বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি(এপিএ)২০২৪-২৫) এর আওতায় তারুণ্য নির্ভর উন্নত, সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন ও জবাবদিহিতা মূলক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আলোচনা ও মতবিনিময় সভা সম্পন্ন হয়েছে।
১৮ নভেম্বর সোমবার চাঁদপুর সরকারি কলেজ অডিটরিয়াম কক্ষে জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এ.কে.এম আবদুল মান্নান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের সুযোগ্য জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
তিনি বলেন, ছাত্ররা সব সময় নিয়মিত হবে, প্রতিভাবান হবে এটাই স্বাভাবিক। একজন মানুষের বয়স যেমন ই হোক না কেন, আপনি যদি প্রতিবাদী হোন তাহলে আপনার মধ্যে তারুণ্য কাজ করবে।
তারুণ্য কোনো বয়সের বিনয় নয়। বয়স দিয়ে তারুন্য বিবেচনা হয়না। আপনার সামনে আপনার বোনকে ইভটিজিং করছে, আপনি প্রতিবাদ না করে চলে গেছেন, এটা তারুণ্য নয়, হীনমন্যতা। তারুণ্য হলো যার মধ্যে শৃঙ্খলা ও প্রতিবাদী কন্ঠস্বর থাকে তাকে তারুণ্য বলা যায়।
তিনি আরো বলেন, আজকে এই তরুনরা একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করছে। আপনি উন্নত বাংলাদেশ গড়বেন, সমৃদ্ধ দেশ গড়বেন এটার জন্য কি লাগবে। আপনি একজন তরুণ কিন্তু আপনার মধ্যে কোনো আইটি শিক্ষা নেই, কোনো কাজের অভিজ্ঞতা নেই, কোনো সমৃদ্ধি গড়ার নলেজ ও স্কিল এবং স্পৃহা না থাকে তাহলে আপনি কিভাবে বাংলাদেশে বিনির্মাণ করবেন। আপনি কিভাবে বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন সেটা আমাকে ভাবতে হবে। আপনি সেভাবে তৈরি করতে হবে নিজেকে।
আপনিও একদিন রাজনীতিবিদ হবেন, একজন চাকরি জিবি হবেন, আপনার নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে হবে। জাপানিদের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, তারা ছাত্র অবস্থায় থাকা কালীন রীতিনীতি শিখেছে, তারা তাদের নিজেকে সেভাবে গঠন করেছে বলেই তারা আজকে এতো উন্নত।
এসময় জেলা প্রশাসক বৈষম্য নিয়ে বলেন, সমাজে বৈষম্য ব্যক্তি নিজেই তৈরি করছে। শিক্ষা, বিবাহ, কর্মক্ষেত্রে চাকরির বিষয়গুলো, দলমত নির্বিশেষে সব জায়গায় বৈষম্য ব্যাক্তি নিজেরাই তৈরি করেছেন। তবে একদিন বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। সমাজ পরিবর্তন হবে। তবে পরিবর্তনটা একটা দীর্ঘমেয়াদি হবে বলে তিনি ব্যাক্ত করেন।
এছাড়াও তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ চাকরিজীবী তোমরা। তোমাদের মধ্যে অবশ্যই চেতনা থাকতে হবে। তোমাদের মধ্যে ২০জনও যদি কমিটেড হও তোমরাই বদলে দিতে পারবা সমাজকে। প্রতিটা দপ্তর বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিয়েছে।
প্রতিটি সেক্টরে অল্প অল্প করেও যদি ডেভেলপমেন্ট হয় তাহলে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে। তোমরা যারা সাধারণ ছাত্র আছো অনেকেই রাজনীতির সাথে আছো আবার অনেকেই নেই। তবে রাজনীতি কোনো দোষের কিছু নয়। রাজনীতির মধ্য দিয়েই নেতৃত্বে তৈরি হয়। একজন আদর্শ রাজনৈতিক নেতার মধ্যেও অনেক গুনাবলী থাকে। তবে রাজনীতিকে সেভাবে পবিত্র রাখতে হবে।
তিনি বলেন,শহরের যানযট নিরসনে কাজ করছি, ফুটপাত বেদখল মুক্ত করার জন্য কাজ করতেছি, জেলার অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এগুলো হয়তো তোমরা দেখছো।
এসময় জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই চাকরিজীবী হতে চায়। কিন্তু এটা ঠিক নয়। তোমরা ব্যাবসা করতে পারো, উদ্যোক্তা হতে পারো। তোমাকে সরকার ফান্ড দিবে, সহায়তা করবে। তবে আমি একটি যুবমেলা করতে পারি সামনে। তরুনদের নিয়ে কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য কাজ করবো। আমি চাই তারুণ্যের যে বৈশিষ্ট্য সেটা যেন তোমাদের মধ্যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকে।
একটি হলো ভালো কম্পিটিশন আরেকটি খারাপ কম্পিটিশন। তুমি তার সাথে কম্পিটিশন করো, যে ছেলেট সৎ, যে ভালো তার সাথে প্রতিযোগিতা করো। তাহলেই তোমার জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে বলে তিনি শিক্ষার্থীদেরকে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রত্যেকেই তার জীবনটাকে উপভোগ করার সুযোগ আছে বলে তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করেন।
চাঁদপুর জেলা তথ্য অফিসার-মোঃ তপন বেপারীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন- চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, চাঁদপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ মোঃ খলিলুর রহমান।
এসময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এবং তারা তরুণরা তাদের মতামত ব্যাক্ত করেন- চাঁদপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ রাফি, চাঁদপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আহম্মদ হোসাইন, চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ মাহফুজ উল্লাহ ফাহিম, চাঁদপুর সরকারি কলেজ শিক্ষার্থী মোঃ ফয়সাল, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের নাঈম।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাদকের সরগরম অনেকাংশে বেড়ে গেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে দেখা যায় ছোট ছোট ১০বছরের বালকও মাদক সেবন করছেন।
এছাড়াও কাঁচা বাজার উর্ধ্ব-গতি নিয়ন্ত্রণ, চাঁদপুর সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ চালু করণ, শহরের ফুটপাত বেদখল, সিএনজি স্ট্যান্ড না থাকায় যেখানে সেখানে গাড়ি থামানো, নারী উন্নয়ন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় সংক্ষেপে তুলে ধরেন তারা।
অনুষ্ঠানে চাঁদপুর জেলা তথ্য অফিসের ঘোষক মনিরুজ্জামান এর সঞ্চালনায় প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক- মেহেদী হাসান।
প্রতিবেদক: মুহাম্মদ বাদশা ভূঁইয়া, ১৮ নভেম্বর ২০২৪