বহুল আলোচিত বিএনপির ভিশন ‘২০৩০’ নামের রূপকল্পে ৩৭টি বিষয় বা ইস্যুতে মোট ২৫৬ দফা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে গণতন্ত্র শক্তিশালী করা থেকে শুরু করে সুশাসন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাসহ ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনের মতো ইতিবাচক অনেক দিক রয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার ডলারে উন্নীত করার ঘোষণা দেয় দলটি। তবে নিজেদের মধ্যে আপত্তির কারণে বহুল আলোচিত দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
১০ মে (বুধবার) বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে এই রূপকল্প উপস্থাপন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের এ ভিশন অর্জন করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। ’
৪৮ পৃষ্ঠার ছাপানো এ পুস্তিকা বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিক ছাড়াও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী, সুধীসমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের সামনে পাঠ করেন তিনি। ধানের শীষসংবলিত পুস্তিকার পেছনে খালেদা জিয়ার নামে একটি স্লোগান ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি। ’
প্রথমেই গণতন্ত্র, জাতি গঠন এবং সুশাসন বিষয়ে বিএনপির ভিশন বা লক্ষ্যের কথা তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সুধীসমাজ, গণমাধ্যম, জনমত জরিপ, জনগণের চাওয়া-পাওয়া, বিশেষজ্ঞ মতামত ও সর্বসাধারণের অভিজ্ঞানের নির্যাস গ্রহণ করে দেশ পরিচালনা করাই বিএনপির লক্ষ্য। ’ বর্তমান সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং ‘গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন শ্রেয়’-এ অজুহাতে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানোর অপচেষ্টা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি রুখে দেবে বলেও জানান।
প্রস্তাবনায় বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে একটি স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে উল্লেখ করে এ ব্যবস্থা অবসানে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর কথা বলেন খালেদা। তিনি বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। ’
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে গণভোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করাসহ আরো যেসব বিতর্কিত বিধান করা হয়েছে তা পর্যালোচনা ও পুনঃ পরীক্ষা করে সংবিধান সংস্কারের কথা বলেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিএনপি সংবিধানে ‘গণভোট’ ব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তন করবে। রূপকল্পে বলা হয়, জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি ও পাবলিক আন্ডারটেকিংস কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার পাশাপাশি বিরোধী দলের সমন্বয়ে সংসদকে শক্তিশালী করার কথা বলেন তিনি। খালেদার ভাষায়, ‘শরতের আকাশে সাতটি রঙের বিচিত্র প্রভা নিয়ে রংধনু যেভাবে মনোরম সৌন্দর্যের বিচ্ছুরণ ঘটায়, আমরা চাই সব মত ও পথকে নিয়ে এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি লালন ও পরিপুষ্ট করতে। যে সংস্কৃতি বাংলাদেশকে একটি রেইনবো নেশন বা রংধনু জাতিতে পরিণত করবে। ’
রূপকল্পে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্য পুনর্ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সমুন্নত রেখে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। এবারও বিএনপি ‘থ্রি-জি’ অর্থাৎ সুনীতি-সুশাসন-সুসরকারের সমন্বয় ঘটাবে বলে জানান তিনি।
রূপকল্পে সুষ্ঠু জাতি গঠনে বিএনপি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায় বলে উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া। তিনি জনগণের বৃহত্তর সম্মিলনের মাধ্যমে ‘ইনক্লুসিভ সোসাইটি’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন। বলেন, ‘বিভক্ত হয়ে পড়া জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায় বিএনপি। প্রতিহিংসা ও প্রতিরোধের রাজনীতির বিপরীতে ভবিষ্যত্মুখী এক নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে চান। এ জন্য নতুন এক সামাজিক চুক্তিতে পৌঁছাতে বিএনপি সচেষ্ট হবে। ’
সুশাসন প্রশ্নে নির্বাচন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বার্থপরতা ও দলীয় কালিমামুক্ত করে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃ প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি।
এ ছাড়া দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস না করা এবং এর রাশ টেনে ধরার জন্য আইন সংস্কার এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী খালেদা জিয়া ‘ন্যায়পাল’ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে—এ মত জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এসব বন্ধে জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ ও কারাগার—এ চার প্রতিষ্ঠান ব্যাপক সংস্কার করে যুগোপযোগী করা হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের ঘোষণা বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়।
