিত্য চর্চার মাধ্যমেই সম্ভব।
চাঁদপুর টাইমস : একজন সফল কবি-লেখকের আদর্শগত দিক কী কী হওয়া উচিত?
জান্নাতুল ফেরদৌস : সাহিত্যে চর্চায় নিবেদিতপ্রাণ যারা এবং সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখে সাহিত্যকে তারাই সফল কবি ও লেখক। তারা সবসময় নিপীড়িত ও দুর্বলের পক্ষে জয়গান করে।
চাঁদপুর টাইমস : সাংবাদিকতা, চিকিৎসেবা, আইনপেশা ও সাহিত্য চর্চা এ পেশাগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য, পার্থক্য ও সমন্বয় কতটুকু সম্ভব? একটি পেশা কি অন্যটির পরিপূরক?
জান্নাতুল ফেরদৌস : সাংবাদিক, ডাক্তার, আইনজীবী সবাই দেশ ও সমাজের মঙ্গলের জন্যে কাজ করে। একজন সাহিত্যিক তার কর্মের মাধ্যমে সমাজ ও দেশের মানুষের কল্যাণ সাধন করে। সবার কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী পার্থক্য আছে, তবে সামঞ্জস্যও আছে। আমার মতে একে অপরের পরিপূরক।
চাঁদপুর টাইমস : আপনার প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য বইয়ের সংখ্যা ও নাম উল্লেখ করুন।
জান্নাতুল ফেরদৌস : আমার প্রকাশিত বই- লোভ, অনাকাংখিত প্রেম, ভালোলাগা ভালোবাসা, বাসার সেই মেয়েটি, গৃহিনীর ডাইরী, বাবু, মম্দমানুষ- সোনালি দিন- ডাক্তার [উপন্যাস] আমি ও আমার দেশ, কন্যা ও জননী, স্টেশনে একা, হ্যালো তোমাকে বলছি [কবিতা]
অপ্রকাশিত আছে অসংখ্যা কবিতা, ছড়া ও দুটি উপন্যাস এবং কিছু ছোটগল্প।
চাঁদপুর টাইমস : মানুষ বই পড়া ছেড়ে ফেইসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকছে, এটি কি সত্য?
জান্নাতুল ফেরদৌস : বর্তমান যুগে মানুষ বই পড়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এটা একটা দেশ ও জাতির জন্য অশনি সংকেত। দেশে ব্যাপক সাহিত্য চর্চা বৃদ্ধি করা উচিত।
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস-এর পিতা দেলওয়ার হোসেন, মাতা সানোয়ারা বেগম। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় দু সন্তান মেডিকেলে পড়ছে এবং ছোট দু’জন স্কুলে। স্বামী ডা. মতিয়ার রহমান খান চট্ট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করছেন।
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