বিচারপতি নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন প্রশ্নে খালেদা জিয়া বলেন, দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নীতিবোধ, দেশপ্রেম, বিচারবোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে সব নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া নিয়োগের জন্য বাছাইকৃত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য ও সম্পদ বিবরণী জনগণের সামনে উন্মুক্ত করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীন পৃথক সচিবালয় স্থাপন করার অঙ্গীকার করেন তিনি।
আদর্শ মানুষদের দিয়ে পাইলট ভিত্তিতে ‘জুরি’ ব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তন করার কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, গ্রাম আদালতের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী অনানুষ্ঠানিক সালিসি আদালত পুনঃ প্রবর্তন করা যায় কি না পরীক্ষা করে দেখা হবে। রূপকল্পে বিচারব্যবস্থা সংস্কারের জন্য উচ্চ পর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের অঙ্গীকার রয়েছে।
পুলিশ বাহিনীকে জবাবদিহি ও কল্যাণমূলক জনপ্রশাসন হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বেশ কিছু প্রস্তাবনা রাখেন। এর মধ্যে পুলিশ বাহিনীর ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ, আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে ওভারটাইম প্রদান, আবাসন সংকট সমাধানের উল্লেখ রয়েছে।
পররাষ্ট্রনীতিতে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার নীতিতে অটল থাকার কথা জানিয়ে বিএনপিপ্রধান বলেন, তাঁর দল অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় সমস্যা সৃষ্টি করবে না। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অন্য কোনো রাষ্ট্র হস্তক্ষেপ এবং নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথাও বলেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, আমাদের সীমান্তের বাইরে বন্ধু রয়েছে, প্রভু নেই। ’
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধক্যের দুর্দশা লাঘবে ‘পেনশন ফান্ড’ গঠন এবং প্রবীণদের শেষ বয়সের জন্য প্রতি মাসে পেনশন স্কিম চালুর কথা জানান তিনি।
রূপকল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ হিসেবে ঘোষণার কথা জানান খালেদা জিয়া। তিনি এ-ও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নে দুর্নীতি বন্ধ ও ভাতা বাড়ানো হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে খালেদা জিয়া রূপকল্পে কঠোর অবস্থানের কথা জানান। বলেন, এগুলো সব রাষ্ট্রের জন্যই হুমকিস্বরূপ। এর কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও তত্পরতা বরদাশত করবে না। তাঁর দল জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। সন্ত্রাসবাদ বন্ধের কৌশল হিসেবে আন্তধর্মীয় সংলাপকে উৎসাহিত করা হবে।
ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করার কথা বলা হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মানব উন্নয়ন স্কেলে উন্নীত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
শিক্ষার মানোন্নয়নে এক দশকের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার পাশাপাশি শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া শিক্ষার মান বাড়াতে একটি পৃথক শিক্ষা চ্যানেল চালুর কথা বলেন তিনি। তাঁর ভাষায়, বিএনপির শিক্ষানীতি হবে জীবনমুখী, ডিগ্রিমুখী নয়। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। মাদরাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে।
তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উন্নয়নে ভিওআইপি সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলেন খালেদা। প্রত্যেক জেলায় একটি করে ‘স্মার্ট স্কুল’ প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় সরকারের আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ে আইটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি হবে বিএনপির বিশেষ অগ্রাধিকার খাত।
রূপকল্পে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে একে ‘রিজিওনাল হাব’ হিসেবে গড়ে তোলা, সার্ক ও আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা এবং চীনের ‘ওয়ান বেল্ট-ওয়ান রোড’ উদ্যোগে সংযুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন বিএনপিপ্রধান। দ্বিতীয় যমুনা সেতু, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া প্রান্তে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, ব্রহ্মপুত্র সেতু, বুড়িগঙ্গা, মেঘনা, গোমতী ও কর্ণফুলীর ওপর আরো সেতু নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি। ‘এথনিক ট্যুরিজম’ ও ‘ওয়াটার ট্যুরিজম’ চালু করার কথাও বলেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিলের অঙ্গীকার করেন খালেদা। একই সঙ্গে বিএনপি সৎ সাংবাদিকতার পরিবেশ পুনরুদ্ধার এবং সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার নিশ্চিত করবে বলে জানান তিনি। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য মুক্ত চিন্তা ও গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি নীতিমালা প্রণয়নে সুপ্রিম কোর্টের একজন সাবেক বিচারপতির নেতৃত্বে এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, নাগরিক, আইটি বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে কমিশন গঠন করার কথা বলেন খালেদা।
প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত, যুগোপযোগী ও সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা হবে জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রথা, এসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, নারী ও শিশুপাচার রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয় রূপকল্পে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার পর্যায়ক্রমে শূন্য শতাংশে কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের ভাতা প্রদান করা হবে বলেও জানান তিনি। আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বিএনপি আঞ্চলিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেবে।
খালেদা জিয়া বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনে আঞ্চলিক সহযোগিতা কাঠামো গড়ে তোলা হবে। একটি সমন্বিত জাতীয় জ্বালানি নীতি প্রণয়ন, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সীমাহীন দুর্নীতি ও অনৈতিক দায়মুক্তির জন্য করা ইলেকট্রিসিটি অ্যান্ড এনার্জিস র্যাপিড সাপ্লাই ইনক্রিজ অ্যাক্ট-২০১০ পুনঃ পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে। তিনি বলেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশকে পারস্য উপসাগরীয় দেশ ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশ এবং পাকিস্তান ও ভারতের আন্তদেশীয় গ্যাস পাইপলাইনে সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন, কাউকে অন্য কোনো নাগরিকের ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করতে দেওয়া হবে না বলে অঙ্গীকার করেন খালেদা জিয়া। বলেন, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সকল অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম ও মর্যাদা সুরক্ষা করা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের নির্বিচারে বরখাস্ত করার ঘটনাকে অনৈতিক উল্লেখ করে বিএনপি চেয়ারপারসন অঙ্গীকার করেন, আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত না হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপসারণ করা হবে না।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে উন্নয়নে প্রতি জেলায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ক্রীড়া একাডেমি প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সম্মান অর্জনের জন্য জাতীয় অলিম্পিক একাডেমি প্রতিষ্ঠাসহ ক্রীড়া ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ স্কিম চালু করার কথা বলেন তিনি। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে অনৈতিক আকাশ সংস্কৃতি রোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বাস-ট্রেন-লঞ্চে বিনা ভাড়ায় প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের বিধান করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি। প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়।
এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি পুনরায় চালু, স্বাস্থ্য বীমা চালু, জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়, প্রতিটি ইউনিয়ন সেন্টারে ল্যাব সুবিধা, কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার, মৃতপ্রায় ২৩০টি নদী পুনর্খনন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি পুনঃ পরীক্ষাসহ নানা অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক নুরুল আমিন, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, সোহরাব হাসান, তৌফিক ইমরোজ খালিদী, জ ই মামুন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, আনিস আলমগীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, শাহজাহান ওমর, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সেলিমা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মাদ নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে ছিলেন আন্দালিব রহমান পার্থ, সৈয়দ মুহম্মদ ইব্রাহিম, মোস্তফা জামাল হায়দার, এম এ রকীব, সৈয়দ মজিবুর রহমান, শফিউল আলম প্রধান, রেদোয়ান আহমেদ, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জেবেল রহমান গনি, আজহারুল ইসলাম, আবু তাহের চৌধুরী, সৈয়দ মাহবুব হোসেন, সাঈদ আহমেদ, মুফতি মো. ওয়াক্কাস, সাইফুদ্দিন মনি। তবে জামায়াতের কেউ যাননি।
ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জামার্নি, তুরস্ক, ভারত, নরওয়ে, সৌদি আরব, কাতার, ডেনমার্ক, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইউএনপিডিসহ বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিক এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
নিউজ ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২: ৩০ পিএম, ১২ মে ২০১৭, শুক্রবার
ডিএইচ